লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সেতু নয় যেন মরণ ফাঁদ, দেখার কেউ নেই!

প্রকাশিত: ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮

মুহাম্মদ নোমান ছিদ্দীকী: লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনাতীরের ০১নং চর কালকিনি ইউনিয়নে বাত্তিরখালের ওপর প্রায় ১৫০ ফুট লম্বা নির্মিত কাঠের সেতু। সেতু তো নয় যেন মরণ ফাঁদ, দেখার কেউ নেই!

৫ বছর আগে সেতুটি নির্মিত হয়। নির্মিত হওয়ার দু বছর পর সেতুটি ভেঙে যায়। এলাকার সাধারণ জনগণ সেতুটি জোড়াতালি দেয়। এতে জনগণের যাতায়াত কিছুটা সহজ হয়। বিগত ৫ বছর অতিক্রম হলেও নতুন সেতু মিলেনি। কাঠের টুকরো দিয়ে সেতুটি জোড়াতালি দিয়ে মেরামত হয়। বার বার ভেঙে যাওয়াতে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছে বিভিন্ন ধরণের যানবাহন, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এতে যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

মেঘনার ক্ষুধার্ত গর্ভে অনেকটা গিলে খেয়েছে এখানের বিস্তীর্ণ জনপদ। ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এ সেতুটি ইউনিয়নের দু’মেরুর সংযোগ হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলেও এমনটাই সত্য যে, সেতুটি এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কারো কোন নজরে নেই ।

ভুক্তভোগী মানুষজন সেতু চেয়ে পেয়েছেন কাঠের সেতু। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করলেও জনগণ দুর্ভোগে চলাচল করছেন ইউনিয়নের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ইউনিয়নের আর কোন বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। বার বার ইট-পাথর আর রড-সিমেন্টের সেতুর দাবি উপরের মহলে করছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু বরাদ্দ আসলেই কেবল কাঠের সেতুর বরাদ্দ আসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটি দিয়ে চলাচল করেন, স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, বাজারে আসা ক্রেতারা, স্থানীয় লোকজন, জেলে জনগোষ্ঠী। দূর থেকে আসা মানুষও সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া ছাত্র, ছাত্রী সেতুটি পার হয়ে স্কুলে যায়। সেগুলো হচ্ছে, মতিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, চর কালকিনি মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কে আলম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ মার্টিন হাজিপাড়া নূরানী মাদ্রাসা এবং নাছিরগঞ্জ কওমী মাদ্রাসা।

শিক্ষার্থী মিতু আক্তার ও আতিকুর রহমান বলেন, সেতু ভাঙার কারণে আমরা স্কুলে যাইতে পারি না। খুব ভয় লাগে। যে সময় সেতু ভাঙা থাকে সে সময় আমরা স্কুলে যেতে পারি না।

অভিভাবক রিয়াজ ভান্ডারি ও শাহ আলম মোয়াজ্জেম বলেন, ৭০-৮০ বছর বয়সে এই ভাঙা সেতু দিয়ে যাইতে পারি না। অনেক ভয় লাগে। সেতুটি হচ্ছে না কেন? এর কারণটা কি? এখান দিয়ে হাজার হাজার মানুষ নিয়মিত চলাচল করে।

জনতা বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যবসার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, ছাত্র/ছাত্রীরাও স্কুলে যেতে সমস্যায় পড়ছেন। দু’মাস আগে স্কুলের একটা মেয়ে সেতু থেকে পানির নিচে পড়ে গেছে। অনেক কষ্ট করে তাকে পানি থেকে উঠাইছি আমরা। কিছু দিন আগে ব্রীজটি ভেঙে গেলে আমরা ব্যবসায়ীরা ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ১২ হাজার টাকা দিয়ে সেতুটি মেরামত করেছি। আমাদের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইলেও এ কমলনগর এখনো অবহেলিত কেন?

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ শাওন বলেন, “আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বারকে ভোট দিয়ে বানাই আমাদের উপকারের জন্য। কিন্তু আমাদের বিপদ-আপদে তাদেরকে কাছে না পেলে কী লাভ হবে? আমরা কেন ভোট দিয়ে তাদের চেয়ারম্যান-মেম্বার বানালাম এটাই আমাদের অপরাধ। এই যে ছোট ছোট শিশুরা খালে পড়ে আহত হচ্ছে। প্রসূতি মায়েরা দূরভোগে পড়ছে, ঠিক মত ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না, এগুলোর দায় কে নিবে? আমরা কিছু চাই না, শুধু একটা ব্রীজ চাই। এটাই আমাদের দাবি।”

ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল পাটোয়ারী বলেন, এখানের সেতু ভেঙে যাওয়ার পর ঠিক মতই বাজেট এসেছে নতুন সেতু নির্মাণ করার জন্য। কিন্তু আমাদের আশা পূরণ হয়নি। এতে সরকারের দুর্নাম বাড়ছে। এ বাজেটগুলো কোথায় যাচ্ছে? আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলার পর, তারা বলছেন এ সেতু নির্মাণ করা সম্ভব না। আমরা চাই এখানে দ্রুতই সেতু নির্মাণ হোক।

ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইফ উল্লাহ বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। সেতুটি নির্মাণ করার জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে।

Comments