চার বছরের বিস্ময়কর শিশু; জরুরি নাম্বারে কল করে বাঁচালো মায়ের প্রাণ

প্রকাশিত: ২:২৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮

মারুফ মুনির: মা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে এবং তার দেখাশোনা করা প্রয়োজন। জরুরি নাম্বারে কল করে এভাবেই নিজের মা’কে বাঁচিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে মাত্র চার বছরের শিশু কেইটলিন রাইট।

যুক্তরাজ্যের ডোরসেট অঞ্চলের আসকার্সওয়েল গ্রামে বসবাস করেন সায়মন রাইট-শার্লিন রাইট দম্পত্তি। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে ছোট সন্তানের বয়স মাত্র ৪ বছর।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত মাসের শুরুর দিকের ঘটনা। মিসেস রাইট (শার্লিন) তার চার বছরের শিশু কন্যা কেইটলিন নিয়ে সেদিন বাসায় ছিলেন।

কেইটলিনের বাবা সায়মন রাইট গিয়েছিলেন বাজার করতে। এমন সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন শার্লিন। জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে যান শার্লিন।

মাত্র ৪  বছরের শিশু কেইটলিন তখন চরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। কেইটলিন কল করে ৯৯৯ নাম্বারে। ওপাশ কল রিসিভ করলে কেইটলিন বলে, মা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে এবং তার দেখাশোনা করা প্রয়োজন।

মুহুর্তের মধ্যে চলে আসে অ্যাম্বুলেন্স। শার্লিনকে নেয়া হয় হাসপাতালে। বেঁচে যায় শার্লিন।

স্থানীয় সাউথ ওয়েস্টার্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস- সোয়াস’র মুখপাত্র বলেন, চার বছরের শিশু আমাদের ফোন করে তার উপস্থিত বুদ্ধি, প্রজ্ঞা আর ভীষণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।

কেইটলিনের সেই জরুরি ফোন কলটির জবাব দিয়েছিলেন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের কর্মকর্তা জেস হডকিনসন।

হডকিনসন বলেন, কেইটলিন যখন কল করে তার মায়ের অবস্থা ব্যখ্যা করছিলো তখন অবাক হয়েছিলাম। তার আধো আধো কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম কোনো ছোট্ট শিশু কথা বলছে।

কেইটলিনকে সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী আখ্যা দিয়ে হডকিনসন বলেন, সে জানতো জরুরি মুহুর্তে তার কী করা লাগবে। আমার প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে জানিয়েছে সে।

কীভাবে সম্ভব হলো?
কেইটলিনের মা শার্লিন জানান, আমি প্রায় দিনই এভাবে অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার তিন সন্তানই জানে যে সে সময়ে ঠিক কি করতে হবে। আমরা তাদের সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শিখিয়ে-পড়িয়ে রেখেছি।

মা শার্লিন রাইটের সঙ্গে কেইটলিন রাইট।

মায়ের সঙ্গে কেইটলিন

কেইটলিনের বাবা সায়মন রাইট জানান, আমরা কেইটলিনকে এটুকুই শিখিয়েছি যে, টেলিফোনের একটি ছোট বোতাম তিনবার চেপে এবং এরপর একটি সবুজ বোতাম চেপে, কিভাবে সাহায্য চাইতে হয়।

এই ছোট শিক্ষাটাই আজ শার্লিনকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছে।

যদি কেইটলিন এমনটা না করতো, তাহলে তো আমাদের আজকে এভাবে একসঙ্গে বসে থাকা সম্ভব হতো না। এটা সত্যিই বিস্ময়কর।

এ ব্যাপারে মিসেস রাইট তার মেয়ে কেইটলিনকে ‘লিটল গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ বা ‘ক্ষুদে রক্ষাকারী দেবদূত’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

অ্যাম্বুুলেন্স কর্তৃপক্ষের বক্তব্য

এরিমধ্যে ওই অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটি শিশুটির সঙ্গে তাদের টেলিফোনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড প্রকাশ করেছে।

সেখানে কেইটলিনকে বলতে শোনা যায় যে, মা অজ্ঞান হয়ে পড়েছে এবং তার দেখাশোনা করা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসটির মুখপাত্র জানান, চার বছরের শিশু আমাদের ফোন করে তার উপস্থিত বুদ্ধি, প্রজ্ঞা আর ভীষণ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।

কেইটলিনের এমন কাজের জন্য তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রশংসাও করে কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলে, সে যেভাবে ফোনের অপর-প্রান্তে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছে, তার মায়ের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছে সেটা আশ্চর্য হওয়ার মতোই।

/আরএ

Comments