ভোটযুদ্ধে যত তারকা…

প্রকাশিত: ৮:১৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০১৮

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরাবরের মতো এবারও শোবিজ তারকারা অংশ নিচ্ছেন। মানে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন তারা। নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া তারকাদের প্রায় অভিন্ন কমিটমেন্ট হচ্ছে, একই সঙ্গে শোবিজ জগৎ, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করবেন তারা। ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে যাওয়া কয়েকজন তারকার কথা তুলে ধরেছেন— আলাউদ্দীন মাজিদ

ফারুক

চলচ্চিত্রের মিয়াভাই খ্যাত অভিনেতা আকবর পাঠান ফারুক আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন ঢাকা-১৭ আসনে। তবে ২৫ নভেম্বর ফারুককে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নের চিঠি দিলেও ২৭ নভেম্বর একই আসন থেকে আবার মনোনয়নের চিঠি পান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির খান। দলের পক্ষ থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হবে। ছাত্র অবস্থা থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ফারুক। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর ফারুক বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ ও লালন করে দেশ ও জনগণের সেবা করার চেষ্টা করছি। জেল জুলুম হুলিয়া কিংবা কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পাইনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। আমার প্রিয় শোবিজ জগৎ, যা আমার সত্যিকারের ঠিকানা— এর উন্নয়নের চেষ্টা আমার কাছে অগ্রাধিকার পাবে।

আসাদুজ্জামান নূর

অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ আসাদুজ্জামান নূর বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। ১৯৭২ সালে তার অভিনয় জীবন শুরু মঞ্চদল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের মাধ্যমে। ১১০টিরও বেশি টিভি নাটক, চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন বাকের ভাই খ্যাত এই অভিনেতা। সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য ২০১৮ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। এখন পর্যন্ত অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তিনি সংস্কৃতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে মনোনয়ন লাভ করেছেন তিনি।

কনকচাঁপা

খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা একসময় রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হন। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুলসংগীত, লোকগীতিসহ প্রায় সব ধরনের গানে তিনি সমান পারদর্শী। প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হিসেবেও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। ৩২ বছর ধরে সংগীতাঙ্গনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। প্রকাশিত হয়েছে ৩৫টি একক গানের অ্যালবাম। চলচ্চিত্রের গান নিয়ে তার সর্বশেষ প্রকাশিত অ্যালবাম ‘আবার এসেছি ফিরে’। গানের পাশাপাশি লেখক হিসেবেও কনকচাঁপার সুখ্যাতি রয়েছে। তার রচিত তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলামও লিখেছেন তিনি।

কনকচাঁপা বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী প্রয়াত বশীর আহমেদের ছাত্রী। সংগীত ও লেখালেখির পাশাপাশি একসময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে লড়বেন তিনি।

মনির খান

বাল্যকাল থেকেই গানের সঙ্গে যুক্ত মনির খান ১৯৯৬ সালে তার প্রথম ক্যাসেট বের হয় ‘তোমার কোনো দোষ নেই’ শিরোনামে। ক্যাসেটটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ক্যাসেটটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর মনির খান রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। এরপর মনির আর থেমে থাকেননি। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তার মোট একক ক্যাসেটের সংখ্যা প্রায় ২০টি। প্রায় ৭০টির মতো মিশ্র ও ডুয়েট ক্যাসেটে তার গান রয়েছে। মনির খানের গানের সংখ্যা সহস্রাধিক। একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। এই দলের সাংস্কৃতিক অঙ্গসংগঠন জাসাসে একটানা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার টিকিট পেয়েছেন তিনি।

বেবী নাজনীন

বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী বেবী নাজনীন ১৯৭৬ সাল থেকে গানের সঙ্গে যুক্ত। আধুনিক, ফোক, পাশ্চাত্য, চলচ্চিত্রসহ সব ধরনের গানে সমান পারদর্শিতা দেখিয়ে শ্রোতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই জনপ্রিয় শিল্পী। ১৯৯৩ ও ২০০৩ সালে চলচ্চিত্রের গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। একসময় বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন এবং এই অঙ্গনে সক্রিয় হন তিনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে টিকিট পেয়ে গেছেন তিনি। এবার তার ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার পালা।

হেলাল খান

হেলাল খান মূলত একজন চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকের অভিনেতা এবং প্রযোজক। তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘প্রিয় তুমি’ (১৯৯৫)। তিনি তার কর্মজীবনে ৫০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। পাশাপাশি অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেন। হেলাল খান ২০০২ এবং ২০০৩ সালে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শোবিজের পাশাপাশি একসময় রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়ে পড়েন হেলাল খান। জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তার জন্মস্থান সিলেট থেকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছেন হাসন রাজা চলচ্চিত্রখ্যাত এই অভিনেতা-নির্মাতা। সিলেট-৬ আসনে বিএনপির টিকিট পেয়ে হেলাল খান বলেন, আমি দেশ মাটি মানুষ আর এদেশের সংস্কৃতির উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।

শায়লা

চলচ্চিত্র নায়িকা শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি নব্বই দশক থেকে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন তিনি।

মমতাজ

মমতাজ বেগম একজন জনপ্রিয় বাংলা লোকগানের সংগীতশিল্পী এবং জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য। ২০০৯ সালে প্রথমবার নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংসদ সদস্য মনোনীত হন। এরপর দশম জাতীয় সংসদেও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আসন্ন ১১তম সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে লড়বেন তিনি।

Comments