’শিক্ষা বিষয়ে দেশ থেকে দূর হোক ভীতির গল্পগুলো’

প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক: বশির ইবনে জাফর। রাজধানীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে বর্তমানে স্কলারশিপে মালয়েশিয়ায় সফটওয়্যার প্রকৌশলে অধ্যয়নরত একজন মেধাবী ছাত্র।

তিনি একজন কুরআনের হাফেজ। মাওলানাও অধ্যয়ন করেছেন দেশের সুনামধন্য কউমী মাদরাসায়। ২০১৮ সেশনে ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর পূর্ব কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে স্কুল সম্পাদকের কাজও করেছেন রাজধানীর অসংখ্য স্কুল নিয়ে। শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধায় দলীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে রাজপথে আন্দোলনের সুখ্যাতি তার সহপাঠিদের নিকট সুদৃঢ় ও সুপরিচিত।

শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা নিয়ে তার প্রায়শই ভাবনার প্রকাশ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণার খোরাক যুগায়। গত ৬মার্চ তার ফেসবুকে নিজের উচ্চশিক্ষা পূর্ববর্তী পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে এক পোস্ট করেছেন।

যেখানে দেশের শিক্ষার্থীদের নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও অপরিপক্কতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে তার ওই পোস্টে।

তিনি লিখেন;

‘দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে আসবো শুনে সমাজের মানুষের নানান রকমের ভীতির গল্প শুনতে হতো। “গিয়ে ফেরত এসেছে অমুক তমুক” এটা ছিলো কমন একটা গল্প। বাইরে যাওয়ার কথা যেই শুনতো সেই বলতো।

কেউ কেউ বলতো, দেশে পড়াশোনা করো তারপর বড় বড় ডিগ্রী নিতে না হয় বাইরে যেও। কেউ আবার এও বলতো, বাইরে যায়া দেখুক মজা কতো।

সব গল্পের পেছনে থাকতো ভীতিমিশ্রিত সহানুভূতি, চরম হিংসা কিংবা মূর্খতা। কিন্তু আমি দেখতাম আমার চারপাশে দেশের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, যারা সম্মুখসচেতন তাদের অনেকেই IELTS করতে আসতো লালমাটিয়ার সেন্ট জোনসে। এতো নামীদামী প্রতিষ্ঠানে পড়েও কেন বাইরে যাবার চিন্তা এমন প্রশ্নের জবাবে দেশের চাকরী আর শিক্ষাব্যবস্থার এতো করুণ কিছু গল্প শোনা যেতো যা নিয়ে লেখলে বড়সড় একটা গল্পে বই লেখা যাবে।

তাদের গল্পগুলো ছিলো বাস্তবতার কনক্রিটে তৈরি। আর সেসব গল্প শুনে আমি বিশ্বাস করতাম আল্লাহ আমাকে আমার সবচেয়ে সুন্দর পথটাই দেখাবেন।

কারো গল্পের কোন জবাব দিতাম না। বরং আরো কতোশত গল্প আছে তা জানার জন্য নিজের ইচ্ছার কথাই মানুষকে জানাতাম। তবে হ্যাঁ কেউ কেউ যে আমাকে সাপোর্ট করতো না তা নয়। আমার পরিবার আমার জন্য সবসময়ই পজিটিভ ছিলো এবং প্রেরণার একটা বড় শক্তি ছিলো। এখনো তাই।

আর ইশা ছাত্র আন্দোলনের একজন দায়িত্বশীল হওয়ায় বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলুল করীম মারুফ ভাইয়ের খুব মূল্যবান একটি কথা পূঁজি হিসেবে নিয়েছিলাম যা ছিলো সর্বকালের জন্য প্রেরণার।
তিনি বলেছিলেন, বিপ্লবীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক না কেন তারা তাদের লক্ষ্যপানে এগিয়ে যাবেই।

ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য স্কলারশিপ পেলাম মালয়েশিয়াতে। আল্লাহর ইচ্ছায় চলেও এলাম দ্রুত। এ মাসে প্রথম সেমিস্টার শেষও হয়ে যাচ্ছে। সকল ভীতি, নিন্দা আর হিংসার গল্পগুলোকে পেছনে রেখে অনেক দূরে চলে এলাম।

আমার অসংখ্য ব্যাচমেট প্রায় প্রতিদিনই ফোন দেয় সময় করে অনেক কথাও বলি তাদের সাথে। যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চান্স পেয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে তাদের সবারই কথা -ভাই অনেক ভালো করেছেন গিয়ে।
আসলে ভালো খারাপ আল্লাহর হাতে। তিনি চাইলে যে কারো অবস্থা যেকোন সময় ভালো থেকে খারাপ বানাতে পারেন আর খারাপ থেকে ভালো। তাই শুকরিয়া তাঁরই জানাই প্রতিটি রুকুতে, সিজদায় আর মুনাজাতে।

দোয়া করি অন্তত শিক্ষা বিষয়ে দেশ থেকে ভীতির গল্পগুলো দূর হোক, শিক্ষার্থীরা আসুক জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে দেশ-মহাদেশ পাড়ি দিয়ে অথৈ সমুদ্রে, দূরে-মহাদূরে। সমৃদ্ধ হয়ে ফিরে যাক দেশের সেবায়। কিংবা যেখানেই থাকুক নিজ দেশের জন্য ভালো পথের সন্ধানদাতা হিসেবে কাজ করুক।’

টিকে/

Comments