বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাতপাখা ও মই প্রতীক বড় ফ্যাক্টর

প্রকাশিত: ৬:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৭, ২০১৮

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাতপাখা ও মই প্রতীক বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। এ দুটি প্রতীক বড় ফ্যাক্টর হওয়ায় এবং নিরপেক্ষ ভোট হলে কে জয়ী হবেন, সে বিষয়ে ধারণা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মেয়র প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুবের হাতপাখা এবং বাসদের প্রার্থী ডা. মনিষা চক্রবর্তীর মই শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বরিশালকে বিএনপির ভোটের ঘাঁটি বলা হলেও এবার সেই ভোটে ভাগ বসাতে পারে হাতপাখা। আর ডা. মনিষা যে ভোট পাবেন, তা আসবে আওয়ামী লীগের ভোট বাক্স থেকে।

এখানে এর আগে যতগুলো সিটি নির্বাচন হয়েছে, তার প্রায় সবকটিতেই প্রার্থী হয়েছিলেন সিপিবির অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। কিন্তু তার প্রার্থিতা নিয়ে কখনোই টেনশনে পড়তে হয়নি আওয়ামী লীগকে। কারণ তার ভোটের সংখ্যা কখনও হাজার ছাড়ায়নি।২০১৩ সালের নির্বাচনে আজাদ ভোট পেয়েছিলেন ৮২৮টি।
এসব নির্বাচনে সিপিবিকে সমর্থন দেয় বাসদ।

কিন্তু এবার বাসদের প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন ডা. মনিষা। ছোট দলের প্রার্থী হলেও কয়েক বছর ধরে নিম্নস্তরের পেশাজীবী মানুষের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন। চলতি বছর ব্যাটারি রিকশা শ্রমিকদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হয়ে তিনি জেলে যান।

সর্বোপরি প্রচার-প্রচারণায় ভিন্নতার কারণে সবার নজরে পড়েছেন তিনি। এ অবস্থায় মনিষা কিছু ভোট পাবেন। আর এ ভোট ক্ষমতাসীন দলের ভোটব্যাংক থেকে কাটবে বলে সবার ধারণা।

এটি আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কেননা ২০০৮ সালে শওকত হোসেন হিরণ মাত্র ৪৫০ ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এখানে সাড়ে চার হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে। যদিও এ বিষয়টি মানতে নারাজ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর।

জাহাঙ্গীর বলেন, একদিকে প্রার্থীর ক্লিন ইমেজ, অন্যদিকে সরকারের উন্নয়নে নৌকার পক্ষে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বরিশালে বাসদের দলীয় ভোটের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ডা. মনিষা নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে পারেন, এটা কল্পনাপ্রসূত ভাবনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি নেতারাও হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুবকে কোনো গুরুত্ব দিতে চান না। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে হাতপাখার কারণে ধানের শীষের বিজয় হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

চরমোনাই পীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর হাতপাখা যে কিছু করতে পারে, তা আগের সব নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটে প্রমাণিত।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রায় ৩০ হাজার ভোট পায় হাতপাখা। এরপর ১০ বছর পেরিয়ে গেছে।

এর মধ্যে বরিশালে সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও রংপুর, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং খুলনা, গাজীপুরসহ প্রায় সবকটি স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। আর এসব জায়গায় তাদের প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের পরিসংখ্যান এখন বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের টেনশনের কারণ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী প্রায় ১৪ হাজার ভোট পান। এছাড়া রংপুরে ২৪ হাজার, খুলনায় প্রায় ১৫ হাজার, গাজীপুরে প্রায় ২৭ হাজার ভোট পায়। উল্লিখিত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরই ছিল হাতপাখার অবস্থান। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের সিটি নির্বাচনেও তৃতীয় অবস্থানে ছিল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

এই দলের সহযোগী সংগঠন ইসলামী কৃষক মজুর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, রংপুর, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো কারচুপির অভিযোগ উঠেনি। এই তিন জায়গায় তৃতীয় অবস্থান আমাদের। অন্য জায়গাগুলোয়ও একই অবস্থান ধরে রেখেছি আমরা। আর বরিশাল তো আমাদের ঘাঁটি। চরমোনাইর দরবার শরিফ এখানে। বরিশাল সিটিতে আমাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার ভোট রয়েছে।

এছাড়া প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব হেফাজতে ইসলামের বিভাগীয় সমন্বয়কারী এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সভাপতি। এ দুই পক্ষেরও অন্তত ৩০ হাজার ভোট আছে।

এই ৮০ হাজার ভোটের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ভোট যোগ হলে ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হব।

২০০৩ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে বড় জয় পায় বিএনপি। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১৬ হাজার ভোটে পরাজিত হন। এসব সমীকরণে হাতপাখা ২০ হাজার ভোট পেলে বিএনপির জয়লাভ করা মুশকিল হয়ে পড়বে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে বিএনপির ভোট কখনোই খুব একটা বেশি ছিল না। তারা এগিয়ে যেত মূলত এন্টি আওয়ামী লীগ ভোটে। ভোটব্যাংক বলে তাদের যে দাবি, সেটাও ওই এন্টি আওয়ামী লীগেরই ভোট। কিন্তু এবার সেই ভোট ভাগ হচ্ছে। এবার আর সব এন্টি আওয়ামী লীগের ভোট পাচ্ছে না বিএনপি। ফলে তাদের জয়লাভ করার আশা খুব একটা নেই।

বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন বলেন, হাতপাখা আমাদের কিছু ভোট নষ্ট করবে, এটা ঠিক। তবে তাতে জয়লাভে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না।

Comments