‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই’

প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৯

মঈনুদ্দিন খান তানভীর

ভাই প্রশ্ন লাগবে,প্রশ্ন?
অন্যদের দিচ্ছি প্রতি পিছ হাজার টাকা হারে। শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে। বিফলে মূল্য ফিরত। আপনার জন্য নয়শ’তেই কাফি।

এভাবে আত্মবিশ্বাসের সাথে রুমে রুমে প্রশ্ন ছড়িয়ে যাচ্ছিল পরিক্ষার্থীদের ‘পরম শুভাকাঙ্ক্ষী’ ছেলেটি। ছেলেরা উত্তম মাধ্যম দিয়ে প্রতিদান দেবার কথা ভাবছিল বটে। কিন্তু কী লাভ তাতে!
এরকম শুভাকাঙ্ক্ষী সাধু সন্তুরা যে ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে!

ঘটনাটি কোনো জাগতিক শিক্ষাকেন্দ্রের নয়।নৈতিক শিক্ষার অপ্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রস্থল কওমী বিদ্যাপীঠেরই সাম্প্রতিক নমুনা। ঘটেছে রাজধানীর সেরা সেরা সব প্রতিষ্ঠানে।

নির্ঘুম সফর শেষে ভোরে মাদ্রাসায় পৌঁছতেই এক আলিম অভিভাবকের প্রশ্ন, আপনিই কি হিদায়া ৩য় পর্ব পড়িয়েছেন এবার?
অপ্রস্তুত হয়ে বললাম-জী, কোন সমস্যা?
বললেন,আপনার সাবজেক্টের পরীক্ষা হচ্ছে না, জানেন তো?
বলেন কী! ঘটনা কি?

দাওরা ও মিশকাতের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গেছে পরীক্ষার আগেই। জরুরী ভিত্তিতে বোর্ডের কর্তাব্যক্তিরা বৈঠকে বসেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মিশকাতের কেবল বাকী পরীক্ষাগুলো স্থগিত। দাওরায়ে হাদীসের সামনেরগুলো স্থগিত। বাতিল হয়েছে আগেরগুলো ও।

অবাক নয়;হতবাক হয়ে গেলাম সংবাদটি শুনে। শেষ পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের বিষাক্ত ছোঁবল থেকে রেহাই পেল না আমাদের পবিত্র অঙ্গনটিও। এ যে আঁতকে উঠার মতো খবর।

দেশের চলমান প্রেক্ষাপট মাথায় রাখলে বিষয়টা সিম্পল। একেবারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পিএসসি জেএসসি জিডিসি এসএসসি এইচএসসি থেকে নিয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পর্যন্ত সরকারী বেসরকারি এমন কোন ধাপ নেই, যেখানে এ আপদ আপতিত হয়নি। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ছাত্র শিক্ষক গ্রেফতার তো ওখানকার নৈমিত্তিক ব্যাপার।

কিন্তু মনে রাখতে হবে,আমাদের অঙ্গন আর দশটি সাধারণ অঙ্গনের মতো নয়।নৈতিকতাসম্মৃদ্ধ আদর্শ মানুষ গড়ার কারখানা বলে সর্বজন সমাদৃত যে প্রতিষ্ঠান-তা কওমী মাদ্রাসা। নৈতিক ও আদর্শিক মূল্যবোধের উপরই রচিত হয় এর মৌল-ভিত। তাকওয়া, সততা, সত্যবাদিতা ও আমানতদারিতাসহ মানবিক গুণাবলী অর্জনে গুরুত্বারোপ যার অনন্য বৈশিষ্ট্য। তালীম ও তারবিয়াতের সমন্বিত প্রয়াসই যে সৌন্দর্যের মূল রহস্য।

অনিবার্য ফলস্বরূপ, মাদ্রাসা শিক্ষায় এ উদাহরণ ছিল নজীরবিহীন। চলমান শিক্ষাধারার ১৬৩ বছরের ইতিহাসে এমন ইতিহাস বিরল। বেফাকের গৌরবোজ্জ্বল পথচলার চার দশকে ব্যাপকভাবে আমাদের এমন লজ্জা আসেনি কখনো।

অথচ আজ এখানে এমন অনৈতিকতার নির্লজ্জ থাবা! যুগযুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের গায়ে কলঙ্ক-তিলক। এ অসাধুতা রুখতে হবে। অঙ্কুরে বিনাশ ঘটেনি।তবে সময় পেরিয়ে যায়নি। মূল থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে নিতে হবে আগামীর শপথ।

সে হিসেবে ছাত্রদের প্রতি যথার্থ সহমর্মিতা প্রদর্শন করেই বলছি,বেফাক ও হাইআ বোর্ড এর চলমান সিদ্ধান্তের সমর্থন করছি আমি। কতৃপক্ষ সময়ের সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই মনে করি। তবে পদক্ষেপ শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। অবিলম্বে নেপথ্য নায়কদের চিহ্নিত করতে হবে। আইনের মাধ্যমে দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

হাজারো ছাত্র যে সীমাহীন ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। (জেনারেল বোর্ডগুলোর মতো একাধিক প্রশ্নের ব্যবস্থা রাখলে হয়তো এমন ভুগান্তি হতো না। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া সহজ হতো) অভিযুক্ত রাঘববোয়ালদের গ্রেফতারের মাধ্যমে তাদের সবরের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। না হয় দোষ করবে একদল। বলির পাঠা হবে অপরদল। জুলুমের এ ধারা চলতেই থাকবে। ইঁদুর তাড়াতে না পারলে রুটিন পাল্টানোই হবে সার। দুদিন পর আবার ঘটবে। আবার ঘটবে। ঘটতেই থাকবে।

তাই আপাতত কঠোর হবার বিকল্প নেই। যতবড় রথি মহারথিই হোন, খুঁজে বের করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এতবড় খেয়ানতের সাথে জড়িত হয়ে দায়িত্বে থাকার নৈতিক অধিকার তারা হারিয়েছেন ইতোমধ্যেই।

তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে একটি আওয়াজে জোর তুলি। তাদের শাস্তি চাই।যাদের কারণে আজ যুগযুগ ধরে চলে আসা ঐতিহ্যের গায়ে কলঙ্ক-তিলক।তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

/আরএ

Comments