রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিতে তলিয়েছে রাস্তাঘাট–হাটবাজার

প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২৩
টানা বৃষ্টিতে ঘরের ভেতর ও উঠানে হাঁটুসমান পানি। সেই পানিতে জাল ফেলে মাছ ধরছেন দুই গৃহবধূ। দুর্লভপুর, শ্রীপুর, গাজীপুর।

ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকার জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলে রংপুর ও রাজশাহীর পর শুক্রবার (৬ অক্টোবর) ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে ডুবে গেছে এসব বিভাগের শহর অঞ্চলের রাস্তাঘাট। গ্রামেও পানিতে তলিয়ে গেছে হাটবাজার ও বাড়িঘর।

দেশে অক্টোবর মাসে সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শুধু শেরপুরের নিকলীতেই এর তিন গুণ, ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এটি দেশের ইতিহাসে এক দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আর ময়মনসিংহ বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় এদিন ৩০০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এর আগে ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর নোয়াখালীর হাতিয়ায় সর্বোচ্চ ৪০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। আর ১৯৭১ সালের ২ অক্টোবর ময়মনসিংহে ৩৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

রাজধানীসহ ঢাকা বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল থেকেই রাজধানীর আকাশে জমে ছিল মেঘ। মাঝারি বৃষ্টিতেই পুরান ঢাকা থেকে নিউমার্কেট হয়ে মিরপুর রোডসহ অন্তত ১১টি এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বৃষ্টিপাতের ভোগান্তি কিছুটা এড়াতে পেরেছেন নগরবাসী।

টানা বৃষ্টিতে কারওয়ান বাজারের সড়কে জমেছে পানি। সেই পানিতে ভেসে আসা সবজি তুলছে এক শিশু। ছবি : প্রথম আলো।

ভারী বৃষ্টিতে ময়মনসিংহ, শেরপুর ও হবিগঞ্জ শহরের বড় অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জমে থাকা পানি হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত উঠেছে। এসব জেলায় রেললাইন পানিতে ডুবে ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। নৌযানগুলোও কম চলাচল করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসতে পারে। তবে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টি বেশি হবে। রোববার থেকে বৃষ্টিপাত আরও কমে স্বাভাবিক আবহাওয়া ফিরতে পারে। আগামী সপ্তাহ থেকে বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করবে। যাওয়ার আগে কিছুটা বৃষ্টি ঝরালেও তা খুব তীব্র হওয়ার আশঙ্কা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে মৌসুমি বায়ুর শেষ অংশ বিদায় নিতে শুরু করেছে। এ সময়ে বৃষ্টি বেড়ে যায়। আর এর সঙ্গে একটি স্থল লঘুচাপ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে পূর্বাঞ্চলের দিকে চলে গেছে। মূলত ওই লঘুচাপের সঙ্গে আসা বিপুল পরিমাণ মেঘের কারণে বৃষ্টি বেড়েছে। শনিবার থেকে বৃষ্টি ক্রমে কমে আসতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত নিকলীতে দেশের সর্বোচ্চ ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ৩৪০ ও নেত্রকোনায় ৩১১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। আজ রাজধানীতে ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে সিলেট বিভাগের সব কটি জেলায় ১০০ মিলিমিটারের কাছাকাছি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছর বর্ষা একটু দেরিতে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে। সাধারণত জুনের মাঝামাঝি বর্ষাকাল শুরু হয়; কিন্তু এবার তা জুনের শেষের দিকে এসেছে। ফলে বর্ষার বিদায় একটু দেরিতে হতে পারে বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদেরা। অর্থাৎ চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের বদলে এক সপ্তাহ দেরিতে বর্ষা বিদায় নিতে পারে।

  • একটি প্রথম আলা প্রতিবেদন

Comments