সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হোন : ড. কামাল

প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০১৮
একুশ নিউজ ডেস্ক : সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আয়োজনে ‘আইনের শাসন ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি ।
তিনি বলেন, এ দেশে স্বৈরাচার কোনদিন টিকে থাকতে পারবে না। কোনও দিন পরিবর্তে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, এটা আমার বিশ্বাস। এটা আমরা একবার না বহুবার প্রমাণ করেছি। দুঃখ লাগে যে আজকে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে আবার আমাদেরকে সেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলতে হচ্ছে।

এই সরকার কত নীতিহীন, স্বৈরশাসক আখ্যা দিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, এরা বলেছিল ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর কিছুদিনের মধ্যে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটা নির্বাচন করবে। নির্লজ্জভাবে এরপর এরা ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চালিয়েছে। লজ্জা নাই, নীতি নাই, বিবেক নাই, কিছু নাই। এরা আমাদের উপর চাপিয়ে দেবে আর আমরা মেনে নেব? আর স্কোপ নাই। আসুন আমরা এটা নিশ্চিত করি, দলমত নির্বিশেষে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। বাইরের জগত থেকেও সবাই এটাই বলছে। সেই নির্বাচন ২০১৪ এর মতো একটি নির্বাচন না, সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যের ডাক তো আমরা দিয়ে রেখেছি। ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাহেব ও আমরা সাত দফার ভিত্তিতে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছি। আসেন সবাই এখানে সাতের জায়গায় ছয় হতে পারে আট হতে পারে।

আইনজীবীদের এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিদায় বিষয়ে বলেন, উনার মাত্র আড়াই মাস ছিল। কিন্তু উনাকে অপমান করে বিদায় দিল। আমি মনে করি উনাকে না শুধু এতে সারা জাতিকে অপমান করা হয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধানকে যারা অন্যায়ভাবে এটা করেছে তারা অসাংবিধানিক কাজ করেছে। তাদের বিচার হতে হবে। আমরা বিচার করা ভুলে গেছি বলে এই অন্যায় বারবার হচ্ছে।

সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, আজকে একটা ভীতির পর্দা সারাদেশের উপর দিয়ে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সমাজকে যখন ভীতি গ্রাস করে তখন গণতন্ত্র ও আইনের শাসন অনেকখানি অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই ভীতির যে চাদর বিছানো হয়েছে এজন্য আদালত, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন যে রাজনৈতিক দল এই তিনটা দায়ী।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশে আইনের শাসন নাই। আইনের শাসন যে নাই সেটার প্রতিফলন করবার জন্য যাদের হাতে ক্ষমতা আছে তারা আইন অমান্য করবার ক্ষমতা রাখে। যারা আইনের পক্ষে কথা বলবেন তিনি যদি আইন বিভাগের সর্বোচ্চ ব্যক্তিও হন তাকে কান ধরে ঘাড় ধরে বের করে দিতে হবে। কিছুই করতে পারবেন না।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশের গণতন্ত্র তো ভেজাল। যেখানে গণতন্ত্র ভেজাল সেখানে আইনের শাসন সম্ভব নয়।

ভেজালমুক্ত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি ড. কামাল হোসেন ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে বিচিত্রার প্রতিবেদক হিসেবে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার ইন্টারভউ তিন-চারবার করে নিয়েছিলাম। কোনদিন কোন সরকারের আমলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। আমি রাজনীতিবিদদের কথা বাদই দিলাম। এই সরকারের আমলে আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, আইসিটি, মানহানি ও আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। আমাদের ক্ষেত্রে এক ধরনের মামলার প্রয়োগ, আর ব্যাংক লুটেরা, খুনি, ধর্ষণকারী তাদের বিরুদ্ধে আরেকরকমের আইনের প্রয়োগ হতে পারে না।

তিনি বলেন, জননেত্রী পরিষদ নামে একটি সংগঠনের নেতা উনি খালেদা জিয়া, বিএনপি ও বিরোধী দলের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেন, ইন্টারভিউ দিয়ে বলেছেন তিনি এগুলো করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। একটা ভাল চাকরি পাওয়ার জন্য। এই সংবাদ প্রথম আলোতে ছাপা হওয়ার পরও খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে মামলা আমলে নেয়া হয়েছে।

ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, আমার খুবই দুঃখ লাগে এর চেয়েও কম দুঃশাসন যখন দেশে ছিল, এর চেয়েও কম অরাজকতা যখন ছিল তখন সমস্ত জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছে। আজকে কতরকম অন্যায় হচ্ছে। কেন আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকরা সবাই মিলে জনগণের ভোটে জনগণের সম্মতিতে একটা সরকার গঠনে এই আন্দোলনটা হয় না কিছুই বুঝি না! আর কত সর্বনাশ আমাদের দেখতে হবে?

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনের পরিচালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ আইনজীবী নেতারা বক্তব্য রাখেন।

@@@@ আরো সংবাদ :   গুলশানে বিএনপির যৌথসভা

@@@ রমজানের আগেই পেঁয়াজের ঝাঁঝে বাজার উত্তাপ; বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম

#একুশ নিউজি/এএইচ

Comments