মিরসরাইয়ে ডিজিটাল ভূমি জরিপ বাতিল করার দাবী ভূমি মালিকদের

প্রকাশিত: ৯:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০১৯

মিরসরাই প্রতিনিধি:মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের ডিজিটাল সার্ভের অনিয়ম ও ঘুষ দূর্ণীতির অভিযোগ এনে পূর্বের জরিপ বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ করে নতুন ভাবে ভূমি জরিপের দাবী জানিয়েছেন ভূমি মালিকরা। বুধবার (৩ জুলাই) সকালে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আয়োজিত উপজেলা ভূমি জরিপ পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ দাবী জানানো হয়। এসময় প্রায় ২ শতাধিক ভূমি মালিক উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকরা অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সেটেলম্যান্ট অফিস করেরহাট ইউনিয়নের কাটাগাং, ভালুকিয়া, জয়পুর, পূর্বজোয়ার ও পশ্চিম জোয়ার মৌজা এলাকায় ডিজিটাল সার্ভের কাজ শুরু করে। এসময় সার্ভে টিমের লোকজন স্থানীয় জমি মালিকদের সঙ্গে কোনরকম সমন্বয় না করে একতরফাভাবে নকশা প্রণনয়ন করছেন।

এছাড়া জমির নকশা ঠিকঠাকভাবে করে দিবে বলে বেশ কিছু জমি মালিক থেকে টাকা দাবি করেছে। নিরুপায় হয়ে অনেকেই তাদের টাকাও দিয়েছেন। এখানে ডিজিটাল জরিপ করার সময় জমি মালিকদের সাথে যোগাযোগ না করার দরুন জরিপ ত্রুটিযুক্ত হচ্ছে। জরিপ টিমে নিয়োজিত লোকজনের সাথে কথা বললে তারা বারবার শুধু বলছে ৩০ এবং ৩১ এর একটি ধারায় ত্রুটিযুক্ত জরিপ সংশোধন করা সম্ভব। অথচ দেশের বি.এস জরিপে ত্রুটি থাকার দরুন দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবার আদালতে যেতে যেতে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে পড়েছে। আবারো যদি একই ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে তাহলে নতুন এ জরিপ জনগণের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী কলহ ও সংঘাতের জন্ম দিবে।

ক্ষতিগ্রস্থ সাইফুল ইসলাম বলেন, বরৈয়া মৌজায় আমার ৬৯ শতক জায়গা ছিলো। কিন্তু ৫ শতক বাদ দিয়ে ৬৪ শতক জমি রেকর্ড করা হয়। এটি ঠিক করার জন্য সার্ভেয়াররা ৭০ হাজার টাকা দাবী করেছে। জামাল উদ্দিন চৌধুরী নামে আরেক জমির মালিক অভিযোগ করেন ভালুকিয়া মৌজায় তাঁর দখলীয় ৪শতক জায়গা বড় ভাইয়ের নামে রেকর্ড করেন ওই কর্মকর্তারা। অথচ ওখানে আমি দখলে আছি। বরৈয়া মৌজার মেজবা উদ্দিন বলেন, আমাদের পৈত্রিক সম্পতি ৭৪ শতক রেকর্ড না করার জন্য সার্ভেয়াররা নানা তালবাহানা করেন।

পরবর্তীতে পুরো জমি রেকর্ড করে দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা দাবী করেন। আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছে তারপরও তারা ভুল ভাবে আমাদের জমির রেকর্ড করেছে। হাজী সাহাব উদ্দিন কোম্পানী বলেন, সার্ভেয়াররা জরিপ শেষে প্রত্যেক মৌজায় সীমানা পিলার দিচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যতে কোন সময় জমি মাপতে গেলে সবাইকে আগের মতো কষ্ট করতে হবে। প্রত্যেকটি মৌজার শুরু এবং শেষে যদি সীমানা পিলার দেওয়া হয় তাহলে জনগণের দুর্ভোগ লাগব হবে। তাদের মতো শতাধিক লোক সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, সারাদেশের মত চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ কাজ শুরু করেছে সরকার। যার মধ্যে মিরসরাইয়ে করেরহাট ইউনিয়নে আর.এস টু নামের এ জরিপ কাজ চলছে। তবে এখানে জরিপকাজে নিয়োজিত সরকারি সার্ভেয়ার ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জমির মালিকানা, শ্রেণি ও সীমানা পরিবর্তনের কথা বলে ঘুষ লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা ভূমি জরিপ পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় করেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত আরা ফেন্সী, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রাশেদুল ইসলাম, সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. আবুল কাসেম-২, করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা মো. তোবারক হোসেন ও মো. সোয়াইব মেম্বার প্রমুখ।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমাদের দাবী হলো বিএস অনুযায়ী ডিজিটাল সার্ভে করতে হবে, সার্ভে করার সময় যাদের থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে তা ফেরৎ দিতে হবে, সার্ভে কাজে জড়িত বর্তমান সকল কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে হবে, ক্রুটিপূর্ণ জরিপ করা নকশা বাদ দিয়ে নতুন করে জরিপ করতে হবে, আদালতে যে সকল বিএস খতিয়ানের মামলা চলমান সার্ভে করার সময় তার সমাধান দিতে হবে, সার্ভে কাজ শুরু করার আগে ওই এলাকার জনগণকে জানাতে হবে, বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নকশা প্রণয়ণ করা যাবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সরেজমিনে বক্তব্য শুনেছি। ভূমি মালিকদের অভিযোগের আলোকে আমি জরিপ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবরে লিখিত প্রতিবেদন পাঠাবো।

উপজেলা চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন বলেন, ডিজিটাল সার্ভেতে অনিয়ম হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। সরকার জনগণের কল্যাণার্থে এই প্রকল্প শুরু করলেও এখন এটি তাদের গলার কাটা হয়ে গেছে। পূর্বে করা ক্রুটিপূর্ণ জরিপ বাদ দিয়ে নতুন করে এখানে জরিপ কার্যক্রম শুরু করতে হবে। না হয় ভূমি মালিকদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি একই সাথে অসাধু সার্ভেয়ারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এমএম/

Comments