টঙ্গীবাড়ীতে মাজারে মূর্তি দিয়ে ব্যবসা!

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০১৯

শরীর কিংবা হাত-পায়ের যে কোনো রোগের জন্য মাটির মূর্তি ও সদৃশ হাত-পা ফজুশাহ মাজারে মানত করলে ভালো হয়ে যায় রোগ!

মাজারে মানতের ফলে মৃত্যুশয্যা থেকেও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছে অনেকে! এমনই কুসংস্কারে গত কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আড়িয়ল ফজুশাহ মাজারে।

আর এ কুসংস্কারকে পুঁজি করে মূর্তি বিক্রির প্রতরণামূলক ব্যবসা চালাচ্ছেন মাজারের খাদেমরা।

সরেজমিন রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মাজারের সামনেই ১৪টি টং দোকান। দোকানগুলোতে মাটির তৈরি মূর্তি, হাত-পা, চোখ-কানসহ অঙ্গ-প্রতঙ্গের বেচা-বিক্রি চলছে।

মাজারের সামনে দিনের বেলা জ্বলছে মোমবাতি। কেউ মাজারে মূর্তি প্রদান করছেন, আবার কেউ কথিত নিয়ম অনুযায়ী মাজারের চারদিকে আড়াইবার প্রদক্ষিণ করছেন। সিজদাও দিতে দেখা যায় অনেককে।

এ ছাড়াও আছে লাঠিতে তেল ঢেলে সে তেল শরীরের মাখার ব্যবস্থাও। রয়েছে গান বাজনার ব্যবস্থাও। কুসংস্কারাচ্ছন্ন মাজারটিতে যেন ধর্ম অবমাননার মহোৎসব চলছে।

স্থানীয়রা জানান, যাকে ঘিরে মাজার সে ফজুশাহ কোনো পীর বা ওলি ছিলেন না।

কথিত আছে, যুবক বয়সে ফজুশাহ নিজের হাতে নিজের কবর খুঁড়ে সে কবরে ঢুকে পরেন। এরপর স্বপ্ন দেখানো নির্দেশ অনুযায়ী বাড়ির লোকেরা কবরে মাটি দিয়ে সেখানে মাজার তৈরি করেন।

মাজারের সামনে দোকানগুলো খাদেমদের। প্রথমে মোমবাতি-আগরবাতি ও পরে মূর্তির ব্যবসা জমজমাট হয় মাজারকে ঘিরে।

মাজারে আসা এক ভক্ত আয়শা আক্তার জানান, মায়ের পায়ে সমস্যা ছিল মানত করেছি,ভালো হয়েছে। তাই একটি মূর্তি দিয়ে গেলাম।

একই কথা জানান আরেক ব্যক্তি নজরুল ইসলাম।

মাজারের খাদেম ইদ্রিস দেওয়ান জানান, পূর্ণাঙ্গ মূর্তি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, হাত-৭০ টাকা, পা ১৫০ টাকা, চোখ ৩০ টাকা, কান ২০ টাকা দরে বিক্রি করে তারা। স্থানীয় কুমারবাড়ি থেকে তৈরি করে এনে ৫ থেকে ৫০ টাকা লাভে এ সব বিক্রয় করা হয়।

তিনি জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ মাজারে আসেন। সবার মনের বাসনাই পূর্ণ হয় মাজার মানতে।

মাজারের এ রীতি ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে কিনা এ ব্যাপারে ওই মাজারের এক খাদেমের কাছে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

আরেক খাদেম শিকান্দার দেওয়ান জানান, কেউ মূর্তি কেউ ছাগল, মোরগ-মুরগি মানত করে। স্বর্ণের অলংকারও দেয় অনেকে।

এদিকে অনুন্ধানে দেখা গেছে, মাজারে মূর্তি দেয়ার পর সে মূর্তি আবারো দোকানে ফিরিয়ে আনেন খাদেমরা। একইভাবে আবারো হয় বিক্রি। টাকা-পয়সা, মুরগ-মুরগি,গরু-ছাগল ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন খাদেমরা। মানুষ ঠকিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎই চলছে তাদের এ ব্যবসা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসামৎ হাসিনা আক্তার জানান, সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে ইতিমধ্যে ওই মাজারের কাছের ১৪টি দোকানে থাকা মূর্তি, মাটির হাত-পা বিনষ্ট করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি একটি প্রতারণা। কোনো ধর্ম কিংবা বিজ্ঞান এর সমর্থন করে না। দোকানগুলো বন্ধ করা হয়েছে। খাদেমদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ সব কুসংস্কার বন্ধ করার জন্য। – যুগান্তর।

Comments