গৃহহীনদের জন্য ভ্রাম্যমান লন্ড্রি

প্রকাশিত: ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৮

তুহিন খন্দকার

গৃহহীন মানুষদের জন্য একটি ফ্রী ভ্রাম্যমান লন্ড্রি এবং গোসলের ব্যবস্থা সমৃদ্ধ টয়লেটের সেবা নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে যাচ্ছে ‘অরেঞ্জ স্কাই’ নামক একটি অস্ট্রেলিয়ান সংস্থা। যা ইতোমধ্যে ব্যাপক সুনাম অর্জনের সাথে পরিবেশ রক্ষায় অভিনব ও কার্যকরি ভূমিকায় পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অনেকটা অংশজুড়ে গৃহহীন দরিদ্র মানুষের বসবাস। যারা তাদের প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় জীবনযাপন করে বেড়ায়। গায়ে থাকে জীর্ণ ধুলো-বালিমাখা ময়লা কাপড়চোপড়।

এসব মানুষেরা সাধারণত স্টেশন, খোলা ময়দান কিংবা রাতের আঁধারে খালি রাস্তাকে ব্যবহার করে তাদের কার্য সম্পাদনের জন্য। গোসলের জায়গা না পাওয়ায় দিনের পর দিন কাটিয়ে দেয় গোসল না করেই। বাংলাদেশেও যে এমন মানুষ নেই এমনটি বলা যায় না।

‘স্কাই অরেঞ্জ’ এর যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে চার বছর আগে দুই অস্ট্রেলিয়ান তরুণের হাত ধরে। তারা তাদের স্থানীয় মার্কেটের সামনে নোংরা আবর্জনায় বেড়ে উঠা কিছু মানুষদের জন্য একটি ভ্যানে করে অস্থায়ীভাবে একটি ব্যাবস্থা করে দেয়।

তাদের সেই ভ্যানে ছিলো কাপড় ধুয়ার জন্য একটি ওয়াশিং মেশিন এবং গোসলের জন্য একটি পানির ট্যাংক। নির্দিষ্ট সময়ে তারা এটি বহন করে নিয়ে আসতো এসব মানুষদের জন্য। অত:পর দিনশেষে তা একটি জলাশয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলে আসতো। এভাবে তারা পরিবেশ নষ্ট হওয়া থেকে উত্তরণের একটি পন্থার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে।

‘স্কাই অরেঞ্জ’র সহ-প্রতিষ্ঠাতা লুকাস প্যাচেট দ্যা গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, প্রাথমিকভাবে যখন আমরা এটি শুরু করি আমার বন্ধুর সাথে তখন আমাদের ছিলো না পর্যাপ্ত কোন পরিকল্পনা। আমরা এই স্বপ্ন দেখেছিলাম তখন এটি ছিল বিশ্বের প্রথম। আমরা শুধু চেয়েছিলাম তাদের একটি স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা করে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের শহরটিকে পরিচ্ছন্ন রাখতে।

লুকাস  বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত টাকাও ছিলো না। নিজ খরচে আমরা এটি শুরু করি এবং আজ তা আমাদের দেশেরই প্রায় এক লক্ষ গৃহহীন মানুষের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ব দাতা সংস্থাগুলো এগিয়ে আসায় অমরা এখন এই কার্যক্রমকে বাইরের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দিতে পারছি।

প্যাচেট আরো বলেন, কারো কাপড় ধোয়া এবং শুকিয়ে দেয়ার জন্য আমরা একঘন্টা সময় নিচ্ছি এই সময়ের মধ্যে সবাই তাদের গোসল সেরে নিচ্ছে এবং পরিচ্ছন্ন কাপড় পরতে পারছে।

বিশেষ করে মহিলাদের দুর্ভোগ ছিলো বেশি যা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো ছিলো না। আজ সেসব দুখী মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটছে। আর সে হাসিই তাদের সুস্বাস্থ্যের বার্তা দেয় যা তাদের একটি মৌলিক অধিকারও বটে।

বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে এখন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিন সম্বলিত স্কাই অরেঞ্জের এসব ভ্রাম্যমান লন্ড্রির সংখ্যা ২৭ টি। যা জেনারেটর এবং সৌর শক্তি ব্যবহার করে চালনা করা হচ্ছে প্রতিদিন।

গত মাসে নিউ জিল্যান্ডের অকল্যান্ডে একটি ভ্রাম্যমান ভ্যান উন্মোচন করে সংস্থাটি। যা পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

প্রতি রাতে নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম এই শহরে কমপক্ষে ১,০০০ জন লোক রাস্তায় ঘুমাচ্ছে এবং তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য ‘স্কাই অরেঞ্জ’ কাজ করে যাচ্ছে।

তাদের কাজের এই সম্প্রসারণকে স্বাগত জানিয়ে নিউ জিল্যান্ডের হাউজিং অ্যান্ড শহুরে উন্নয়ন মন্ত্রী ফিল টোয়েফোর্ড বলেন, ‘স্কাই অরেঞ্জ’ তাদের পরিকল্পনা ও অভিনব এ সেবার জন্য প্রসংসার দাবি রাখে। তাদের নি:স্বার্থ এ সেবা অব্যহত থাকুক এই কামনা করি।

বিআইজে/

Comments