সড়ক দুর্ঘটনা রোধে লালমনিরহাট পুলিশের নানা উদ্যোগ

প্রকাশিত: ৯:৪৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০১৮

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিয়েছে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ।

ট্রাফিক আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি জনসচেনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচী অব্যহত রেখেছে জেলার ট্রাফিক বিভাগ।

পুলিশের এসব উদ্যোগে জনসচেতনতা বাড়ার সাথে সাথে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসায় সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, গত এক দশক ধরে জেলার লোকসংখ্যা বাড়ার সাথে সড়কে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।

গোটা জেলার ছোট বড় সড়ক মহাসড়কে যানবাহন, পথচারীর চাপে সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারনে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে সড়ককে নিরাপদ রাখতে জেলা পুলিশ ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে যানবাহন চালক ও পথচারীসহ জনসাধারণকে সচেতন করার কাজ করছে।

পুলিশের এসব উদ্যোগের ফলে আগের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসায় খুশি তাই সাধারণ মানুষ।

বেপরোয়া চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জেলা পুলিশ কর্তৃক মহাসড়কের পাশে লাগানো হয়েছে সচেতনতামূলক বিলবোর্ড। যা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে যানবাহনের গতি নিয়ন্তণে নিয়ে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন।

ঢাকার সাভার থেকে পণ্য নিয়ে আসা ট্রাক ড্রাইভার আইনুল মিয়া (৩৫), জেলা শহরের বাসচালক সফিকুল ইসলাম (৪৫)সহ অনেক চালক বলেন, সড়কে সব সময়ই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সামান্য অসতর্ক বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারন হয়ে যায়।

কিন্তু লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে সচেতন করার সাইনবোর্ড চোখে পড়া মাত্রই অনেক চালকই মুহূর্তেই সতর্ক হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক দুর্গটনাই প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।

শুধু সাইনবোর্ড দিয়ে নয়, চালক-পথচারীকে সচেতন করতে প্রায় প্রতি মাসেই স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী-অভিভাবক, সাধারণ পথচারীদের নিয়ে জেলা পুলিশ করছে মতবিনিময় এবং অটোরিক্সাসহ তিন চাকার যানবাহন, বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনের মালিক-চালকদের সাথে ট্রাফিক আইন নিয়ে করা হচ্ছে সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার।

সড়কের পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পথচারী পারাপারের জন্য সংশ্লিষ্ট স্কুল কলেজের সামনের রাস্তায় করা হয়েছে জেব্রাক্রোসিং।

আবার পেট্রোলপাম্পগুলোতে চলছে ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ কর্মসূচী। এ জন্য প্রতিটি পাম্পেই টাঙানো হয়েছে ‘নো হেলমেট নো পেট্রোল’ ব্যানার।

মটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরিধান করে এলেই কেবল পেট্রোল নিতে পারছেন, তাছাড়া নয়। এতে করে যেসব মটর সাইকেল চালকরা হেলমেট পরিধানে অভ্যস্ত নয় তাঁদের মাঝে হেলমেট পরিধানের অভ্যাস গড়ে উঠছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

মটর সাইকেল চালক মিজানুর, আরিফুল, আবু বক্করসহ অনেকে বলেন, হেলমেট ছাড়া মটর সাইকেল চালানোতে জীবনের ঝুকি থাকে। পেট্রোল পাম্পে এলে হেলমেটের কথাটা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, এতে করে অনেকেই সচেতন হচ্ছেন।

সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি সড়কে চলছে ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত অভিযান। যারা আইন মানছেন না তাদের ভাগ্যে জুটছে মামলা, জরিমানার খড়গ। যারা মানছেন তাদের আইন মানার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতে দেয়া হচ্ছে ফুলেল শুভেচ্ছা।

এছাড়া মহাসড়কে যানবাহনের বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ব্যবহার করছেন।

যেসব বাস বা ট্রাক বেপরোয়া গতিতে মহাসড়কে চলাচল করছে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মটরযান আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ফরিদ আহমেদ জানান, স্পিডগানের সাহায্যে যানবাহনের গতি তাৎক্ষণিকভাবে পরিমাপ করে আইন ভঙ্গকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যাতে মহাসড়কে বেপরোয়া গতিজনিত কারনে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব করা যায়।

স্থানীয়দের দাবী পুলিশের এসব উদ্যোগের ফলে সচেতনতা বাড়ছে জনসাধারণের মাঝে।

জেলা পুলিশের এসব উদ্যোগের স্বীকৃতিও জুটেছে সম্প্রতি। গত সেপ্টেম্বর মাসে মহাসড়কে ট্রাফিক সাইন স্থাপনে অবদান রাখায় রংপুর রেঞ্জের বিভাগীয় সম্মেলনে পুলিশ সুপার পেয়েছেন বিশেষ পুরষ্কার। এছাড়া একই মাসে রংপুর রেঞ্জে শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইউনিট নির্বাচিত হয়েছে জেলা ট্রাফিক বিভাগ।

পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, শুধু অভিযান আর মামলা দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়, সড়ককে নিরাপদ রাখতে যানবাহন চালক, পথচারী সকলকে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন।

/আরএ

Comments