তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব ভাঙ্গনের মুখে ঘরবাড়ী ও ফসলী জমি

প্রকাশিত: ১০:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০১৮

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: বোমা মেশিনের সাহায্যে বালু পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে, এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ীদের তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলনের মহাৎসব।

প্রসাশনকে অভিযোগ করেও কোন কাজ হচ্ছে না রহস্যজনক কারনে। কোনো অদৃশ্য ইশারায় ব্যবসায়ীরা বৈধতা পেয়েছে বলে সচেতন মহলের প্রশ্ন উঠেছে।

গত সোম ও মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়জমিনে দেখা গেছে, অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা তিস্তানদী থেকে বোমা মেশিনের সাহায্যে অবাদে বালু উত্তোলন করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাৎসব দেখে সচেতন মহলের প্রশ্ন উঠেছে।

গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ ও মেডিকেল মোড় বাজার থেকে পশ্চিমে ৩ শতগজ অদুরে তিস্তা নদী থেকে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেছে বালু ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম। কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন, বালু উত্তোলনের জন্য এলাকার এমপি ডিওলেটার দিয়েছে।

এসময় স্থানীয় থানার পুলিশ দলকে দেখা গেছে। বালু ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম একই কথা পুলিশ টহলদলকেও জানান বলে পুলিশ দল ফেরত আসেন।

অপর দিকে সিংগীমারী ইউনিয়নের উত্তর ধুবনী এলাকায় একইভাবে তিস্তানদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেছে বালু ব্যবসায়ীরা।

এতে একদিকে তিস্তা পাড়ের বাড়ীঘর ফসলী জমি ও মূল্যবান বনজ সম্পদ অপর দিকে নদীর পাড়দিয়ে ৫ কিলো: দৈর্ঘ মাটির বাঁধ এবং হাতীবান্ধা হাট থেকে ধুবনী গড্ডিমারী হয়ে বড়খাতা যোগাযোগের প্রায় ১৫ কিলো: দৈর্ঘের পাকা বাইপাস সড়কটি ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারী ভাবে বালু উত্তোলন করার বিধান থাকলেও হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদী এলাকার কোন অংশকে সরকারী ভাবে বালু মহাল হিসাবে গণ্য করা হয়নি। এমন কি কেউ লিজও পায়নি। এর পরেও কতিপয় অসাদু ব্যবসায়ী গত একমাস থেকে প্রকাশ্যে তিস্তা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে নিষিদ্ধ শক্তিশালী বোমা মেশিনের সাহায্যে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে।

এলাকার সচেতন মহল ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বালু খেকোরা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত শক্তিশালী বোমা মেশিন দিয়ে এভাবেই বালু উত্তোলন করে আসছে। আর উত্তোলিত বালু বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ বিক্রি করা হচ্ছে।

তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা আঃ করিম বলেন, অবৈধভাবে এমনি করে বালু উত্তোলনের কথা কতৃপক্ষকে জানানো হলেও রহস্যজনকভাবে কার্যকার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অপরদিকে গড্ডিমারী এলাকার শাহ আলম জানান, বালু উত্তোলনের জন্য এলাকার এমপি তাদেরকে ডিওলেটার দিয়েছে, এমন কথা তিস্তাপাড় এলাকা বাসীর কাছে প্রচার করেছে বালু ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম।

নদী এলাকার ভুক্তভুগিরা বলেন, এভাবে অবৈধভাবে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করা হলে সর্বনাশা তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তিত্ব হয়ে, মধ্য গড্ডিমারী হয়ে ধুবনী এলাকার মাঝ দিয়ে দ:গড্ডিমারী হয়ে নতুন নদী সৃষ্টি হয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা সদরের উপর দিয়ে বয়ে যাবে।

এতে হাজার হাজার কাচা পাকা ঘরবাড়ী, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারী অফিস ভবন, মূল্যবান গাছ পালা বনজ বাগান, নদীর গর্ভে বিলিন হযে যাবে। কয়েক হাজার পরিবার আশ্রয়হীনা হয়ে পড়বে।

তাদের কাদে তুলে নিতে হবে, ভিক্ষার ঝুলি। পরিবার পরিজনের জীবন যাপনের নেমে আসবে অন্ধকার। ধংস হবে অসংখ্য প্রজন্মের ভবিষ্যত।

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রসাশনের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে ইউএনও সামিউল আমিন জানান, ৪/৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

অপর দিকে থানা অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক জানান, বালু উত্তোলনে এমপি মহোদয় ডিওলেটার দিয়েছে তাই কিছু করার নেই।

/আরএ

Comments