প্রধান বিচারপতিকে তরবারি উপহার : কোন আইনে প্রশ্ন রিজভীর

প্রকাশিত: ১:৩০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে তরবারি উপহার দিয়েছেন। এ ঘটনাটি নজিরবিহীন উল্লেখ করে এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন অনুযায়ী কোনো অস্ত্রদাতা বা গ্রহীতা যদি অস্ত্র দেয়- যিনি দেবেন এবং যিনি গ্রহণ করবেন তাদের সাজা হবে। আমরা কয়েকদিন আগে দেখলাম, মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যিনি প্রধান তিনি তরবারি দিচ্ছেন দেশের যিনি আইনের অভিভাবক সেই প্রধান বিচারপতিকে। এই যে তরবারি দিয়েছেন, তার কি কোনো লাইসেন্স আছে?

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন রিজভী।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি; এইচএম এরশাদকে সেই সময়ে ইরাকের রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন একটি অস্ত্র দিয়েছিলেন, যেটি তার বাসায় ছিল। এটার কারণে এরশাদের সাজা হয়েছিল, তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন। এই যে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান তিনি যে তরবারি দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতিকে, এটা কোন আইনে দিলেন? আসলে ওরা দেশের প্রচলিত কোনো আইনকানুন তোয়াক্কা করে না, আমি আগেও বলেছি। তারা মনে করে, শেখ হাসিনার কথাই আইন।

রিজভী বলেন, এখন ডিসি-এসপিরা নৌকার পক্ষে ভোট চায়। তারা কাউকে পছন্দ করতে পারেন, ভোট দিতে পারেন- কিন্তু প্রকাশ্যে কোনো দলের পক্ষে ভোট চাইতে পারেন না। কারণ, নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন ডিসিরা, তাহলে কীভাবে একজন ডিসি নৌকার পক্ষে ভোট চান। এতে বোঝা যায়, শেখ হাসিনার অধীনে আগামী নির্বাচন কত একতরফা ও গণবিরোধী হবে- তার নমুনা এখনি ফুটে উঠেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল আজকে যিনি প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি কত অন্যায় কথা বলেছেন, কত ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করেছেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সম্পর্কেও অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন, অপপ্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আসার পর এসবের একটিও প্রমাণ করতে পারেননি। তখন তিনি যে মিথ্যাচার করেছিলেন তারপরও তাকে কিন্তু তখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। শেখ হাসিনা এবং তাদের নেতাকর্মীদের জুলুম-নির্যাতন করা হয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও তারা তাদের স্বাধীনতা ভোগ করেছে।

খালেদা জিয়া অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের দাবি সরকার তাকে মুক্তি দেবে। তিনি যেখানে উন্নত চিকিৎসা চান, নাগরিক অধিকার হিসেবে সেই দাবি পূরণ করবে।

এ সময় বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক, সদস্যসচিব মাওলানা নজরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা কাজী সেলিম রেজা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা কাজী আলমগীর হোসেন, মাওলানা কাজী আবুল হোসেন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান শামীম, মাওলানা মফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ওবায়দুল হাসান শাহিন। পরেরদিন বুধবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা প্রদান করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি। সংবর্ধনায় বৃহত্তর ময়মসিংহ সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) হারুন অর রশিদ প্রধান বিচারপতিকে একটি তরবারী উপহার দেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদসহ সরকার ও বিচার বিভাগের উর্ধ্বতন বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ।

Comments