পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার নারীকে গর্ভবতী হতে এবং পুরুষের সুস্হ বীর্য উৎপাদনে সহায়তা করে

প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০১৮

একুশ ডেস্ক: আপনি কি সন্তান গর্ভধারনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন? কি ধরনের খাবার খেলে গর্ভধারণ সহজ হবে তা নিয়ে ভাবনায় আছেন? এমন কিছু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার আপনার চারপাশে রয়েছে যা নিয়মিত, পরিমিত খেতে পারলে গর্ভধারণ সহজ হয়।

এসব খাবার উর্বরতা বৃদ্ধি করে, নারীকে গর্ভবতী হতে সহায়তা করে এবং পুরুষের জন্য সুস্থ বীর্য উৎপাদনে সহায়তা করে। যেসব দম্পতি এখনও সন্তান নিতে সক্ষম হচ্ছেন না, তারা এসব খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতেই পারেন।

বর্তমানে অনেক দম্পতির ক্ষেত্রেই বাচ্চা হতে দেরি বা সমস্যা দেখা যায়। দেরিতে বিয়ে, ব্যস্ত জীবন, দূষণ, বাজে লাইফস্টাইল ও খাবার ইত্যাদি কারণে আমাদের প্রজনন সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

ফলে সন্তান নেয়ার কথা ভাবছেন এমন নারীদের অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। এমন কিছু খাদ্য রয়েছে যা আপনাদের (স্বামী-স্ত্রী) দেহের শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর পর্যাপ্ত উৎপাদন ও চলাচলের পরিবেশ সৃষ্টির করা এবং দেহের বিভিন্ন হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। চলুন এগুলো জেনে নেয়া যাক আজই

(১) উদ্ভিজ্জ প্রোটিন: যেসব ফলমূল বা সবজিতে প্রোটিন রয়েছে সেগুলো উর্বরতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গাঢ় পাতার সবজিতে রয়েছে আয়রন, ফলিক এসিড, বি১২, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-ই। রঙিন সবজিতে রয়েছে ভিটামিন-সি ও বি৬। পুরুষ ও নারীর উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য এগুলো সালাদ হিসেবে কিংবা রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ডাল ও বীজ। এগুলো উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকর।

(২) নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় প্রাণিজ প্রোটিন: উর্বরতা বাড়ানোর জন্য প্রাণিজ প্রোটিন কমানো প্রয়োজন তবে একেবারে বাদ দেওয়াও উচিত হবে না। কারণ দেহের হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে এর ভূমিকা রয়েছে। রেড মিট বা স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংস থেকে পাওয়া প্রোটিন, আয়রন, বি১২ এবং ওমেগা ৩ এ ক্ষেত্রে দেহের চাহিদা মেটাতে পারে। খাদ্য তালিকায় নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় মুরগি, ডিম ও মাছ রেখে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব।

(৩) ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার:
ভিটামিন ডি-এর অভাবে অনেকেই সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে থাকেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সন্তান জন্মদানে অক্ষম নারীদের উপর একটি গবেষনা চালিয়ে দেখতে পান যে তাদের মধ্যে মাত্র ৭% নারীর শরীরে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন-ডি আছে। বাকি সবাই কম বেশি ভিটামিন- ডি এর স্বল্পতায় ভুগছে। কাজেই উর্বরতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন ডি-যুক্ত খাবার খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ ভিটামিনটি পাওয়া যাবে কিছু মাছ, মাংস ও ডিমে। সামান্য মাছ-ভাত-ডিম খেলে আর গায়ে রোদ লাগালে এই ভিটামিন শরীর তৈরি করে নেয়। এজন্য খাবারের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুই দিন আধঘণ্টা করে রোদে হাঁটাই যথেষ্ট। ধূমপান, বেশি ওজন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের প্রদাহের কারণে রক্তে এই ভিটামিনের মাত্রা কমে যেতে পারে।

(৪) কলা:

সুপার ফুড কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। যেসব মহিলার অনিয়মত মাসিকের সমস্যা রয়েছে, কলায় উপস্থিত ভিটামিন বি৬ তাদের অনিয়মিত মাসিককে নিয়মিত করতে সহায়তা করে। যারা সন্তান গর্ভধারণের চেষ্টায় রয়েছেন তাদের জন্য প্রতিদিন একটি বা দুইটি কলা খেলে ডিম্বাণু ও শুক্রানুর মান উন্নত করতে সাহায্য করে। নারী ও পুরুষের উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়।

(৫) মটরশুটি ও স্ট্রবেরী:
মটরশুটি ও স্ট্রবেরীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক যা নারী দেহে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য খুবই জরুরী। জিংকের অভাবে এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে গর্ভধারনে সমস্যা হয়। তাই নারীর উর্বরতা বৃদ্ধি জন্য মটরশুটি একটি আদর্শ খাবার।

(৬) কুমড়ো ও এর বীজ:

কুমড়ো ও কুমড়োর বীজে আছে ভিটামিন বি- কমপ্লেক্স যা দেহের উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।কুমড়োর ভিটামিন-ই উপাদান নারী ও পুরুষ উভয়ের দেহের উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে ও আমাদের দেহের কোষকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে। এই সবজি পুরুষদের সুস্থ শুক্রাণু তৈরিতে সাহায্য করে ও নারীদের জরায়ু জনিত কোন সমস্যা থাকলে তা রোধ করতে সাহায্য করে থাকে। কুমড়োর বীজে আরও আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা দেহের উর্বরতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কুমড়ো প্রজনন অঙ্গে রক্ত প্রবাহ করে, হরমোন নিয়ন্ত্রন করে ও মানসিক চাপ দূর করে।

(৭) ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন সি এর মত এন্টি-অক্সিডেন যা শরীরে হরমোনের ভারসাম্যতা বজায় রাখে। শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ায়। তাছাড়া নারীদের গর্ভধারণ করার অক্ষমতা দূর করে। টক জাতীয় ফল যেমন: লেবু, জাম, আমলকি, আঙ্গুরের জুস এক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।

(৮) বাদাম ও আখরোট
বাদাম ও আখরোট পুরুষ ও নারীর উর্বরতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বাদাম শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন- ই এর চাহিদা পূরণ করে। তাছাড়া বাদামে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ডিম্বানুকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।হরেক রকমের বাদাম, বিশেষ করে কাঠ বাদাম, চীনা বাদাম, পেস্তা ইত্যাদি যদি টানা ১২ সপ্তাহ প্রতিদিন এক মুঠো বাদাম খেলে নিশ্চিত ফল পাবেন। আখরোট পুরুষের বীর্য তৈরিতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটি নারীদের গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

(৯) আদা ও রসুন
যারা বাবা হতে চাইছেন তাদের জন্য আদা ও রসুন একটি আদর্শ খাবার। রসুনে আছে সেলেনিয়াম নামক একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা স্পার্মের সক্রিয়তা বাড়ায়। এছাড়াও রসুনে আরো আছে আলিকিন যা যৌনাঙ্গের রক্তচলাচল বৃদ্ধি করে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে এবং স্পার্মের পরিমাণ বাড়ায়। রসুনের মত আদাও পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক। নারীরা অধিক উপকারিতা পেতে রোজ দুই কাপ পর্যন্ত আদা চা পান করুন মধু মিশিয়ে।

(১০) ডার্ক চকোলেট
চকোলেট খেতে ভালোবাসেন না এমন পুরুষ বা মহিলা পাওয়া দুস্কর। ডার্ক চকোলেটে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর আছে L-Arginine HCL ও অ্যামিনো এসিড। ডার্ক চকোলেটের এসব উপাদান যৌন উদ্দীপনা বৃদ্ধি করতে ভুমিকা রাখে । তাছাড়া ডার্ক চকোলেট স্পার্মের পরিমাণ বাড়ায় এবং গুনাগুণ বৃদ্ধি করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব পুরুষ নিয়মিত অল্প পরিমানে হলেও ডার্ক চকোলেট খায় তাদের যৌন ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশি।

(১১) কালোজিরা:
কালোজিরা সন্তান গর্ভধারণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। কালোজিরা বা নাইজেলা সিডে ১৫টি অ্যামোইনো এসিড আছে। এছাড়াও কালোজিরায় ২১ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে ও ৩৮ শতাংশ শর্করা আছে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুরুষের শুক্রানুর সংখ্যা এবং গুনাগুন বৃদ্ধি পায়।

(১২) রান্নার তেল:
অলিভ ওয়েল: তেল বা ঘি এর বদলে যদি প্রতিদিন খাবার রান্নায় অলিভ ওয়েল ব্যবহার করা যায় তাহলে উর্বরতা ও গর্ভধারণের সম্ভাবনা ৩ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। নারী ও পুরুষ উভয়ের উর্বরতা বাড়াতেই এই তেল খুবই কার্যকর।

সূর্যমুখীর তেল: সূর্যমুখীর তেলে আছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন- ই, যা নারী ও পুরুষের উর্বরতা বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত সহায়ক।

Comments