বিশ্ব পর্যটন দিবস

দেশের পর্যটন খাত হতে পারে ডলার সংকট এর সমাধান

প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩

মহিউদ্দিন আহমেদ
সমাজকর্মী ও সংগঠক

আজ বিশ্ব পর্যটন দিবস। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের অধীনস্থ বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সকল সদস্য দেশে এটি পালন করা হয়। অন্যান্য  দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও সরকারিভাবে বাংলাদেশ সরকারের পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটন দিবস পালন করে। এ ছাড়া বিভিন্ন হোটেল-মোটেল, রেস্তোরা, পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, সংগঠন-সংস্থা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করছে।

ইতোমধ্যে সরকার পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবুজ সুন্দর মাতৃভূমি প্রকৃতির রূপে সমৃদ্ধ। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, প্রাচীন দর্শনীয় স্থাপনা; এমনকি ভারতের মেঘালয়ের সীমান্ত ঘেষা শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা বাংলাদেশের সবচাইতে বড় পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে হতে পারে পর্যটনের নতুন দুয়ার। কিন্তু আমাদের দেশের পর্যটনকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার এবং প্রসার না করার ফলে বিদেশী অতিথিরা বাংলাদেশ পর্যটন কেন্দ্রগুলো দর্শনের জন্য তেমনভাবে আসছেন না। উল্টো বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ভারত, শ্রীলংকা নেপাল ও ভুটানে এমনকি ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ করছে। যেখানে পর্যটন থেকে আমাদের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব সেখানে আমরাই বিদেশ গিয়ে আমাদের অর্থ উড়িয়ে দিচ্ছি।

আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায় পর্যটনের জন্য দর্শনীয় কোনো স্থান না থাকলেও হাজার হাজার বাংলাদেশি কলকাতার নিউমার্কেটে যাচ্ছে। সেখানে কেবলমাত্র চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও পর্যটকদের আতিথিয়তায় আকৃষ্ট করছে বাংলাদেশিদের।

বিশ্বের অনেক দেশ যেমন শ্রীলংকা, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ কৃত্রিম স্থাপনা তৈরি করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। অথচ প্রকৃতি আমাদের দুহাত ভরে দিয়েছে- যা আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের বিদেশে দূতাবাসগুলি পর্যটনকে আকৃষ্ট করার জন্য খুব একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে না। পর্যটন কর্পোরেশনের তেমন প্রচারণা না থাকায় বিপুল সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারছে না।

আমার জন্মভূমি নিজ জেলা শেরপুর। এখানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো খাসিয়া পর্বতমালার একটি অংশ রয়েছে। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী,ও শ্রীবরদী উপজেলা। রাজধানী ঢাকা থেকে শেরপুর জেলার দূরত্ব ১৭৯.৭ কিলোমিটার। আর শেরপুর সদর থেকে এই তিন উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রীয় দূরত্ব ৩০ থেকে ৩৩ কিলোমিটার এর মধ্যে।

এখানে রয়েছে গজনি অবকাশ, লাউচাপরা এবং কর্ণজোড়া প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ভূমি। বাংলাদেশের সবচাইতে বড় পাহাড় এটি। শেরপুর সদর থেকে যাতায়াতের জন্য রয়েছে চমকপ্রদ নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গারো পাহাড়ের উচ্চতা ৪ হাজার ৬৪২ ফুট বা ১ হাজার ৪০০মিটার উচ্চতা। এখানে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী গারো এবং কয়েকটি প্রজাতির উপজাতি। গারো পাহাড় দর্শনীয় স্থান হলেও এর প্রচার এবং প্রসার নেই। উল্টো প্রচার করা হয় এখানে বন্য হাতির আক্রমণ এবং ও বিপজ্জনক স্থান হিসেবে।

হ্যাঁ, এ কথা ঠিক ভারত ভূখণ্ড থেকে প্রায় সময়ই হাতির পাল খাদ্যের খোঁজে বাংলাদেশের জনবসতিতে আক্রমণ করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবেই যদি এখানে ২০০-৩০০ হাতির অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয় তাহলে এই হাতি দেখতে দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক আসতে পারে।

এই তিনটি উপজেলায় দর্শনের স্থানে এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে বা পর্যটন কর্পোরেশন থেকে কোনো হোটেল রেস্তোরা গড়ে তোলা হয়নি। থাকার জন্য কোনো ভালো মানের তিন তারকা বা পাঁচ তারকা হোটেলে চাহিদা থাকলেও এখনো নির্মাণ করা হয়নি।

একমাত্র বেসরকারি উদ্যোগে জিহান অবসর কেন্দ্র অর্থাৎ মরহুম ইদ্রিস মিয়ার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল; তাও লিজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় সেই স্থাপনা এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে রয়েছে।

আমরা শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেরপুর জেলাকে পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণার দাবি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি দেয়ার পাশাপাশি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রম করা করছি।

রাংটিয়া এলাকায় সরকারিভাবে কিছু স্থাপনা এবং সড়ক নির্মাণের জন্য সরকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এই জেলাকে যদি পর্যটনের জন্য সকল ব্যবস্থা সরকারি বেসরকারিভাবে নেওয়া হয় তাহলে এই জেলার পর্যটন এবং বিনোদন থেকে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।

তাছাড়া সরকারকে ভেবে দেখা উচিত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যারা পর্যটন বা বিনোদনের জন্য যাচ্ছে তাদের চাহিদা কী কেনই বা যাচ্ছে? একজন পর্যটকের চাহিদা এবং প্রত্যাশা সেইসাথে তার নিজের নিরাপত্তা এবং সকল সুযোগ সুবিধা আমরা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের অন্যতম পর্যটক দেশ। এবং আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট সেটি ভুল অংশে লাঘব করা সম্ভব।

বিদেশে পর্যটকদের কাছ থেকে পাশাপাশি দেশীয় পর্যটকদের যদি দেশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে অবারিত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা যায় তাহলে তাদেরকে বিদেশে না গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে আটকে রাখা সম্ভব।

ফলে একদিকে বাঁচবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা।  অন্যদিকে আয়ও বাড়বে। সমৃদ্ধ হবে আমাদের দেশের অর্থনীতি। রাজধানী থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য এখন পর্যন্ত ভালো মানসম্পন্ন সড়ক পথ বা রেলপথ কোনোটি গড়ে তোলা হয়নি। নেই কোনো বিমানবন্দর, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন উঠে। তাই আমরাও চাই বাংলাদেশ সত্যিকারের প্রকৃতি সমৃদ্ধ এবং পর্যটন সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে উন্নীত হোক।

লেখক : আহ্বায়ক, শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ।

Comments