ভৈরবে পুলিশের এসআইকে গণধোলাইয়ের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার

প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, জুন ৩, ২০১৯

ভৈরব প্রতিনিধি: ভৈরবে শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে থানা পুলিশের এসআইকে গণধোলাইয়ের ঘটনা তদন্তে আসেন অতিরিক্তি পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

এ ঘটনা দেশের প্রথম শ্রেণির জাতীয় পত্রিকাসহ জাতীয় ও স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলিতে সংবাদ প্রকাশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ফলে প্রশাসনের টনক নড়ে ওঠে।  ঘটনার তদন্তে সোমবার দুপুরে ছুটে আসেন কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

অন্যদিকে পুলিশের এসআইকে গণধোলাইয়ের ঘটনায় আটক ৫ জনকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আটক ব্যক্তিদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনার নামে শহরের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. সেলিম মিয়ার বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া অভিযোগ ওঠেছে। যদিও পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতা হাজী সেলিম টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, সজিব নামে এক কলেজ শিক্ষার্থীকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে স্থানীয়দের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হন থানা পুলিশের দুইজন এসআই।

তারা হলেন, এসআই আবুল খায়ের ও এসআই আজিজুল হক। এদের মধ্যে এসআই আবুল খায়ের সবচেয়ে বেশি বেধরক মারপিটের শিকার হয়েছেন।

গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি মদের বোতল দিয়ে শিক্ষার্থী সজিব মিয়াকে ফাসাঁনোর চেষ্টা করে পুলিশ। সে শম্ভুপুর সরকারি টেকনিক্য্যাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সজিবের বাবা একজন মোদী দোকানী।

পুলিশ জানায়, শনিবার রাত ৮টার দিকে শহরের চান্দ ভান্ডারের সামনে থেকে মদের বোতলসহ মোটরসাইকেল আরোহী সজিবকে আটক করে পুলিশ। পরে মোটরসাইকেলেসহ সজিবকে থানায় নেয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু সজিব কৌশলে মোটরসাইকেল নিয়ে দুর্জয় মোড় থেকে সজোরে পাক্কার মাথায় চলে যায়। পরে সজিবকে হাতকড়া পড়াতে চাইলে সে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।

এদিকে স্থানীয়রা এবং সজিবের পরিবারের সদস্যরা জানায়, মোটরসাইকেল নিয়ে সজিব তার দুই বন্ধুকে নিয়ে সন্ধ্যায় ঈদের কেনাকাটা করতে মার্কেটে যায়। পরে তাদেরকে চান্দ ভান্ডারের সামনে আটকে সজিবের গায়ে মদ ছিটিয়ে মাদক ব্যবসায়ী বানানোর চেষ্টা করে পুলিশ।

পরে সজিব মোটরসাইকেল নিয়ে তার মহল্লা শহরের পাক্কার মাথা চলে আসে। তাদের পিছু নেয় ভৈরব থানার এসআই আবুল খায়ের ও আজিজুল হক। পরে সজিবকে জোড় পূর্বক ধরে নিয়ে যেতে চাইলে বিষয়টি স্থানীয়দের চোখে পড়ে।

এসময় এসআই আবুল খায়েরের গায়ে পুলিশের পোশাক না থাকার কারণে ছিনতাইকারী ভেবে তাকে গণধোলাই দেয়। আর আব্দুল আজিজ কৌশলে পালিয়ে আসে।

খবর পেয়ে ভৈরব থানার এসআই মোখলেছুর রহমান রাসেল ও অভিজিৎ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আবুল খায়েরকে উদ্ধার করে। একই সাথে পুলিশের উপর হামলার দায়ে ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে সেহরি খাওয়ার সময় সজিবের বাবা মো. সাবু মিয়াকেও আটক করে পুলিশ।

পরে রোববার দুপুরে পাক্কার মাথা এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, হাজী মতিউর রহমান, হাজী আব্দুল মালেক, আব্দুস সাদেক, বোরহান উদ্দিন ও হাজী সেলিম মিয়া। পরে তারা মোসলেকা দিলে আটক ৫ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। কিন্তু থানা থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনার নামে হাজী সেলিম মিয়া ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সজিবের ফুফা মাহবুব আলম।

টাকার নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম মিয়া বলেন, তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়নি। তাছাড়া হামলার শিকার পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকলেটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তিনি ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়ে ছিলেন।

দুই পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে ফাঁসানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পুলিশ সুপারের (এসপি) নির্দেশে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি। যা যা জেনেছি সবই এসপি স্যারকে জানাবো। পরে তিনিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরএম/

Comments