প্রাণসহ ৫ কোম্পানির দুধে অ্যান্টিবায়োটিক: জেনে নিন ক্ষতিকর দিক

প্রকাশিত: ১১:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৯

প্রাণসহ নামিদামি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে মানবচিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের অস্তিত্ব পাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে আলোচনা সমালোচনা। গবেষণা নিয়ে চলছে বিতর্কও। তবে এই বিতর্কের মধ্যেই দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও নামিদামি এসব কোম্পানির দুধে মিলল অ্যান্টিবায়োটিক।

তাও আবার নতুন ১০ টি নমুনার ১০ টিতেই পাওয়া গেছে অ্যান্টিবায়োটিক। এমনকি যেখানে প্রথম দফায় পাওয়া গিয়েছিল ৩ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। সেখানে এবার পাওয়া গেছে ৪ টি। অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হল, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, এনরোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন এবং লিভোফ্লক্সাসিন। এর মধ্যে আগের পরীক্ষায় অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ও এনরোফ্লক্সাসিন ছিল না।

প্রাণসহ নামিদামি কোম্পানির দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। অন্যদিকে জনসাধারণের মনে এখন প্রশ্ন অ্যান্টিবায়োটিক মিশ্রিত দুধ খেলে কি হয়? আর দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আসেই বা কিভাবে?

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রির্সাচ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক ও এই গবেষণার টিমের প্রধান অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, মানুষ ও পশুর জন্য ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণ আলাদা। গরুকে মানুষের এন্টিবায়োটিক দিলে, দুধ ও মাংসের মাধ্যমে তা আবার মানুষের শরীরেই প্রবেশ করে। যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর বিষয়। পরীক্ষায় পাস্তুরিত দুধের নমুনার সবগুলোতেই মানব চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলো যদি আমরা দুধে মাধ্যমে সেবন করি। তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো স্বয়ংক্রিভাবে মানব শরীরে তার অস্তিত্ব গেড়ে বসবে। এতে যখন এই সংক্রান্ত অসুখ দেখা দেবে তখন ওই অ্যান্টিবায়োটিক গুলো আর কাজ করবে না। সাধারণত গরু বা অন্য কোন প্রাণির দ্রুত রোগ সারানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো হয়। সেটা যদি দুধ দেওয়া গাভীকে খাওয়ানো হয়, তখনই দুধে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া যায়।

এখন দেখা যাক, প্রাণ, আড়ংসহ নামিদামি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে পাওয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলো কোন কোন রোগে ব্যবহার করা হয়। কেনো সেগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

সিপ্রোফ্লক্সাসিন: এটি একটি অ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এই অ্যান্টিবায়োটিক ফ্লুরোকুইনোলন গ্রুপের ওষুধ। ওষুধটি ত্বক ফুসফুস, হাড়, অস্থিসন্ধির ইনফেকশনে ভালো কাজ করে। এছাড়া সিগেলা ও জেজুনি ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনে বহুল ব্যবহৃত হয়। টাইফয়েড জ্বর ও খাদ্যে বিষক্রিয়াও খুব ভালো কাজ করে এটি। তবে যদি এটি দুধের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে পরবর্তীতে মানব শরীরে সিপ্রোফ্লক্সাসিন আর কাজ করবে না।

অক্সিটেট্রাসাইক্লিন: অ্যাক্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসাবে কাজ করে । শরীরের ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের কারণে এটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। বুকে এবং মুখে ঘা হলে বা সংক্রমণ দেখা দিলে সাধারণত চিকিৎসক এই অ্যান্টিবায়োটিকের সুপারিশ করে থাকেন।

এনরোফ্লক্সাসিন: লিম্ফয়েড লিউকোসিস টিউমার সৃষ্টিকারী ভাইরাস রোগ। এতে লিভার বা যকৃত বড় হয়ে যায়। এই রোগ যখন গরুর ক্ষেত্রেও দেখা দেয় তখন পশু চিকিৎসক এনরোফ্লক্সাসিন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

লিভোফ্লক্সাসিন: বিভিন্ন জীবাণু সংক্রামণ যেমন: সাইনুসাইটিস, নিউমোনিয়া, মূত্রনালি, প্রোস্টেট ও পাকস্থলীর সংক্রমণ এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এই অ্যান্টিবায়োটিক। দুধের মধ্য দিয়ে এ অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে প্রবেশ করলে পরবর্তীতে এসব রোগে লিভোফ্লক্সাসিন আর কাজ করবে না।

এদিকে মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. ফারুক হোসেন বলেন, এন্টিবায়োটিক অতিরিক্ত সেবন করা ঠিক নয়। এন্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ঠান্ডা বা ভাইরাসজনিত রোগে কোনো কাজ করে না। যদি ভাইরাসজনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়, তবে বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা চলতে থাকলে অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার যথার্থ না হলে এমন একটা সময় আসবে যখন ব্যাকটেরিয়াকে মারা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থাকে ব্যাকটেরিয়াল রেজিসট্যান্স বা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বলা হয়। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বা অকার্যকারিতার জন্য অনেক রোগের চিকিৎসা সফলভাবে করা সম্ভব হয় না। চিকিৎসার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বা অকার্যকারিতা একটি বড় হুমকি।

Comments