অসহায়দের পাশে দাঁড়ান পুরষ্কারের টাকায়

প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
আলোক চিত্রশিল্পী মো: জহিরুল ইসলাম

ফটোগ্রাফির একটি ব্যতিক্রমী দিক রয়েছে যা কোনো জায়গা কিংবা মানুষের জীবন সম্পর্কে সম্পুর্ণ ধারণা পাল্টে দেয়। নিত্যজীবনে শুধুমাত্র সাধারণ ছবি দিয়ে যা আমরা কখনো খেয়াল করে দেখিনি, সেটাও ক্যামেরাবন্দি হয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এটি এমন এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা তরুণ এক ফটোগ্রাফার কাজী মো: জহিরুল ইসলামকে উৎসাহিত করে।

জহিরুলের জন্ম ১৯৯২ সালের জানুয়ারির প্রথম দিন। নোয়াখালী শহরের বেড়ে ওঠা এই তরুণ শখের বশে ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরা হাতে ছোট্ট ফ্রেমে বন্দি করছেন হাজারো না বলা গল্পকে। আলোক চিত্রশিল্পী হওয়ার স্বপ্নটা দেখতেন তখন থেকেই, যখন বাবার কিনে দেওয়া সেই ক্যামেরা হাতে ভুল করতেন না প্রতিটি মুহুর্তকে ক্যামেরাবন্দি করতে।

জহিরুল এর কাছে আলোকচিত্রকরের কাজটা শখের হলেও তা রীতিমত মিশে রয়েছে তার আবেগের সাথে। বয়সের সাথে সাথে এই শখ গড়ে ওঠে তার জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। তার ক্যামেরায় আটকানো প্রতিটি ছবি প্রতিনিয়ত প্রতিনিধিত্ব করছে সাধারণ মানুষের জীবনের না বলা গল্পকে। নিজের অবসরের বিপরীতে প্রিয় ক্যামেরা নিয়ে ছুটে চলেছেন সাধারণ কিংবা গণমানুষের জীবনের স্থিরচিত্র উপস্থাপনে। তার তোলা প্রতিটি ছবি একত্রে উপস্থাপন করছে হাজারো ভাষা। প্রতিটি ছবিতে ওঠে আসছে নানান অজানা গল্প।

কিছু অসাধারণ মানের সামঞ্জস্যে সাধারণ মানুষের আবেগ ধারণ এবং তা সবার সামনে উপস্থাপন করে জীবনের অর্থ উদঘাটন করার জন্য জহিরুল রাস্তার ছিন্নমূল মানুষের গল্প, বিশেষ করে উপেক্ষিত গণমানুষের গল্প বলতেই পছন্দ করেন।

তিনি কৌতূহল ও প্রশ্ন উত্থাপন করার জন্য তাদের পরিচয়, সুখ, স্বপ্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যের অনুসন্ধান করেন। চেষ্টা করেন হাজারো গল্প এক ফ্রেমে তুলে ধরতে। দেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন জীবনের নানান স্থিরচিত্র প্রতিনিধিত্ব করে হাজারো কিংবা লক্ষ্যাধিক শব্দকে। তার তোলা প্রতিটি ছবি যেন তুলে ধরছে সমগ্র দেশকে।

ইতোমধ্যেই আলোকচিত্রের জগতে নিজের কৃতিত্বের জন্যে একাধিক দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে পুরষ্কৃত হয়েছেন জহিরুল। তার ক্যামেরায় ধারণকৃত চারকোণা ফ্রেমের ছবি দেশ পেরিয়ে প্রদর্শিত হয়েছে নানান আন্তজার্তিক অঙ্গনে। শুধু তাই নয়, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন কিংবা ক্যালেন্ডারেও ওঠে আসতে ভুল করেনি তার তোলা আলোকচিত্র।

একাডেমিকভাবে, জহিরুল ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইউসি) থেকে তার স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন শেষ করেন। এরপর তিনি এইচআরএমের (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট) উপর এমবিএ করেন। পেশাগত ভাবে একজন চাকরীজীবী। বর্তমানে তিনি এশিয়ান গ্রুপের সিনিয়র এইচআর হিসাবে কাজ করছেন। জহিরুলের অন্যতম গুণের মধ্যে একটি হলো তিনি তার অর্জিত সকল অর্থই রাস্তার অসহায় মানুষদের জন্য ব্যায় করেন। তিনি সবসময় চেষ্টা করেন তাদের জন্যে সুখের একটি ছোটখাটো উৎসের সন্ধান দিতে। জহিরুলের মতে, জীবনের মূল উদ্দেশ্য এবং বেঁচে থাকার প্রেরণা শুধুমাত্র এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখের হাসিতেই খুজে পাওয়া যায়।

আগামী ৮-৯ই ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হবে তরুণ এই আলোকচিত্রীর একক প্রদর্শনী ‘আলোকচিত্রে বাংলাদেশ’ যেখানে খুঁজে পাবেন জহিরুলের ক্যামেরায় গণমানুষের যাপিত জীবন।

লেখক: ইমরান হোসাইন
সাংষ্কৃতিক কর্মী, তরুণ আলোকচিত্রী
/সিএইচ

Comments