শীতের পরী ‘জাবি’

প্রকাশিত: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৮
সকালের সূর্যোদয়

আল আমীন, জাবি প্রতিনিধি: ভোরের আলো ফুটলেও পুব আকাশে তখনো সূর্যের দেখা নেই! শীতল আলস্যে সূর্যেরও বুঝি বুঝি ঘুম ভাঙ্গেনি। বিস্তৃত কুয়াশার চাদর তখন প্রকৃতির গায়ে। আপাদমস্তক এ চাদর জড়িয়ে প্রকৃতিও যেন ঘুমন্ত!

প্রকৃতিতে এখন শীতের হাতছানি। কিন্তু তা যেন বোঝবার উপায় নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন যেন ভরা শীতকাল। টকটকে লাল সূর্যটার রঙিন আভা আকাশে মৃদু আলো ছড়িয়েছে এখন। গাছের পাতার আড়ালে মুচকি হাসছে টুকটুকে সূর্যি মামা। কুয়াশার ঘন আবরণ তখন কেটে যেতে শুরু করেছে।

ভোরের সূর্যদোয়ের দৃশ্য

সূর্যের আগমনী বার্তা পেয়ে পাখিরাও জেগে উঠতে শুরু করেছে ! কিচিরমিচির রব উঠেছে চারিদিকে৷ ঘর ছেড়ে খাবারের সন্ধানে বেরুতে শুরু করেছে পাখিদের একেকটি দল। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের বিস্তৃত সবুজ ঘাসে যেন ছোট ছোট হীরক খন্ডের ছড়াছড়ি৷ সূর্যের মৃদু আভায় চিকচিক করছে চারিদিক। শিশিরস্নাত মাঠটিতে হাঁটবেন নাকি কিছুক্ষণ??

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায়;
‘শীতের বনে কোন সে কঠিন আসবে ব’লে
শিউলিগুলো ভয়ে মলিন বনের কোলে
আমলকি ডাল সাজল কাঙাল, খসিয়ে দিল
পল্লব জাল’

শীতের রুক্ষ আর শুষ্ক প্রকৃতি নাকি রঙ-রূপ হীন! অথচ প্রকৃতির প্রাচুর্যতায় ভরপুর এ ক্যাম্পাসটিতে রূপ লাবণ্যের কোন ঘাটতি হয় না কখনোই। শীতে ক্যাম্পাসটির প্রকৃতি ও পরিবেশ সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে।

উত্তরের হিমেল হাওয়া কড়া নাড়ে জানালায়! বাতাসে বাজে পাতা ঝড়ার গান। আকাশে ভেসে বেড়ায় হাজারো পরিযায়ী পাখির গান। অদ্ভুত এক ছন্দময় পরিবেশ তৈরী হয় ক্যাম্পাসের আনাচেকানাচে! শীতের সৌন্দর্য্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয় পরিযায়ী দলের চঞ্চল উড়াউড়ি। লেকের স্বচ্ছ জলে মনের আনন্দে জলকেলিতে মেতে উঠে তারা। সে আনন্দ ছুয়ে যায় প্রতিটি মানব হৃদয়কে। পাখির মতোন উড়বার বাসনা জাগায়। মনকে দুলিয়ে তোলে পাখিদের অবাধ চঞ্চলতা।

লেকের পানিতে ফোটা শাপলা

লেকগুলো এসময় লাল শাপলা দিয়ে ভরে যায়। শাপলার সবুজ পাতায় ভর করে পাখিরা সূর্যস্নান করে তারা। চলে পাখিদের খুনসুটি। দেখা যায় পাখিদের নিখাদ ভালবাসা সে এক অপরূপ দৃশ্য। যা শুধুমাত্র এ ক্যাম্পাসে এবং শীতকালেই দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগরে শীতের সকাল শুরু পাখিদের কলকাকলিতে। ক্লাস -পরীক্ষার তাড়া না থাকলে বিছানায় শুয়ে শুয়েই উপভোগ করা যেত পাখিদের গান! শীতের সকালে কুয়াশার মৃদু চাদর ভেদ করে শিক্ষার্থীরা দলবেধে ক্লাসে ছোটে। আর পাখিরা ছোটে খাবারের সন্ধানে। সবুজ এ ক্যাম্পাসে সূচনা ঘটে একটি কর্মব্যস্ত দিনের।

অলস দুপুরে পাখিরা যখন লেক গুলোতে জলকেলিতে মেতে উঠে। শিক্ষার্থীরা তখন ভীড় জমায় বট তলায়। শীতকালীন খাবারের বাহারি পসরা থেকে সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। আর তা দিয়েই নিজেদের ক্ষুধা নিবারনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শিক্ষার্থীরা৷

দুপুর গড়িয়ে আসে বিকেল। বাতাসে তখন হিমেল হাওয়ার আধিপত্য। শীতের পোশাক গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসের মোড়ে মোড়ে এসময় বেশ কিছু পিঠার দোকান দেখতে পাওয়া যায়। চিতুই, ভাপা, পুলি, সহ হরেক পদের পিঠার গন্ধ ভেসে বেড়ায় তখন ক্যাম্পাসের বাতাসে।

সন্ধার হাতছানি

বিকালের আলো যেন দ্রুতই ফুরিয়ে আসে। তড়িঘড়ি করে সন্ধ্যা নেমে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আকাশে বাতাসে তখন পাখিদের কিচিরমিচির ধ্বনি৷ জানান দেয় এবার ঘরে ফেরার পালা। দ্রুতই ফুরিয়ে যায় এ ক্যাম্পাসে শীতের অপরূপ দিনগুলি!

/এসএস

Comments