আলট্রাসনোগ্রাম করে জন্মের আগে গর্ভের সন্তানের পরিচয় জানা যাবে না

প্রকাশিত: ১১:০৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪

জন্মের আগে গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে তা আর জানা যাবে না। আলট্রাসনোগ্রাম করলে সাধারণত মাতৃগর্ভের সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় মেডিকেল রিপোর্টে উঠে আসে। ফলে বাবা-মা ও স্বজনরা সন্তান জন্মের আগেই জানতে পারেন অনাগত সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন নীতিমালার আলোকে এখন থেকে আর এই তথ্য জানা যাবে না।

আলট্রাসনোগ্রাম করলেও সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবেন না চিকিৎসক ও হাসপাতালা-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

একটি রুলের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে নতুন নীতিমালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এমন নির্দেশনার কথা জানিয়েছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার পরিচালক ডা. তাহমিনা সুলতানা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেন।

এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি একটি রিটের প্রেক্ষিতে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ কেন অবৈধ নয় জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আলট্রাসনো বা যেকোনো ডাক্তারি পরীক্ষার পর গর্ভের অনাগত সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় গোপন রাখতে হবে। চিকিৎসক, হাসপাতাল ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে এই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।

তবে হাইকোর্টের রায়ের পর বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। মঙ্গলবার এ বিষয়ে রায়ের শুনানি হবে। যদিও বিদ্যমান আইনেও এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

অনেক সময় গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে সেটা আগে থেকে জেনে যাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের পারিবারিক-সামাজিক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। সে কারণে হাইকোর্টে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট আবেদন করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

এ বিষয়ে আইনজীবী ইশরাত হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশে এখনো বেশির ভাগ মানুষের ছেলে সন্তানই কাম্য। কারণ তারা মনে করেন, ছেলেরা বংশের ধারক, তারা আয় করে, বেশি শক্তিশালি। এমন কি অনেক মহিলাও মনে করে ছেলে সন্তান তাদের ভবিষ্যতের সুরক্ষা দেবে। এ অবস্থায় যদি পরীক্ষার মাধ্যমে পেটে থাকা সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় জানা যায় এবং তা মা-বাবার কাঙ্ক্ষিত না হলে গর্ভবতী মায়ের শারিরীক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে মা যদি হতাশায় ভোগে তবে বাচ্চার মস্তিক গঠন /বিকাশ ঠিকভাবে হয় না।

তিনি বলেন, চীন-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেটে থাকা সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেটের শিশুদের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধ হওয়া জরুরি।

অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান আরও বলেন, গর্ভবতী মা ও শিশুর কল্যাণের জন্য, বা অনাগত সন্তানের সুস্থতা জানতে তারা যেকোনো পরীক্ষা করতেই পারেন। কিন্তু শুধু পেটে থাকা সন্তান ছেলে না মেয়ে তা জানার উদ্দেশ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা বা ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টে লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

প্রসঙ্গত, মাতৃগর্ভের সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা সম্পর্কে ইতোপূর্বেই আইনে নিষেধ করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবারই এটি তাদের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করল।

Comments