চলুন বাংরেজি পরিহার করি

প্রকাশিত: ১০:২৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯

শাইখ মাহমূদ হাসান

হয়তো আমার এ লেখা কারো কাছে ভাল লাগবে নতুবা কাউকে কষ্ট দিবে। হয়তো কেউ আজকের লেখাটি পড়ে নসীহত গ্রহণ করবে। নতুবা কেউ লেখাটির দিকে চোখ তুলে ফিরেও তাকাবে না। যার মন যা খুশি তা করলেও চিরসত্য কথা হলো আজ অমর ২১শে ফেব্রুয়ারী। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষার এ স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী যুবকদের অনেক সংগ্রাম ও সাধনা করতে হয়েছে। বীরের জাতী ভাঙ্গালী যুবকরা তাদের প্রাণের মাতৃভাষার স্বাধীনতা অর্জন করতে ২১শে ফেব্রুয়ারি নিজেদের জান কুরবান করেছে।

সালাম, রফিক, বরকত ও জব্বার বাংলা ভাষায় স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি রাজপথে তাদের বুকের তাজা রক্ত ডেলে দিয়েছিল বলেই আজ অর্জিত হয়েছে প্রিয় মায়ের ভাষা বংলায় কথা বলার স্বাধীনতা।

মুক্তি পেয়েছে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বদৌলতে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের মায়ের ভাষা বাংলা। যা আজ সকল বাংলাদেশী মানুষের অহংকারের বিষয়। যা বর্তমানে সমস্ত বাঙালীর গর্বের ধন ও অমূল সম্পদ। কিন্তু অত্যন্ত আফসোস হল এই যে, আমাদের বর্তমান সমাজে কিছু মানুষ এমন রয়েছে যারা অপ্রয়োজনে কথায় কথায় নিজের হ্যাডাম প্রকাশ করার জন্য ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করে।

ডিজিটাল যুগের যুবকরা বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। এমনকি বর্তমান সময়ে মাঝেমধ্যে স্কুল-কলেজের একশ্রেণীর ছাত্রদেরকে দেখা যায় যে, তারা কথার মাঝখানে দু’চারটা ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করছে এমন লোকটির সামনে যিনি একদম নিরক্ষর। যারা ইংরেজী ভাষার A,B,C,D অক্ষরগুলি ভাল করে জানেন না তাদের সামনে স্কল পড়ুয়াদের ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করার উদ্দেশ্য কী তা হয়তো আমার মতো অনেকের জানা নেই।

বিশেষত বর্তমান সময়ে অনেক হাফ শিক্ষিত মানুষকে দেখা যায় যে, তারা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করতে একটুও সংকোচ বোধ করে না। অহংকার বশত অন্যের সামনে নিজের জ্ঞান প্রকাশ করা যে মূর্খতা বৈ কিছুই নয়- তা আজকের যুবকরা অনুধাবন করতে অক্ষম বিধায় গ্রামের সহজ- সরল মূর্খ লোকটিকে বোকা বানিয়ে নিজ অন্তরে তারা একটুও ব্যাথা পায় না। নিজ বুকে তারা ভাষাহীন মূর্খ মানুষের আহাজারি অনুভব করে না।

আমি মনে করি দুষ্ট লোকদের এমন আচারন না করলে হয়তো তাদের পেটের ভাত হজম হয় না। মানুষকে মূর্খ না সাঁজাতে পারলে তারা হয়তো রাত্রিতে আরামে ঘুমাতে পারে না। এবং তাদের এমন কাজ বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ কখনো হতে পারে না। তারা যদি বাংলা ভাষার ভালবাসা দাবী করে তবে তা হবে মিথ্যা ও অবান্তর। আসলে যে যতো বড় শিক্ষিত হোক না কেন, যে যত ভাষায় পান্ডিত্ব অর্জন করুক না কেন সবার জন্যই অতি প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করাবস্থায় ইংরেজী একটা শব্দ বলাও স্বদেশীর ভাষার সাথে গাদ্দারী করার নামান্তর।

যে ব্যক্তি নিজের ভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলতে পারে না তার জন্য এদেশে ইংরেজী ভাষায় কথা বলার অধিকার দেওয়া ভাষা শহীদগণের সাথে প্রতারণা করা ছাড়া আর কি হতে পারে। সমাজের যে সব মর্ডান যুবক এ কাজ করে তাদের একটু ভিতরে প্রবেশ করে খুঁজ খবর নিলে দেখা যাবে যে, সঠিক বাংলা পারা তো দূরের কথা তারা ভালভাবে ইংরেজী ভাষাও পারেন না। বরং অর্থ না জেনে দু’চারটা ইংরেজী শব্দ কোনো রকম মুখস্থ করে নিজেকে বন্ধুদের সামনে মহাজ্ঞানী হিসাবে উপস্থাপন করছে।

আর সুকৌশলে এদেশের সাধারন জনগণকে দেশীয় ভাষা থেকে দিনদিন বিমুখ করছে। প্রিয় সাদামাঠা গ্রাম শহরের মানুষগুলিকে বোকা বানিয়ে স্বীয় ভাষা থেকে ভিমুখ করতে চেষ্টা করছে। তবে হ্যাঁ, যেখানে ইংরেজী বলতে হয় কিংবা লিখতে হয় সেখানে অবশ্যই ইংরেজী ভাষা ব্যবহার করতে হবে। দীনের দাওয়াত ইংরেজদের কাছে পৌঁছে দিতে ইংরেজী ভাষা শিখতে হয় তবে সে বিষয়ে পান্ডিত্ব অর্জন করতে হবে। এতে কোন দোষ নেই। এবং এটাকে কেউ খারাপ চোখে দেখবার সুযোগ নেই।

কারন বাংলা ভাষা সবখানে চলে না বিধায় ভাংলা ভাষাই বক্তাকে তখন ক্ষেত্র বিশেষ ইংরেজী বলা ও লেখার অধিকার প্রদান করে। বাংলা ভাষাই তখন ব্যক্তিকে ইংরেজী ভাষায় কথা বলতে স্বাগত জানায়। তাই আসুন, প্রয়োজন ছাড়া বিদেশী ভাষা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকি। এবং নিজের মাতৃভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলতে অভ্যস্ত হই।

লেখক: মুফতি ও নাযেমে দারুল ইকামা, জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলূম খিলগাঁও ঢাকা।

Comments