বিদেশি শিক্ষার্থীদের পদভারে প্রাণবন্ত ইবি ক্যাম্পাস

প্রকাশিত: ১২:২৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০১৯

মুরতুজা হাসান নাহিদ: স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ। ১৯৭৯ সালে এর পথচলা শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক মানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে।

দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কিছু কারণবশত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি।

২০১৬ সালের ২১আগস্ট ড. রাশিদ আসকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর দেশের সর্ববৃহৎ ৪র্থ সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আন্তর্জাতিকীকরণের চেষ্টা। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নতুন করে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়।

দেশের একপ্রান্তে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিটি বিভাগের পাঠদানের ডিজিটাল পদ্ধতি, বৃহদাকার লাইব্রেরি, আবাসিক নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক, খেলাধূলা-সহ কূটনৈতিক সুসম্পর্ক এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসমূহ বিদেশি শিক্ষার্থীদের নজর কেড়েছে।

শুধু তাই নয় শিক্ষার পাশাপাশি সবুজ-শ্যামল প্রকৃতিতে ঘেরা মনোরম পরিবেশ এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। সকাল হলে বিদেশি  শিক্ষার্থীদের পদভারে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। কেউ স্নাতক আবার কেউ স্নাতকোত্তর পড়তে এসেছেন। এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এসেছেন সোমালিয়া ও নেপাল থেকে।

নেপাল থেকে আগত এক শিক্ষার্থী সাহিল আমান ফলিত রসায়ন ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে স্নাতক শেষ করার জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেয়।

তার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম পদ্ধতি তাকে মুগ্ধ করেছে। সে বলে আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যেমনটা ভেবেছিলাম তার থেকে দ্বিগুণ সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুন্দর ব্যবহার আর সবার ভালোবাসায় আমাকে আপ্লুত করেছে।

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশীয় শিক্ষার্থীরা আমাকে এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের সবাইকে অনেক সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে। যার কারণে আমরা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সাথে অতি সহজে মিলেমিশে পড়াশুনা করতে পারছি।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয় নেপাল, সোমালিয়ান, ইথিওপিয়ানরা বাংলাদেশিদের সাথে এক সুতোয় মিশে গেছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের মূল্যয়ন অন্যদের থেকে অনেক বেশি। মায়ের দেশ ছেড়ে ভিনদেশে পড়তে আসা সব বিদেশি শিক্ষার্থীদেরকে নিজেদের ভাই বোনদের মত করেই গ্রহণ করে নিয়েছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা।

বাঙালি জাতির কালচার তাদেরকে মুগ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালি উৎসব বসন্ত বরণ, পহেলা বৈশাখসহ যতগুলো দেশীয় উৎসব পালন করা হয়। প্রতিটি উৎসবে তারা শতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। শুধু তাই নয় ‘জাতি সংঘে বাংলা চাই’ এই দাবিতে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষের সাথে তারা একাত্মতা পোষণ করেছিল।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকল জায়গায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ দেশীয় শিক্ষার্থীদের আনন্দগুলো আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়। শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নয় খেলাধুলাতেও পিছিয়ে নেই বিদেশি শিক্ষার্থীরা। বিকেল হলেই দেখা মিলে তাদের ক্রিকেট অথবা ফুটবলের মাঠে।

জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড়দের মত নিজেদের কে সাঁজিয়ে মাঠে নেমে যায়। আর তাদের খেলাধুলা উপভোগ করতে ভিড় জমায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত দর্শনার্থীরা। লেখাপড়ার পাশাপাশি সব দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।

সোমালিয়া থেকে পড়তে আসা কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বশির মাহাদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পেরে আমি গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যপদ্ধতি এবং দেশীয় কালচার এবং সবার আন্তরিকতা আমাকে পড়াশুনার প্রতি অনেক উদ্বুদ্ধ করেছে।

তিনি বলেন, আমরা সোমালিয়া থেকে প্রায় ২৫ জন ছাত্রছাত্রী এখানে লেখাপড়া করছি। আমাদের দেখে দেশের আরও অনেক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করতে ইচ্ছুক। সোমালিয়া, নেপাল, ইথিওপিয়াসহ প্রায় ৩০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.রাশিদ আসকারী বলেন, চতুর্থ সমাবর্তনের মূল স্লোগান ছিল আন্তর্জাতিকীকরণের পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। সেই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ব্যাপারে আরো বেগবান হয়েছি।

বিশেষ করে অনার্স, মাস্টার্স, এম ফিল, পি এইচ ডি সহ প্রায় সবকটিতে আমরা সার্কুলার দিয়েছি। আমরা যথেষ্ট সাড়াও পাচ্ছি তবে আরো বেশি সাড়া পাবো বলে আমরা আশাবাদী।

/এফএফ

Comments