সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি:খুলনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার

প্রকাশিত: ৭:১৪ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০১৮

শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধিঃপ্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা খুলনা নগরীর আমেজ ও উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা যেন হতাশায় পরিণত না হয়- এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রশাসন ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রতি। জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে খুলনা সিটির সুষ্ঠু নির্বাচন উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে তিনি আশাবাদী। নিরাপত্তা সম্পর্কে তিনি পরিপূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন। বলেছেন, ভোট স্ব স্ব কেন্দ্রেই গণনা এবং সেখানেই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। কারো সাধ্য নেই- প্রভাব বিস্তার করে কোন প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার।

খুলনা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় মিলনায়তনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার এ সভার আয়োজক। সিটিতে নির্বাচনী আমেজ, উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান এবং সংঘাত না থাকায় এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এজেন্টদের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা এবং প্রাপ্ত ভোটের ফলাফল সিট অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে। ভোট কেন্দ্রের বিধি ও নিয়মনীতি সম্পর্কে এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির ভাষণে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বলেন, অবৈধ অস্ত্রধারী, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী এবং নিয়মিত মামলার আসামিদের গ্রেফতার করে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ভোট কেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য মহানগরীতে ৩১টি পুলিশের টিম, সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কর্মী, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন, ১৬ প্লাটুন বিজিবি টহল, ৩ প্লাটুন রিজার্ভ, প্রয়োজনীয় সংখ্যক র‌্যাব, ৬০ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় এখানকার নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক, জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র মিজানুর রহমান বাবু, ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক, কাউন্সিলর প্রার্থী আনিছুর রহমান বিশ্বাষ, জেডএ মাহমুদ ডন, রোকেয়া ফারুক, রুমা খাতুন, মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু প্রমুখ। এছাড়া সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. লোকমান হোসেন মিয়া, কেএমপি কমিশনার মো. হুমায়ুন কবির, রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ, জেলাপ্রশাসক মো. আমিন উল আহসান, র‌্যাবের পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সভায় মেয়র ও অধিকাংশ কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন সন্ত্রাসী, পেশি শক্তির প্রভাব, কালো টাকার ছড়াছড়ি, অবৈধ অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বন্ধে ইসির প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সভায় বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তাদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা প্রদান, এজেন্টদের হুমকি, পুলিশকে ব্যবহার করে মামলার হুমকি, গ্রেফতারসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ মনোনীত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দলীয় সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এর আগে রোববার সকালে খুলনা সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে সিটি নির্বাচন উপলক্ষে বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কোনো ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে খুলনা বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ১৫ মে’র নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন পরিচালনার কাজে কোন গাফিলতি ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সাথে কোনো নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও তীক্ষè নজর রাখতে হবে।
বিএনপির দাবি তাদের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার করা হচ্ছে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, গণগ্রেফতার করা হচ্ছে- বিএনপির এ অভিযোগ সঠিক নয়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, সন্ত্রাসী, দাগী তাদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। নির্বাচনে বিঘœ সৃষ্টি করতে পারে এমন ব্যক্তি ও অবৈধ অস্ত্রধারীদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে।

সিটি নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থাকবে কি না সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পুলিশের শীর্ষ পদ এবং বিভিন্ন থানার ওসিদের বদলি করার দাবিসম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে এখনো পর্যন্ত পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যত্যয় ঘটায়নি। যে কারণে তাদের বদলির বিষয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।

শনিবার রাতে নগরীর খালিশপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী সুলতান মাহমুদ পিন্টুকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা ও গুলি করার ঘটনাটিকে অপ্রত্যাশিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হবে এবং পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেন, নির্বাচন চলাকালে প্রশাসনিক সকল কাজ চলবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের এখানে কিছু করার নেই। সরকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করছে না।

তিনি শনিবার বিকেল থেকে খুলনা মহানগরীতে সরেজমিন পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী আমেজ দেখে মনে হয়েছে সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলছে। জনগণের মধ্যে সহনশীলতা আছে। তবে ভবিষ্যতে কোন রকম অস্থিতিশীল পরিবেশ যাতে তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং বৈধ অস্ত্রের প্রদর্শন বন্ধ রাখতে হবে। জনগণের আস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই নির্বাচন কমিশনের মূল শক্তি। তাদের দায়িত্বশীল কার্যক্রমে খুলনায় একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হবে।

সভায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। সভায় খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. দিদার আহম্মেদ, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর, বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক খন্দকার রফিকুল ইসলাম, জেলাপ্রশাসক মো. আমিন উল আহসান, পুলিশ সুপার মো. নিজামুল হক মোল্যাসহ এনএসআই, ডিজিএফআই, আনসার ও অন্যান্য বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধানরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি তুলে ধরেন এবং নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

Comments