যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বালিশ ও চাদর দেয়া হচ্ছেনা, ধুলার মধ্যে থাকছেন রোগীরা

প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, জুন ৯, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি:  রোববার দুপুর ১টা ৪৮ মিনিট। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের গেট পার হয়ে ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় বামপাশের মেঝেতে পড়ে আছে এক বৃদ্ধা। মাথায় বালিশ নেই। মেঝেতে নেই চাদর। ধুলাবালির মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন তিনি।

স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধার নাম শান্তি বিশ্বাস (৭৩)। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের ভুপতি বিশ্বাসের স্ত্রী। তিনি সিভিডি রোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তিনি হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে আনা হয়।

স্বজনরা তাই বালিশ ও চাদর আনতে ভুলে গেছেন। স্বজনরা চাওয়ার পরও ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকারা বৃদ্ধা রোগীর জন্য বিছানার চাদর ও বালিশ দেননি। যে কারণে রোগীকে ধুলা বালির মধ্যে রাখতে বাধ্য হয়েছেন । অথচ রোগীদের জন্য হাসপাতালে সরকারিভাবে বালিশ ও চাদর সরবরাহ রয়েছে।

ওয়ার্ডের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, এদিন দুপুর ২ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এখানে ৫৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কোন রোগীকে সরকারিভাবে সরবরাহের বালিশ ও চাদর দেয়া হয়নি। বাড়ি থেকে আনা চাদর ও বালিশ ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ি থেকে আনতে না পারলেই রোগীকে খালি মাথায় ধুলার মধ্যে থাকেত হচ্ছে।

শান্তি বিশ্বাসের স্বজন শুকান্ত বিশ্বাস জানান, এখানে রোগীদের অবহেলার চোখে দেখা হচ্ছে। খালি মাথায় ধুলার মধ্যে তার রোগী পড়ে থাকার দৃশ্যটি তাকে পিড়া দিচ্ছে।

তিনি রোগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। রোগীদের চাদর ও বালিশ দেয়া হচ্ছেনা কেনো এই প্রশ্নের উত্তরে এক সেবিকা জানান, সব রোগীকে বালিশ ও চাদর দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওয়ার্ডে কইজন রোগীকে বালিশ ও চাদর দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

একজন বৃদ্ধা রোগী খালি মাথায় ধুলার মধ্যে শুইয়ে আছেন অথচ তাকে চাদর ও বালিশ দিলেন না কেনো প্রশ্ন করা হলে ওই সেবিকা বলেন এটা হতেই পারেনা। রোগীর স্বজনরা তাদের কাছে হয়তো চাদর ও বালিশ না চেয়েই রোগীকে সেখানে রেখেছেন। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত আরেক সেবিকা জানান, রোগীরা বাড়ি খেকে বালিশ ও চাদর না আনলেই তাদের হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়। কিন্তু একাধিক রোগীর স্বজন জানালেন ভিন্ন কথা।

তারা জানান, সেবিকা ও আয়ার কাছে বালিশ ও চাদর চাইলেই বলা হয় এখন ইনচার্জ নেই। বাড়ি থেকে যা এনেছেন তাই ব্যবহার করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের চাদর দেয়া হলেও বালিশ দেয়া হয়না। সেগুলো ওয়ার্ডের স্টোরে মজুদ করে রাখা হয়।

এই বিষয়ে হাসপাতালের স্টোর কিপার সাইফুল ইসলাম জানান, ওয়ার্ড ইনচার্জদের কাছে রোগীদের জন্য সরকারিভাবে সরবরাহকৃত বালিশ ও চাদর বুঝিয়ে দেয়া হয়। হাসপাতােেলর তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাদর ও বালিশ না দিয়ে রোগীকে ধুলার মধ্যে রাখার ঘটনাটি অমানবিক। বিষয়টি নিয়ে তিনি ওয়ার্ড ইনচার্জের সাথে কথা বলবেন।

আরএম/

Comments