ইউরোপী ইউনিয়ন

ইইউ’র সিদ্ধান্তকে নেতিবাচক বার্তা মনে না করার দাবি আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত: ১:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্তকে নেতিবাচক বার্তা বলে মনে করছে না আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা একটি জাতীয় দৈনিককে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় এমনটিই জানিয়েছে।

এর আগে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে মানবজমিন অনলাইন জানায় আসন্ন নির্বাচনে ইইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাক-পর্যবেক্ষক মিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য উপযোগী বলে মনে করছে না। এই সংবাদটি পরেরদিন বৃহস্পতিবার মানবজমিনের প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়।

অন্যদিকে ইসি ও আওমী লীগ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের (আ’লীগ) বক্তব্য, নিজেদের সক্ষমতার অভাবে যদি কেউ পূর্ণাঙ্গ দল পাঠাতে না পারে সেটা তাদের বিষয়। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তো তাদের এ নিয়ে কোনো পরামর্শ দেয়া হয়নি। তবে পূর্ণাঙ্গ দল আসলে তারা দেখতে পারতো সরকার কোন ধরনের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংবিধান মেনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।

তবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মূহুর্তে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। শীর্ষ দুই নেতার অনুপস্থিতে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ

এ বিয়েষ আওয়ামী লীগের দু’জন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের প্রতিক্রিয়া জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, দলের বক্তব্য কী তা আমি জানি না তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, তারা নির্বাচনটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আগে তারা বলেছিল পর্যবেক্ষক পাঠাবে এখন আবার বলছে সবখানে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। পাঠাবে তবে লিমিটেড। আসলে এটার ডিটেইলস আরো বুঝতে হবে কী হয়েছে।

এতে বহির্বিশ্বে কোনো নেতিবাচক বার্তা যাবে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, না না এটা আমি মনে করি না। আমার মনে হয় যে তারা যদি পুরো টিম পাঠাতো তাহলেই তো ভালো। আমাদের সরকার তো চাইছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এবং সকলের অংশগ্রহণ আমরা চাইছি। চেষ্টাও করছি। কিন্তু সেটা তো এখন পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। পর্যবেক্ষকরা থাকলে তারা ডেফেনেটলি নির্বাচনটা অবজারভ করতে পারে। আমরা যে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করছি এই জিনিসটা তো তারা দেখতে পারতো।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল বলেন, বাজেট সমস্যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অফিস সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা নির্বাচনের জন্য পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। ইসি সচিব বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সিইসি বরাবর একটি মেইল পাঠানো হয়েছে। সেই মেইলে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, তারা গত জুলাই মাসের ৬ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সভা করেছেন। সেজন্য তারা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

তিনি বলেন, উনারা বলেছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ টিম পাঠানোর বিষয়টি আর্থিক। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যে বরাদ্দ, সেটা না থাকার কারণে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। তবে, তারা পরবর্তীতে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সক্ষমতার প্রশ্ন থাকতে পারে। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নাও থাকতে পারে। যেহেতু কথাটা বলেছে পূর্ণাঙ্গ তার মানে আংশিক পাঠাচ্ছে। সুতরাং এই জায়গাটায় আমি নেতিবাচক কোনো বার্তা দেখি না।

আবদুর রহমান বলেন, পর্যবেক্ষক পূর্ণাঙ্গ আর অপূর্ণাঙ্গতা কী। তার মানেটা কী। সংখ্যাগত পর্যাপ্ততা, না পূর্ণাঙ্গতা নাকি তাদের কর্তব্য পালনে অপূর্ণাঙ্গতা। এখনই এ ব্যাপার নিয়ে কোনো ধরনের নেতিবাচক বার্তা আছে বলে মনি করি না।

বিষয়টি নিয়ে বেশ খোলামেলা কথা বলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর আগে একটা টিম পাঠিয়েছিলো। রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে প্রথম তাদের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছিল। আমার কাছে এখন যেটা মনে হচ্ছে, তারা এটাতে আশ্বস্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটি ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন অবশ্যই হবে। এ কারণেই হয়তো তারা আসছে না। সরকারের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে বলে মনে করি। কারণ প্রথম থেকেই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে আমরা ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন করতে চাই। যারাই পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চেয়েছে আমরা সবাইকেই ওয়েলকাম করেছি। সে কারণেই আমি বলবো হয়তো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই সরকারের ওপর আস্থা রয়েছে। পাশাপাশি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপক্ষে নির্বাচন সম্ভব বলে তারা মনে করছে।

তবে এ বিষয়ে কিছুটা ক্ষোভ জানিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।তিনি বলেন, বাংলাদেশ কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কলোনি? এখন কি আমরা ১৯৪৭ সাল পূর্ববর্তী কালে ফিরে গেছি? আমরা কি ইইউকে পর্যবেক্ষক পাঠাতে নিষেধ করেছি? জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই দেশের সবকিছুর মালিক দেশের জনগণ। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্র। প্রজাতন্ত্রের জনগণ সব কিছু নির্ধারণ করবে, বিদেশিরা নয়। সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।

উল্লেখ্য, ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কূটনৈতিব সূত্রের বরাত দিয়ে ইইউর নির্বাচনী পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায় দেশের একমাত্র ট্যাবলয়েড জাতীয় দৈনিক মানবজমিন। মানবজমিন জানায়, প্রাক পর্যবেক্ষক দলের তৈরি করা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউ’র তরফে বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি ইতোমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। আজ বা আগামীকালের (বৃহস্পতি-শুক্র) মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসতে পারে ইইউ সদরদপ্তর ব্রাসেলস থেকে। নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, প্রাক পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে ইইউ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। নিবাচনে পর্যবেক্ষক দল না পাঠালেও ছোট আকারের বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হতে পারে নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহের জন্য।

জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে যে, তাদের নির্বাচন মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য উপযোগী বলে মনে করছে না।

সূত্রের দাবি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে তাদের এই মতামত জানিয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রাক পর্যবেক্ষক দলের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন সহায়ক পরিবেশ নেই বলে মনে করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় পর্যবেক্ষক দল পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ। তবে নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের তথ্য নিজস্ব সূত্র থেকে পাওয়ার সুবিধার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ছোট আকারের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হতে পারে।

/এসএস/একুশনিউজ/

Comments