সড়ক দুর্ঘটনা

সারাদেশে সড়কে ঝড়ল ১৭ প্রাণ

প্রকাশিত: ১০:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০২৪
পিরোজপুরে দুমড়ে মুচরে যাওয়া অটোরিকশা (বামে উপরে), ফরিদপুরে উল্টে যাওয়া বাস (ডানে উপরে), সিলেটে মুখোমুখি হওয়া বাস-ট্রাক (নিচে বামে) ও পিরোজপুরে মর্গে নিহতদের লাশ

শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৭ জন। এর মধ্যে পিরোজপুরে ৭ জন ও ফরিদপুরে ৩, জয়পুরহাটে ২, সিলেটে ১ ও রাজধানী ঢাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পিরোজপুর: শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার পাড়েরহাট সড়কের বেলতলা এলাকায় বাস-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৭ জন নিহতের পাশাপাশি আরও ৩ জন আহত হয়েছেন।
পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিকুজ্জামান জানান, পাড়েরহাটে বাস, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন কয়েকজন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও চারজন মারা যান।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

ফরিদপুর: এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় সড়কে চলতি পথে বাস উল্টে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন।

শুক্রবার ভোরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার বাবনাতলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবু সাঈদ ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা ও হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করে।

নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার আবু জাফর জানান, বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা ইমরান ট্রাভেলস নামের গাড়িটি ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। রাস্তায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত ও অন্তত ৩০ জন যাত্রী আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজন মারা যান।

আহত এক যাত্রী বলেন, ‘মনে হয় বাসের চালক ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সে কারণে হঠাৎ বাউলি দিয়ে রাস্তার ওপর উল্টে যায় বাসটি। এতে গাড়ির অধিকাংশ যাত্রী আহত হন এবং ঘটনাস্থলে দুজন মারা যান।’

ঢাকা: এদিকে রাজধানী ঢাকায় পৃথক দুর্ঘটনায় ৪ জন মারা গেছেন। শুক্রবার সকালে ওয়ারীর বাসা থেকে বের হয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব মতিউর রহমান। মেয়েকে কথা দিয়েছিলেন, রোজা উপলক্ষে বাজার করে ফিরবেন বাসায়। তবে সায়দাবাদ জনপদ মোড়ে বেপরোয়া বাসের চাপায় সড়কেই লাশ হয়ে ফেরেন তিনি।

একই দিন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে মারা যান লাইনম্যান ইমরান। এছাড়া সকালে উত্তরা থেকে গাজীপুরের বাসায় ফিরছিলেন আলী হোসেন। পথে উত্তরখানে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি অটোরিকশার ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনিও।

অন্যদিকে ছুটিরদিনে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর পূর্ব রসূলবাগ বাসার সামনের গলিতে খেলছিল মাদরাসা পড়ুয়া সাত বছরের শিশু ইয়াসিন। বেপরোয়া গতির অটোরিকশার ধাক্কায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমায় এই শিশুটিও। মরদেহ চারটি ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কালাইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে মাইক্রোবাসের ধাক্কা লেগে দুইজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কালাই পৌরসভার সরাইল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস রাস্তায় একটি ট্রাক সাইড দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আলু ভর্তি অন্য ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। এ ঘটনায় আহত আরও ৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহতরা হলেন মোছা. ফাহিমা (৪০) ও মো. রোকন (১৪)। ফাহিমা বগুড়ার শিবগঞ্জ থানার রাঙ্গামাটি গ্রামের হেলালের স্ত্রী। আর রোকন একই গ্রামের আ. কাদেরের ছেলে। আহতরা হলেন মাইক্রোবাসের চালক আ. রশিদ (৪৫), যাত্রী পাপিয়া (৩৫) ও ফারিয়া জুই (১৬)। তারা সকলেই রাঙ্গামাটি গ্রামের বাসিন্দা। কালাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই মাইক্রোবাসে চালকসহ ৮ জন ছিল। তাদের মধ্যে আহত ৫ জনকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফাহিমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য অপর ৪ জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাইক্রোর যাত্রী রোকন মারা যায়।

সিলেট: সিলেট তামাবিল মহাসড়কে জাফলংগামী পর্যটকবাহী বাসের সঙ্গে সিলেটগামী পাথরবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক শিশু নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১০ জন।

দুপুর ১টার দিকে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার উমনপুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পরশ (৬) ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার সালিহর গ্রামের রাসেল মিয়ার ছেলে।

জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনায় বাসটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে ও ট্রাকটি উলটে রাস্তার পাশে পড়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানায়, ঘটনাস্থলেই শিশু পরশ মারা যায়। এছাড়া অনেকেই আহত হন। দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসী আহতদের উদ্ধার করে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ করেন।

Comments