বেরিয়ে আসছে খাশোগি হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা; ফাঁসছেন যুবরাজ সালমান

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০১৮

একুশ ডেস্ক, আন্তর্জাতিক: সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যা রহষ্যের লোমহর্ষক বর্ণনা একে একে বেরিয়ে আসছে। জানা যায়, তাকে হত্যার আগে পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিলো। এরপর হত্যা করে তাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। সূত্র : রয়টার্স।

সিএনএন দাবি করছে, এসব ঘটনায় সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। অন্তত তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংস্থাটি জানায়, খাশোগির সম্ভাব্য হত্যার পুরো ঘটনাটিই ওই কর্মকর্তার বেধে দেওয়া ছক অনুসারেই সাজানো ছিল। আর এই ছক বাস্তবায়নে ১৫ জনের যে দলটি সৌদি আরব থেকে ইস্তাম্বুলে উড়াল দেয় তার অন্তত দুজন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। দেশে-বিদেশে একাধিকবার তাদের দেখা গেছে যুবরাজের পাশে। শুধু তা-ই নয়, ১৫ জনের ১১ জনই সৌদি নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য। তিনজন বিন সালমানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ।

ঘটনা ধামাচাপা দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৫ সদস্যের একজনকে দূর্ঘটনার আড়ালে গাড়ি চাপা দিয়ে হয় বলে দাবি করে তুর্কি দৈনিক ‘ইয়ানি শাফাক’।

পত্রিকাটি লিখেছে, সৌদি বিমান বাহিনীর ৩১ বছর বয়সী লেফট্যানেন্ট সা’দ আল বাসতানি সাংবাদিক খাশোগি নিখোঁজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাকে সাজানো সড়ক দুর্ঘটনায় হত্যা করে খাশোগি হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কিছু তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ঘাতক টিমের অন্য ১৪ সদস্যের মুখ চিরতরে বন্ধ রাখতে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পত্রিকাটি মন্তব্য করেছে।

সা’দ আল বাসতানি, ‍যুবরাজ সালমানের সঙ্গে থাকা তার ছবিও প্রকাশিত হয়েছে তুর্কি গণমাধ্যমে

গত ২ অক্টোবর খাশোগি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত নথিপত্র আনার প্রয়োজনে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তিনি আর বেরিয়ে আসেননি। খাশোগি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। তার কলামে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করা হতো।

জামাল খাশোগির এক হত্যাকারীকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা!

যুবরাজ মোহাম্মদ সালমান গত বছরের জুনে ক্ষমতা নেওয়ার পর খাশোগি গ্রেফতার আতঙ্কে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। তুর্কি পুলিশের দাবি, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভিতরে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যা মিশনে অংশ নেয় রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে আসা ১৫ সদস্যের সৌদি স্কোয়াড।

তবে সূত্রগুলোর দাবি, খাশোগি রহস্যের আদ্যোপান্ত জানেন না প্রিন্স বিন সালমান। তাকে অন্ধকারে রেখেই পুরো ঘটনা ঘটানো হয়। এই দলটির মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল খাশোগিকে দেশে ফেরানো। তবে কনস্যুলেটে প্রবেশের পর ভুল জিজ্ঞাসাবাদের জেরে তার মৃত্যু হয়। যদিও সৌদি আরবের বহু কর্মকর্তাই মনে করেন, ৩৩ বছর বয়সী প্রিন্স বিন সালমানের অজ্ঞাতে এত বড় কাণ্ড ঘটে যেতে পারে না। তার অনুমোদন সাপেক্ষেই খুন হন খাশোগি।

গত মঙ্গলবার সিএনএনকে তুরস্কের একটি সূত্র জানায়, ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে দুই সপ্তাহ আগে খাশোগিকে হত্যার পর তার মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে ফেলা হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনেও একই তথ্য উঠে এসেছে। গত সোমবার তুরস্কের কর্মকর্তারা ৯ ঘণ্টা ধরে কনস্যুলেটে অভিযান চালায়। মঙ্গলবারও তল্লাশি অভিযান চালানোর কথা ছিল। হয়নি।

তুর্কি পুলিশের দাবি, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভিতরে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যা মিশনে অংশ নেয় রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে আসা ১৫ সদস্যের সৌদি স্কোয়াড। এই সদস্যের একজন সৌদি ফরেনসিক বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবায়গি।

ওয়াশিংটন পোস্টে আগেই মার্কিন ও তুর্কি একাধিক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে জানিয়েছে, অডিও-ভিডিও রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, খাশোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভিতর হত্যা করা হয়েছে। পরে তাকে কেটে টুকরো করা হয়। তবে মিডল ইস্ট আই ওয়েবসাইটে তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সেখানে খাশোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো চেষ্টা ছিলো না। সৌদি দল গিয়েছিল তাকে হত্যা করতে।

ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, হত্যায় সাত মিনিট সময় লেগেছে। সৌদি ফরেনসিক বিভাগের সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবায়গি যখন খাশোগির দেহ কেটে টুকরো টুকরো করছিলেন ‘তখনো বেঁচে ছিলেন’ খাশোগি। বলা হচ্ছে, হত্যার সময় তুবায়গি গান শুনছিলেন।

এদিকে তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে অন্তত চারজনের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তার মধ্যে মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী মাহের আবদুল আজিজ মুতরেবও রয়েছেন। তিনি একসময় লন্ডনস্থ সৌদি দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুর্কি কর্তৃপক্ষ তাকে এখন খুঁজছে। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজের মাদ্রিদ, প্যারিস ও যুক্তরাষ্ট্র সফরে তোলা ছবিতে মুতরেবকে পাহারারত অবস্থায় দেখা গেছে।

২ অক্টোবর কনস্যুলেটে প্রবেশের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন লেখক, সাংবাদিক জামাল খাশোগি। তুরস্ক বলছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এবং তুরস্কের হাতে খাশোগি হত্যার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

/আরএ

Comments