চিকিৎসা সেবায় জননন্দিত ডা. নিকুঞ্জ বিহারী

চিকিৎসা সেবায় জননন্দিত ডা. নিকুঞ্জ বিহারী

প্রকাশিত: ৪:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২৩

বিল্লাল হোসেন, যশোর
যশোরের বাঘারপাড়া-অভয়নগর-বসুন্দিয়ার মানুষের জন্য সেবা ফ্রি। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে বড় অক্ষরে লেখা এমন সাইনবোর্ড দেখা মেলে বেসরকারি কিংস হাসপাতালে। জন্ম নেওয়া জনপদের মানুষের ফ্রি চিকিৎসা দিতে যশোরের বিশিষ্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার নিয়েছেন এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
শুধু কি তাই; রোগীদের যাতে টাকা খরচ করে শহরে আসতে না হয় এজন্য তিনি ছুটে যান গ্রামে। সপ্তাহে একদিন করেন ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। দেন ফ্রি ওষুধও। বছরের পর বছর ধরে এমন সেবা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। এজন্য একজন ডাক্তার থেকে হয়ে উঠেছেন প্রিয় ‘নিকুঞ্জ দাদা’। তার মতো একজনকে আরো কাছে পেতে চায় নিজ এলাকার মানুষ। চায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে পাশে পেতে। এজন্য সংসদ সদস্য প্রার্থী করতে জোর চেষ্টা তাদের।
ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার বাঘারপাড়া উপজেলার বাসিন্দা। এই এলাকাটি যশোর-৪ সংসদীয় আসনের মধ্যে। তিনি যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান থেকে অবসরে গেছেন। এরআগে নড়াইল সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ, ডাক্তারি জীবনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ), আর এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। সরকারি চাকরি করলেও সব সময় নিজ এলাকায় গেছেন। মাটি-মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন। তাই তো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওই জনপদের মানুষ তাকে ভোটের মাঠে দেখতে চাইছেন।
অনেকেই ভাবতে পারেন ভোটের লক্ষ্য থেকেই হয়ত তিনি নজিরবিহীন ফ্রি চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু তার এ সেবা কার্যক্রম নির্বাচনী এলাকার বাইরে গোটা জেলায়। ফ্রি সেবা-ফ্রি অপারেশনের গল্প শোনা যায় সবখানেই।
সেই কথাই বলেছেন যশোর সদরের দোগাছিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, তার স্ত্রী লিপিকা আক্তার ‘মোলার প্রেগনেন্সি থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত’ হন। চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা অথবা ভারতে নিতে পরামর্শ দেন। ঠিক এসময় তিনি ছুটে যান ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদারের কাছে। মানবতার ডাক্তার নিকুঞ্জ বিহারী লিপিকা আক্তারকে অপারেশন করেছেন। একটি পয়সাও নেননি। মিজানুর আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, এ চিকিৎসা নিতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ। আমি গরীব শুনে ডা. নিকুঞ্জ বিহারী ফ্রি সেবা দিয়েছেন। এক টাকাও নেননি। পৃথিবীর কোন কিছুর বিনিময়ে এই ঋণ শোধ হওয়ার নয়।
ফ্রি সেবার প্রশংসার পাশাপাশি জেলা শহরে চিকিৎসক হিসেবে ডা. নিকুঞ্জ বিহারীর খ্যাতি রয়েছে আরো বেশি। সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়া অস্ত্রোপচার করে সফলতার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এ ধরনের রোগী অপারেশনে অন্তত ২০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সেখানে বিকল্প পদ্ধতিতে রক্তপাত ছাড়াই অপারেশন করে দিচ্ছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রথম তিনিই একমাত্র অস্ত্রোপচার করেন। যশোর শহরের নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়ার টনি মাহমুদ বলেন, তার স্ত্রী মনিরা খাতুন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। সেন্ট্রাল প্লাসেন্টা প্রিভিয়ায় আক্রান্ত তার স্ত্রীকে নতুন জীবন দিয়েছেন ডাক্তার নিকুঞ্জ দাদা।
এছাড়া জন্মগত দুটি জরায়ুর একটি ব্লকড জরায়ু অস্ত্রোপচারে সাফল্য অর্জন করে চমক দেখিয়েছেন মানবতার ডাক্তার নিকুঞ্জ গোলদার। তার কাছে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন পেয়েছেন নড়াইল পৌরসভার ভওয়াখালী এলাকার আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম। খুলনা-ঢাকার অনেক চিকিৎসক দেখালেও সমস্যার সমাধান পাননি। দেড় বছরের বেশি সময় যন্ত্রনা ভোগ করে নাজমা বেগম এখন সুস্থ।
এছাড়া নড়াইল সদর উপজেলার বেনহাটি গ্রামের আনন্দ বিশ্বাসের স্ত্রী বিভাবতী, যশোর পুলিশ লাইন এলাকার স্বপন মিয়ার স্ত্রী রুমানা বেগম, সদর উপজেলার কিসমত নওয়াপাড়ার এক কিশোরী, শার্শার বারপোতা গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, চুয়াডাঙ্গা সদরের মোস্তজাপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের স্ত্রী সোনালী খাতুন, ঝিনাইদহের শৈলকুপার বারুইহুদা গ্রামের আব্দুস সোবহানের স্ত্রী আমেনা খাতুনসহ অনেক রোগীর জটিল অস্ত্রোপচারে মুখে হাসি ফুটিয়েছেন ডা. নিকুঞ্জ বিহারী।
২১ জুন যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের মৃত ইকরামুল ইসলামের মেয়ে মিলা ইসলামের জরায়ুতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ১৫ কেজি ওজনের টিউমার বের করেন। এরআগে কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের কিশোরী শিরিনা আক্তার (ছদ্দনাম) দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। সে দুটি জরায়ু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। বয়ঃসন্ধিকালে যন্ত্রণা শুরু হয়। ব্লকড থাকা জরায়ু দিয়ে মাসিক বের হতে না পেরে সীমাহীন যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছিলো। স্বাভাবিক ব্যথা মনে করে যশোর-খুলনা ও ঢাকার চিকিৎসকদের কাছে ছুটেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। পরীক্ষার পর ডা. নিকুঞ্জ বিহারী রোগীর অস্ত্রোপচার করেন। কিশোরীর ভাই জানান, তার বোন এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। এমন অসংখ্য জটিল অপারেশন করে একজন আদর্শবান ডাক্তারের জায়গা দখল করে নিয়েছেন তিনি। মানবসেবী এই চিকৎসককে অনেকে তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাইছেন।
অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদারের ভাষ্যমতে, জনপ্রতিনিধি হওয়ার ইচ্ছা থেকে নয়; বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে যশোরে মানবসেবা করে চলেছি। টাকা নেই বলে কেউ চিকিৎসা নিতে পারবে না এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে হতে পারে না। এজন্য তিনি বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার নামে বছরের পর বছর ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে চলেছেন। বলেন, আমার সেবার মাধ্যমে একজনও যদি বঙ্গবন্ধুর প্রেমে পড়ে। তবেই আমার সেবা স্বার্থক।

Comments