বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের সাহায্য করবে চবি শিক্ষার্থীদের তৈরি অ্যাপস

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০১৮

নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থী যে শুধু পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত ও চিন্তার মধ্যে থাকে তা নয়। কখন ভর্তি ফরম পূরণের শেষ সময়, টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ ও কখন ভর্তি পরীক্ষা হবে এসব কথা সব সময় মাথায় ঘুড়পাক খায়।

তার ওপর একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে, কোন সিলেবাসে কী পড়তে হবে, ভর্তির যোগ্যতা কী, কিভাবে দূরের ক্যাম্পাসে যাবে তা নিয়েও চলে শত দ্বিধা আর বিভ্রান্তি।

আর ছাত্র-ছাত্রীদের এসব সমস্যা দূর করতে ভর্তিযোদ্ধাদের এডমিশনের সময়ে সাহায্য করতে তৈরি করা হয়েছে এডমিশন এসিস্ট্যান্ট নামে একটি বিশেষ অ্যাপস।

তিন মাসের নিরলস চেষ্টার পর নির্মাতারা অ্যাপসটি এখন প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করতে সফল হয়েছে। ইতিমধ্যেই অ্যাপসটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে।

অ্যাপসটি তৈরী করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

সাইন্স শপ বিডি নামক অনলাইন শপের প্রতিষ্ঠাতা ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে অ্যাপসটির কাজ শুরু হয়। অ্যাপসটির সার্ভার ম্যানেজমেন্ট এবং ডিজাইনিংয়ে কাজ করেন একই বর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ জাওয়াদ খান, মাহবুবুর রহমান ও শোভন মাহমুদ। ডাটা এনালাইসিসে ছিলেন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাফায়াত সিদ্দিকী।

এছাড়াও প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ, ফাহাদ ও মারুফ।

ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন অধীনে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার এটি জন্য মনোনীত হয়েছে।

নির্মাতারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের জন্য সাইবার ক্যাফেতে দৌড়াদৌড়ি করার ঝামেলা থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে তৈরী হওয়া এই অ্যাপসটি আশা করি লাখো শিক্ষার্থীর ভরসা হিসেবে জায়গা পাবে। অ্যাপসটি ব্যবহারের জন্য প্রথমেই ফোন নাম্বার ও মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তারপর অ্যাপসের বিশেষ বিশেষ ফিচারগুলো দেখা যাবে।

অ্যাপটিতে যা যা আছে:
এই অ্যাপসটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষি ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ।

যে শিক্ষার্থী যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় ক্যাটাগরি অনুযায়ী সেখানে ক্লিক করলেই জেনে যাবে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সার্কুলার দেয়া আছে অ্যাপসটিতে।

সার্কুলার বুঝার সুবিধার্থে সহজ ফরম্যাট ও প্রতিটা সার্কুলার প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অ্যাপস ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাই এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও সোশাল মিডিয়ায় সার্কুলার খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট করতে হবে না। এক ফোন দিয়ে একাধিক একাউন্ট খোলা যাবে।

এডমিশন কাউন্টডাউন:
এই ফিচারটির মাধ্যমে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন কখন শুরু ও শেষ তা একসঙ্গে তালিকা আকারে দেয়া আছে। পাশাপাশি আছে এপ্লাই বাটনে ক্লিক করে কোন ঝামেলা ছাড়া আবেদন করার সুবিধা। পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রিয় তালিকা করে রাখলে এই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক তথ্যের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হবে।

অ্যাপটি ‘লগ ইন’ করতে যেসব তথ্য লাগবে:
এসএসসি, এইচএসসি রোল, রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, বোর্ড, ও ছবি দিয়ে এক ক্লিকের মাধ্যমেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যাবে। প্রতিবার পছন্দের বিশ্ববিদ্যলয়ে আবেদন করার সময় একই তথ্য বারবার দিতে হবে না। শুধু কোন ইউনিটে পরীক্ষা দিবে, কোটা আছে কিনা তা সিলেক্ট করেই যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারবে।

বিকাশ অথবা রকেটের মাধ্যমে এডমিশন ফরমের ফি প্রদান করার সুযোগ আছে। তবে কেউ এই সুবিধা নিতে না চাইলে শুধু ফোন ও ইমেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে অ্যাপটির বাকি সুবিধাগুলো নিতে পারবেন।

এছাড়া, যখন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পত্র, আসন বিন্যাস , রেজাল্ট পাবলিশ হবে তা সঙ্গে সঙ্গেই দেখা যাবে।

রয়েছে যাতায়াত ও বুকিং করার সুবিধাও!
পরীক্ষার সময় অচেনা শহরে যাতায়াত সংক্রান্ত সমস্যা থাকলেও এই অ্যাপস দিবে ‘ম্যাপিং’ সুবিধা। এতে পরীক্ষার্থী যে কোন জায়গা থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কারো সাহায্য ছাড়াই চলে যেতে পারবে। এছাড়া বাস, ট্রেন টিকেট ও এমনকি হোটেল বুকিং করার সুবিধাও রয়েছে।

এ বিষয়ে এডমিশন অ্যাসিস্ট্যান্ট টিমের প্রধান আব্দুল্লাহ আল মামুন একুশ নিউজ কে বলেন, ইতিমধ্যে অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও অনেক ব্যবহারকারী আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমরা স্বপ্ন দেখি, এই অ্যাপস একদিন লাখো ভর্তি প্রত্যাশীর ভরসার প্রতীক হয়ে উঠবে। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যের অভাবে উচ্চ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হবে না দেশের একটি শিক্ষার্থীও।

মামুন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু ভলান্টিয়ার কাজ করছে অ্যাপটিতে যেন সবচেয়ে দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়া যায়। কারন, শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় করে সহায়ক গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে এডমিশন এসিস্ট্যান্ট নামের এই অ্যাপটি।

/আরএ

Comments