বগুড়ায় আমন ধান সংগ্রহ শুরু; বাড়েনি দাম, বঞ্চিত কৃষক

প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২২, ২০১৮

বাদশা আলম, বগুড়া: সরকারি ভাবে আমন মৌসুমে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও বগুড়ার বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। মূলত এই সময়টাতে বাজারে ধানের দাম বাড়ে। কিন্তু এখনো এখানকার বাজারগুলোতে ধানের দাম বাড়তে শুরু করেনি।

তবে কৃষকের ঘরে প্রচুর ধান মজুদ থাকার কারণে মিলাররা সিন্ডিকেট করে বাকিতে ধান কিনছে। বাকিতে কেনা সেই ধান থেকে চাল তৈরি করে সরকারি খাদ্য গুদামে সরবরাহ করছে তারা। ফলে সরকারের অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ অভিযানের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। কৃষকের ঘরে নতুন ধান ওঠার পর প্রতি বছর সরকারি খাদ্য গুদামের চাল সংগ্রহ করা হয়। সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামের সঙ্গে মিলাররা চুক্তিবদ্ধ হয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করে থাকে। ফলে বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পায়।

কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। বগুড়ার ১২টি উপজেলায় ৩৯৯৭২ মেট্রিক টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা কেজি দরে কেনার জন্য এ জেলার ১৯২৫টি মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১ ডিসেম্বর থেকে আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় এবং তা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু বগুড়ায় আমন সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে গত ৯ ডিসেম্বর। বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ আনুষ্ঠানিক ভাবে আমন সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করার পর থেকেই বিভিন্ন খাদ্য গুদামে সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। সাধারণ কৃষকরা জানান, সরকারি ভাবে চাল কেনা শুরু হলেও বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।

গত বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) বগুড়ার শেরপুর বারদুয়ারী হাটসহ বিভিন্ন হাট বাজারে ধান বিক্রি হয়েছে ৬৫০ থেকে ৬৬০ টাকা মণ দরে। চাল বিক্রি হয়েছে ৯৮০ টাকা থেকে ১০২০ টাকা মণ দরে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাজিন্দা গ্রামের কৃষক মুকুর হোসেন জানান, আমন ধান চাষ করে বাম্পার ফলন হলেও বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী তাদের বিঘা প্রতি ৭০০-৮০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। সরকারিভাবে চাল কেনা শুরু হওয়ার পর তারা আশা করেছিলেন ধানের দাম বাড়বে। কিন্তু দাম তো বাড়েনি বরং মিলার ধান কিনছে বাকিতে।

একই গ্রামের কৃষক জোবায়ের হাসান জানান, আমন ধান চাষ করে এই অঞ্চলের অনেক কৃষক বিপাকে পড়েছে। মিলাররা সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। হাটে ধান বিক্রি করতে গেলেও মিলারদের নিয়োজিত ক্রেতা ছাড়া কেউ নেই। তারা কৃষকের কাছ থেকে শত-শত মণ ধান কিনছে বাকিতে। সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করে বিল উত্তোলনের পর ধানের দাম পরিশোধ করবে এমন শর্তে কৃষক বাধ্য হচ্ছে মিলারকে ধান দিতে। নন্দীগ্রাম উপজেলার রিধইল গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান জানান, এই অঞ্চলের কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার পর নিজের খাবার জন্য রেখে বাকিটুকু বিক্রি করে সংসারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করে।

কিন্তু এবার একদিকে উৎপাদন খরচ বেশি, অন্যদিকে বিক্রি করতে গেলে দাম কম হওয়ায় তাদেরকে আরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। শেরপুর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, উপজেলা সেমি অটো রাইচ মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব আকন্দ জানান, সরকারি খাদ্য গুদামে ৩৬ টাকা দরে চাল বিক্রি করতে তাদের আগ্রহ কম। তারপরেও খাদ্য গুদামের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়।

তবে বিগত বছরের চেয়ে এবার এ জেলায় বরাদ্দ কম এসেছে। ২০১৭ সালে বোরো মৌসুমে এ জেলায় ৬৮ হাজার ৮০৮ মেট্রিক টন চাল সরকারিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিলো। কিন্তু এবার জেলায় বরাদ্দ কম আসলেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি মিলাররা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বগুড়া সদর উপজেলায় ২ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন, শাজাহানপুর উপজেলায় ১ হাজার ৮৫৫ মেট্রিক টন, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন, সোনাতলা উপজেলায় ১ হাজার ৩২৩ মেট্রিক টন, গাবতলী উপজেলায় ১ হাজার ৯১৬ মেট্রিক টন, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টন, ধুনট উপজেলায় ১ হাজার ৬৬১ মেট্রিক টন, শেরপুর উপজেলায় ৬ হাজার ১৫৩ মেট্রিক টন, নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২ হাজার ১৩ মেট্রিক টন, কাহালু উপজেলায় ২ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন, দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন ও আদমদীঘি উপজেলায় ৭ হাজার ৭৬৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাঈন উদ্দিন জানান, এবার খাদ্য শস্য উৎপাদন ও মিলের ক্রাশিং ক্ষমতার ওপর সারাদেশে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এ জেলার ২৩ সরকারি খাদ্য গুদামে ৩৯৯৭২ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল চুক্তিবদ্ধ মিলাররা ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চাল দিতে পারবেন। এছাড়া ইতোমধ্যেই সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টনের অধিক চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।

/সিএইচ

Comments