ভোট আইলে আঙ্গোর কতা মনে হড়ে

প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮

মুহাম্মদ নোমান ছিদ্দীকী, লক্ষ্মীপুর: আন্ডা (আমরা) দিন আনি দিন খাই। রৌদে পুড়ি বৃষ্টিতে ভিজি। সরকার আঙ্গো (আমাদের) আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়া আর খোঁজ খবর নেয় না।

ভাগ্যে যা আছে তাই সইতে ওইবো। কারো প্রতি আঙ্গো কোন রাগ নাই, কারো দোষ নাই, দোষ আঙ্গো কোয়ালের (কপালের)।

ভোট আইলেই হেগো (জনপ্রতিনিধি বা প্রার্থী) আঙ্গোর কতা মনে হড়ে। আঙ্গো সমস্যার সমাধান না করলে এবার কারোরে ভোট দিতাননো।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরবংশী ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাসকারী অসহায় মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা তাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে এসব কথা বলেন।

তারা বেড়া ও টিন দিয়ে কোনমতে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাস করছেন এবং সেই সঙ্গে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন।

গত ২৫ বছর ধরে কেন্দ্রের ঘরগুলো মেরামত না করায় সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কর্তাব্যক্তিদের কাছে একাধিকবার মেরামতের আবেদন করেও কোনো সুফল মেলেনি। তবুও জরাজীর্ণ ঘরগুলোতে বসবাস করছে ভিটে-মাটিহীন অসহায় মানুষগুলো।

প্রতিনিয়ত বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে নানান সমস্যার মধ্যে লড়াই করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখে এখানকার বাসিন্দারা।

এখানে থাকা ৬০ পরিবারের প্রায় ৩শ মানুষ নিয়তির নিকট ভাগ্য পরিবর্তনের সাহায্য ও সহযোগীতা চাচ্ছেন প্রতি মুহূর্তে। আশ্রয়ন কেন্দ্রের পাশাপাশি আবাসন কেন্দ্রেরও একই অবস্থা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ১৯৯১ সালে পৃথক ৬ ও ৫ একর জমিতে আশ্রয়ন কেন্দ্র ও পাশে আবাসন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।

পৃথক দুটি কেন্দ্রেই ছয়টি ব্যারাকে ১১০টি কক্ষ রয়েছে। বেড়া ও টিনসেট আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে।

নির্মাণ শেষে ১১০টি কক্ষ মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অসহায় পরিবারকে বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমানে ৫টি কক্ষ খালি রয়েছে। অভাবের কারণে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পরিবার উপকূলের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে।

এখনও যারা বসবাস করছেন তাদের ভাষ্য, যারা চলে গেছেন, তারা ভালো আছেন। টিনের চালায় মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। বড় বড় অসংখ্য ছিদ্র হওয়ার কারণে মেরামত করতে পারছেন না বাসিন্দারা।

যাদের সামর্থ আছে তারা ঘরের ভেতরে মোটা পলিথিন বিছিয়ে ছাপড়ার নিচে বাস করছেন। আর যাদের পলিথিন কেনার সামর্থ নেই, তারা হাঁড়ি-পাতিলে চালের ছিদ্র দিয়ে পড়া বৃষ্টির পানি ধরছেন।

আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলোর খুঁটি (পিলার) খসে পড়ছে। মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে পিলারগুলো নাজুক হয়ে পড়েছে।

ঘরগুলো ভেঙে না পড়লেও যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করেছেন এখানকার বাসিন্দারা।

প্রত্যেকটি ঘরের দরজা, জানালা, বেড়া ভেঙে গেছে। পাটের চট ও পলিথিন দিয়ে কোনোমতে চলছে বসবাস। বৃষ্টি হলেই ঘরে থাকা চাল, ডাল, শুকনো খাবারসহ কাপড়-চোপড় ভিজে যাচ্ছে। ড্রেন, টয়লেট ও টিউবওয়েল নেই। পুকুর থাকলেও তাতে ঘাট নেই।

১৮টি পরিবারের জন্য সৌরবিদ্যুৎ দিলেও এখনো ৪২টি পরিবার পায়নি। একটি স্কুল রয়েছে, তাতে ১৫০ শিক্ষার্থীকে ৫ জন শিক্ষক পাঠদান করান।

শিক্ষকদের বেতন দিতে হয় পুকুরের চাষ করা মাছ বিক্রি করে। তারা এ স্কুলটি সরকারীকরণের দাবি জানান। আশ্রয়ন কেন্দ্রের বসবাসকারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

অভাব-অনটনের সংসারে পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণ জোগাড় করা তাদের জন্য কঠিন। ভাঙা ঘর মেরামত করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।

তবুও আশ্রয়ন কেন্দ্রেই আশ্রয় নিতে হচ্ছে তাদের। এখানে বসবাসরত প্রায় ৩শ মানুষের জন্য দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করলেও তা গত ৫ বছর ধরে অকেজো রয়েছে।

রান্নার পানি আনতে হয় বেড়িবাঁধের ভেতরের খালে ও মেঘনা নদী থেকে।

রেজিস্ট্রি দলিল না পাওয়ার বিষয়ে আশয়ন কেন্দ্রের সভাপতি দুলাল সরদার অভিযোগ করে বলেন, এখানকার বসবাসরত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেও কোনো সুফল আসেনি।

শুধু আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই-তিনবার চরবংশী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোহতাছিম বিল্লাহ বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের দুটি আশ্রয়ন প্রকল্প মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিল্পী রানী রায় বলেন, কয়েকদিন আগে আশ্রয়ন ও আবাসন কেন্দ্রটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে বসবাসকারীদের অভাব অভিযোগ শুনেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে।

/আরএ

Comments