চাঁদপুরে ৮ বছর আগে ছেলে হত্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত ‘মা’ ফরিদপুরে আটক

প্রকাশিত: ৬:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২৩

প্রায় ৮ বছর আগে নিজের ছেলেকে হত্যা করেন পরকীয়ায় লিপ্ত চাঁদপুরের খুকি বেগম (৫০) প্রেমিকের সহায়তায়। এরপর পালিয়ে যান অন্যত্র। এদিকে ছেলে হত্যার দায়ে আদালতে তার মৃত্যুদণ্ড হয়। দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর অবশেষে ফরিদপুরের বৈঠাখালী থেকে আসামী খুকি বেগমকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব ১০ ও ১১ এর যৌথ অভিযান চালিয়ে গত ১০ নভেম্বর ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার বৈঠাখালী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে তদন্তসূত্রে র‌্যাব ১০ আসামীর অবস্থান সনাক্ত ও নজরদারি নিশ্চিত করে।

মামলাসূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের শুরুতে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী ইউনিয়নের আরিফ হোসেন প্রেমের সম্পর্ক করে পার্শ্ববর্তী উত্তর আলগী ইউনিয়নের মিজিবাড়ির আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তার (১৯)’কে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নিতে বাধ্য হন। এর আগে থেকে মা খুকি বেগম প্রতিবেশি জয়নাল গাজীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। বিষয়টি আরিফ হোসেনের দৃষ্টিগোচর হয়। এ নিয়ে মা-ছেলের দূরত্ব তৈরি হয়। বিয়ের পর থেকে মা, ছেলে ও ছেলের বউয়ের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগড়া বিবাদ হতো।

এই কারণে খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর ছেলের বউ আসমা বেগমকে তার বাবার বাড়িতে পাঠান। দুদিন পর ১৮ নভেম্বর আরিফকে গরুর দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান খুকি বেগম। পরে পরকীয়া প্রেমিক জয়নাল গাজী ও তার একাধিক সহযোগীর সহযোগিতায় আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, দা দিয়ে কুপিয়ে এবং ব্লেড দিয়ে জখম করে। মৃত্যু হয়েছে মনে করে আসামীরা তাকে ঘরের মেঝেতে ফেলে চলে যায়।

পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান, ডাকাতরা আরিফকে জখম করে ফেলে গেছে। আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাটে পার হওয়ার সময় আরিফের মৃত্যু হয়।

পরে এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হাইমচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন

দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন মামলায় গত ২৩ আগস্ট চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যায় জড়িত ৪ জনকে দণ্ডাদেশ প্রদান করে।

আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ভাড়াটিয়া খুনির মাধ্যমে আপন ছেলে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মা খুকি বেগম (৫০) ও জয়নাল গাজীকে (৩৫) মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী অপর দুই আসামি ইউছুফ মোল্লা (৩৬) ও মাহবুব মোল্লাকে (৩৮) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে আদালত।

একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আসামীর স্বীকারোক্তি মতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতে গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই খুকি বেগম চাঁদপুর থেকে পালিয়ে ফরিদপুর জেলায় নতুন করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং পরবর্তীতে এই ঠিকানায় দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন সংসার করতে থাকে এবং ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি পলাতক ছিলেন।

অন্য আসামীরা জেল হাজতে রয়েছেন।

Comments