ঝিনাইদহে সংঘর্ষের পর পুরুষ শূন্য যে গ্রাম!

প্রকাশিত: ৪:৩১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০১৯

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দেবতলা গ্রামে সামাজিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের
দু’গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলে আসছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে দিগনগর ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান পান্না খান ও আরেক গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং জেলা পরিষদ
সদস্য মনোয়ার হোসেন মালিতা। এরা দুজনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার (৬ মার্চ) সকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।এ ঘটনায় অন্তত ১০/১২ জন গুরুতর আহত হয়। আহতদের বেশীরভাগই মনোয়ার হোসেন মালিতার কর্মী-সমর্থক। আহতরা বর্তমানে শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ সদর
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় মনোয়ার হোসেন মালিতার কর্মী আহত সুরাপ মালিতা বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় ৮৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৭, তাং-০৬/০৩/১৯।

পরে মনোয়ার হোসেন মালিতার প্রতিপক্ষ পান্না খানের কর্মী নেকবার মন্ডল বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১৫/২০
জনকে অজ্ঞাত করে আরেকটি পাল্টা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৮, তাং-০৬/০৩/১৯।পাল্টাপাল্টি মামলা দায়েরের
ঘটনায় গ্রেফতার আতংকে দেবতলা গ্রাম বর্তমানে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।এদিকে পান্না খানের কর্মী নেকবার মন্ডলের
দায়েরকৃত পাল্টা মামলায় জরিপ বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন মালিতার নাম রয়েছে। তাকে ১২
নং আসামী করা হয়েছে। অথচ জরিপ বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজে খোজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনার দিন তিনি সকাল ৯
থেকে বিকাল ৩ পর্যন্ত কলেজে উপস্থিত ছিলেন। হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর রয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত না থাকলেও এই সহকারী অধ্যাপকের নামে মামলা দায়ের করায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানান, হেলাল মালিতা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নিয়ামত আলী মালিতার ছেলে। এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তাছাড়াও তিনি চাকুরী সুবাদে দীর্ঘদিন যাবৎ শৈলকুপায়
অবস্থান করেন। গ্রাম্য দলাদলিতে তার কোন যোগসাজস নেই।উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মনোয়ার
হোসেন মালিতা জানান, ৬ মার্চ তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর সাবেক চেয়ারম্যান পান্না খানের সন্ত্রাসী বাহিনী অতর্কিত
হামলা চালিয়ে ১০/১২ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
সেই মামলা কাউন্টার হিসেবে প্রতিপক্ষরাও একটি মামলা দায়ের করেছে। ঐ মামলায় যাদেরকে আহত দেখানে হয়েছে,
তাদের কেউই আহত হয়নি। মুলত তারাই হামলা চালায়। আর মামলায় যাদেরকে আহত দেখানো হয়েছে, তাদের বেশীরভাগ
লোকই হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হয়নি। যা কিনা হাসপাতালের ভর্তি রেজিষ্ট্রার চেক করলেই সব সত্যতা বেরিয়ে আসবে।এ
বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান পান্না খানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও আদালতে থাকায় তাকে পাওয়া
যায়নি।

শৈলকুপা থানার ওসি কাজী আয়ুবুর রহমান জানান, দেবতলা গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা দায়ের
হয়েছে। আসামী গ্রেফতারে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। পরবর্তীতে যাতে আর কোন ধরনের আইনশৃংঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না
হয়, সে জন্য ঐ গ্রামে পুলিশের নজরদারী জোরদার করা হয়েছে।

Comments