বাংলাদেশি হিন্দুদের স্বাগত, তবে মুসলিমদের ঠাঁই নেই : বিজেপি

প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৯

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রকাশ করা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। শনিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে প্রকাশিত তালিকায় রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষকে।

এ দিন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার লায়ন্স ক্লাবে দলীয় সাংগঠনিক সভায় অংশ নিয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ আসামের এনআরসি ইস্যুতে নানা বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের স্বাগত, অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের এই ভারতবর্ষে কোনো ঠাঁই নেই।’

রাজ্য বিজেপির এই সভাপতি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে জারি করা হবে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। বর্তমানে যদিও তৃণমূল সরকার বিষয়টির প্রবল বিরোধী। তাছাড়া বিরোধী বাম এবং কংগ্রেস পর্যন্ত এর বিরোধিতা করেছে। যদিও রাজ্যে এনআরসি জারি করতে বিজেপি অটল ভূমিকা পালন করবে।’

পরবর্তীতে দিলীপ ঘোষের করা এই মন্তব্যকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। এ দিন পুলিশের সামনেই রাজ্য বিজেপির সভাপতিকে লক্ষ্য করে ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি এবং কালো পতাকা দেখান তারা।

তৃণমূলের জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, রাজ্য বিজেপির এই নেতা যাবেন সেখানেই তাকে সেখানেই ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হবে। তৃণমূল সমর্থকরা যখন দিলীপ ঘোষকে ঘেরাও করেছেন, তখন বিজেপির নেতা-কর্মীরাও বিপরীত দিকে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে কোনো রকমে পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিশ।

তখন উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘ওরা ওদের কাজ করছে। আমরা আমাদের কাজ করব। বর্তমানে বিজেপির কাছে সব রকমের ভাষা আছে। আমরা চাইলে সঙ্গে সঙ্গেই ওদের কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠাতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। বাজারের মধ্য দিয়ে হাতি গেলে কুকুর চিৎকার করে। তাদের কুকুরের মতো করেই মারা হবে।’

ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, শনিবার প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকার (এনআরসি) মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে অন্তত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ বাঙালিকে। যেখানে আগের তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে। তাছাড়া স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় ৯ কোটি ১১ লাখ লোকের। যদিও এই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের নিয়ে এবার আসাম তো বটেই, গোটা ভারত এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশ পর্যন্ত মোদী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কাছে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকত্ব নেই; এমনকি ভারত ছাড়া আর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই তাদের। এমন অবস্থায় ভারত তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে মানুষগুলো একদমই রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে; যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।

যে কারণে ভারত অনেকটা বাধ্য হয়েই তালিকা থেকে ছিটকে যাওয়াদের নিজ দেশের ভেতরেই বন্দি বানিয়ে রাখবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। যার অংশ হিসেবে আসামে এরই মধ্যে নতুন করে ১০টি বন্দি শিবির নির্মাণের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তাছাড়া অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।

Comments