হঠাৎ ঠাণ্ডা থেকে বড় ঝুঁকি নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১১:২৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৮ স্বাস্থ্য ডেস্ক: কয়দিন থেকে হঠাৎ করেই বেশ মাথাব্যথা করছে সৌমিকের। একপাশের ঘাড় আর মাথা এমন ব্যথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে পুরো পাশটাই ব্যথায় জমাট বেঁধে আছে। প্যারাসিটামল, পেইনকিলার খেয়েও ব্যথা কমছে না। এই ব্যথায় না হচ্ছে ভালো ঘুম, না হচ্ছে কোনো কাজ। শেষে না পেরে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হলো। চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে জানালেন, হঠাৎ ঠাণ্ডা থেকেই তাঁর এমন সমস্যা। সৌমিকের প্রশ্ন, ঠাণ্ডা লেগেও মাথাব্যথা হতে পারে? হতে পারে। শুধু মাথাব্যথা নয়, অন্য আরও অনেক রোগ হতে পারে। আমরা কেবল জানি ঠাণ্ডা থেকে সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট হয়। কিন্তু অনেক বড় ধরনের রোগও হঠাৎ করে আক্রমণ করতে পারে আপনাকে। শুরুতেই বলি মাইগ্রেন প্রসঙ্গে। এই সমস্যাটি অনেকেরই আছে। বিভিন্ন কারণে এই রোগটি হয়। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা গরমের সমস্যা থেকেও মাইগ্রেন হতে পারে। মাথায় ঠাণ্ডা বসলে বা খোলা কান দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ঢুকলে মাথায় তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথা দীর্ঘদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তাই মাথায় কখনো ঠাণ্ডা লাগতে দেবেন না। মাফলার, টুপি বা হালকা চাদর পরে নেবেন। ব্রংকাইটিস কাশি দীর্ঘমেয়াদি হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, ফলে ধীরে ধীরে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। কাশি যত বেশিদিন থাকে, ফুসফুসও ততবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটাই ব্রংকাইটিস। সাধারণত মধ্যবয়স থেকে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। ঠাণ্ডা লাগার পরে তা যদি বসে যায়, সেটা থেকে ব্রংকাইটিসের সমস্যা মাথাচাড়া দেয়। ব্রেন স্ট্রোক ব্রেন স্ট্রোক এখনকার দিনে অন্যতম ভয়াবহ রোগ। কার কখন কীভাবে মাথায় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়, আগে থেকে তা বলা যায়না। হঠাৎ করে ঠাণ্ডা পড়লে বা মাথায় ঠাণ্ডা লাগা থেকে ব্রেন স্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। ঠাণ্ডায় শরীর এবং মাথার রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এ থেকে ব্রেন স্ট্রোকের একটা ভয় থাকেই। তাই শীতের দিনে সাবধান থাকুন, ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলুন। নিউমোনিয়া ঠাণ্ডায় নিউমোনিয়া একটি প্রচলিত রোগ। শিশু এবং বৃদ্ধরা এই রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। শীতের শুরুতে অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের সময়ে এই রোগ বেশি দেখায যায়। তাই আপনার বাড়ির শিশু আর বৃদ্ধদের একটু বেশি সাবধানে রাখবেন অবশ্যই। মেনে চলুন কিছু বিষয়- ১. আশেপাশের ঠাণ্ডায় আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকুন। কাশি কিংবা সর্দি থেকে জীবাণুগুলো বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। আর বারবার আপনার হাত দুটো ধুতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা ছড়ায় পরোক্ষ শারীরিক সংস্পর্শে। অর্থাৎ একজন অসুস্থ ব্যক্তির ঠাণ্ডার জীবাণু নাক ও মুখ থেকে হাতে স্থানান্তরিত হয়। ২. বেশি করে তরল পান করুন। এতে করে আপনার শরীর থেকে জীবাণু চলে যাবে। আবার জীবাণুর কারণে যদি শরীরে পানিস্বল্পতা হয়, সেই সমস্যাও কমে যাবে। এ সময় দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি, ফলের রস কিংবা অন্যান্য ক্যাফিনমুক্ত তরল খাওয়া উচিত। ৩. বিছানা ছেড়ে ব্যায়াম করুন। এই ঠাণ্ডার মৌসুমে সপ্তাহে অন্তত তিনবার মুক্ত বাতাসে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন। যেমন- হাঁটাহাঁটি, সাইকেল চালানো বা বিভিন্ন ছোটখাট ব্যায়াম শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করে। ৪. রান্নাঘরের সামগ্রী জীবাণুমুক্ত রাখুন। রান্নাঘরের বড় শত্রু হলো স্পঞ্জ ও ডিশব্যাগ। এগুলো উষ্ণ ও ভেজা থাকে বলে এখানে ঠাণ্ডার জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করে। এই জীবাণুকে দূর করার ভালো উপায় হলো সপ্তাহে দু’তিনবার ডিশওয়াশার দিয়ে এগুলো পরিষ্কার করুন। ৫. ভিটামিন ই ও সি দুটোই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। এজন্য এসময়ের তাজা শাকসবজি আর ফলমূল বেশি করে খাবেন। আর বেশি ঠাণ্ডা বলে বাড়ির বাইরে যাবেন না, তা নয়। বারান্দা, ছাদে যান। হাঁটাহাঁটি করুন, গায়ে রোদ লাগান বেশি করে। ৬. অ্যালকোহল পরিহার করুন একেবারে। ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই ভাবেন অ্যালকোহল বোধহয় শরীর গরম করবে। কিন্তু মোটেই তা নয়। যাদের উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ডায়বেটিসের সমস্যা আছে, তাদের তো কোনোভাবেই এসময় অ্যালকোহলের নাম নেওয়া উচিৎ নয়। ৭. প্রতি রাতে ভালো করে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আমাদের অনেকেরই ঘুম নিয়ে সমস্যা রয়েছে। রাতে ভালোভাবে ঘুমালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ কোষগুলোর ক্ষমতা বাড়ে। এতে করে শরীরের জীবাণুগুলো নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। আবার মস্তিস্ক সচল থাকবে, স্ট্রোক বা মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা যাবে না। ৮. গলাব্যথা হলে আরামদায়ক ব্যবস্থা নিন। কারণ এই গলাব্যথা থেকে মামস, টনসিল সৃষ্টি হতে পারে। তাই ঠাণ্ডা পানীয় থেকে দূরে থাকুন। লবণ-গরম পানি দিয়ে গড়গড়া দিতে পারেন। আদা চা ও মধু ভালো কাজ করে। তুলসির রসও সববয়সীদের জন্য উপকারী। Comments SHARES স্বাস্থ্য বিষয়: হঠাৎ ঠাণ্ডা থেকে বড় ঝুঁকি