সরকার নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেশে বাকশাল কায়েমের চক্রান্ত করছে: চরমোনাই পীর

প্রকাশিত: ৭:৩১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে দেশে বাকশাল কায়েমের চক্রান্ত করছে। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশকে পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করছে।

তিনি বলেন, দেশ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মানুষের জানমাল, ইজ্জত-আব্রুর নিরাপত্তা নেই। আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদক সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে ঢুকে পড়েছে। সামাজিক অবক্ষয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় একটি দেশ চলতে পারে না। এর আশু সমাধান প্রয়োজন।

আজ শুক্রবার বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে সরকার জাতির সাথে যে প্রতারণা করেছে, তা বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, পেট্্েরাবাংলা ও তিতাস কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে আগামী ১০ বছরেও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে না। কিন্তু সরকার দুর্নীতি ও সিস্টেম লস বন্ধ না করে এর দায় জনগণের উপর চাপানোর চক্রান্ত করছে।

ওলামায়ে কেরামের ওয়াজ নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে ওয়াজ মাহফিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ওয়ায়েজিনদের ওপর করারোপের সিদ্ধান্ত সরকারের ইসলাম বিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। ইসলাম বিরোধীদের চক্রান্তে পা দিয়ে আলেমদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে সরকারের জন্য বুমেরাং হতে পারে এবং সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানবতার সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং বাসযোগ্য নগর গড়ার দাবিতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল করীম মারূফ। আরো বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ও আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন, আলহাজ্ব আব্দুল আউয়াল, ডা. শহিদুল ইসলাম, নুরুজ্জামান সরকার প্রমুখ।

সম্মেলনে ১০ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবাবলি হলো: গত ৩০ ডিসেম্বরের কথিত প্রহসনের নির্বাচনে যেহেতু দেশের জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি তাই নির্বেচনটি বাতিল করে দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পূণরায় নির্বাচন দেয়ার দাবী। কাদিয়ানিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করে ইসলামী সকল পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। নৈতিক অবক্ষয় রোধ ও সামাজিক অস্থিরতা নিরসনে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। পরিচ্ছন্ন নগর গড়ি, সুন্নাতের আমল করি, শ্লোগানে ক্লিন ঢাকা গড়ার দাবী। বাসযোগ্য নগর গড়তে ও জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল-লেক ও নদী দখল মুক্ত করা। ঢাকা শহরকে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত নগরী হিসেবে ঘোষণা করা। নন এমপিও এবং এবতেদায়ী শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ। মজলুম রোহিঙ্গা মুসলিমদের জাতিসংঘের অধীনে সম্মানের সাথে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার দাবী। নিউজল্যান্ডে মসজিদে অর্ধশতাধিক মুসলিম হত্যার নিন্দা এবং পৃথিবীর সকল অমুসলিম রাষ্ট্রের মসজিদসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের জন্য জাতিসংঘের প্রতি দাবী। দেশে স্থায়ী শান্তি ও মানবতার মুক্তির লক্ষে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

সম্মেলন শেষে পীর সাহেব চরমোনাই মহানগর দক্ষিণ ২০১৯-২০ সেশনের জন্য সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম ও সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়া এর নাম ঘোষণা করেন।

/আরএ

Comments