সিরিয়ায় মানবতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮ আ হ ম আলাউদ্দিন:সিরিয়ায় মানবতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ঘুউতা শহর যেন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী বাহিনী অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে সরকার ও তাদের মিত্র রুশ বাহিনীর লাগাতার বিমান হামলায় গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত অন্তত ৪০৩ জনের প্রাণ ঝরেছে, যাদের মধ্যে ১৫০ জনই শিশু। সিরিয়া নিযুক্ত মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা এসওএইচআর বৃহস্পতিবার এই প্রাণহানির তথ্য দিয়ে বলেছে, এটা স্মরণাতীতের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। লাগাতার হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বা আহত হয়েছে আরও ২ হাজার ১২০ জন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার বোমা হামলা শুরুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার ভোর না হতেই খবর মেলে ৪০৩ জনের প্রাণহানির, যাদের মধ্যে ১৫০ জনই শিশু এবং বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ঘুউতার বাসিন্দারা বলছেন, শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাই এখন বাস্তুচ্যুত। এখন তারা না কোথাও নিজেদের লুকোতে পারছেন, না করতে পারছেন অন্য কিছু। বিশ্লেষকগণ বলছেন, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ এখন এমন এক জটিল অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বড় শক্তিধর দেশগুলো সেখানকার নানা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে দিয়ে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। বিবিসির সেবাস্টিয়ান আশার লিখছেন, সিরিয়ার সরকার এবং তার বিরোধীদের মধ্যে যে সঙ্ঘাত থেকে এই সঙ্কটের সূচনায় হয়েছিল – তা এখন প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। দেশটি এখন পরিণত হয়েছে নানা শক্তির পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে। বাইরের যেসব শক্তি আগে কূটনীতির পথে ছিল, তারা এখন সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের পথে নেমে পড়েছে। রাশিয়া আর ইরান হচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জড়িত – আর্থিক, সামরিক, রাজনৈতিক সব দিক থেকেই। যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষাকৃত কম জড়িত কিন্তু এ কারণেই তাদের স্পষ্ট বা নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা নেই। তুরস্ক আরেকটি জড়িত দেশ কিন্তু তারা বিদ্রোহীদের সমর্থন করলেও কুর্দিদের ঠেকাতে বেশি আগ্রহী। দক্ষিণে আছে ইসরাইল – তারা লেবাননের ১৬ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় যেমন, তেমনি সিরিয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানত নিরব ভূমিকা রেখে চলেছে। তারা সিরিয়ায় কথিত ইরানি ঘাঁটি এবং হেজবোল্লাহর অস্ত্র সরবরাহের মত সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতেই আক্রমণ সীমিত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক, কুর্দি, এমনকি বাশার আসাদ সরকার – এদের প্রত্যেকেরই স্বার্থ অপরের বিপরীত। কিন্তু প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে তৎপরতা চালানোর কারণেই তাদের সরাসরি সঙ্ঘাত হয় নি। শুধু ইসলামিক স্টেটের মোকাবিলা করার সময়ই তারা তাদের মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে রেখে একসাথে কাজ করেছে। কিন্তু ইসলামিক স্টেটের পরাজয়ের ভেতর দিয়ে পরিস্থিতিতে এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে কুর্দিরা আইএসকে তাড়ানোর সময় আরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে – আর তা তুরস্ককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাশিয়া এবং ইরান সিরিয়ার গভীরে তাদের অবস্থান পাকা করে ফেলেছে – যার পাশাপাশি বাশার আসাদের বাহিনী নতুন নতুন এলাকা পুনরুদ্ধার করছে। ইসরাইল দেখছে যে হেজবোল্লাহ এবং ইরান তার সীমান্তের আরো কাছাকাছি চলে এসেছে – যা তাকে সতর্ক এবং অপেক্ষাকৃত সক্রিয় করে তুলেছে। এ অবস্থায় এমন ঝুঁকি আছে যে প্রক্সিদের যুদ্ধ এখন তাদের পেছনে যে শক্তিগুলো পেছন থেকে সুতো নাড়ছে তাদের সরাসরি যুধে পরিণত হয় কিনা। তা হবে ঘটনাপ্রবাহের এক খুবই বিপজ্জনক মোড় বদল। পেছনের শক্তিগুলো সব সময়ই অতীতে এরকম সম্ভাবনা দেখা দিলে সঙ্ঘাত থেকে পিছিয়ে এসেছে। কিন্তু এ নিয়ে খুব আশ্বস্ত হওয়া যায় না। যদিও এরকম যুদ্ধের কথা শুনতে অদ্ভূত শোনাতে পারে, কিন্তু গত কিছুদিনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। ক’দিন আগেই সিরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান ভুপাতিত হয়েছে। ইসরাইলি আকাশসীমার ভেতরে একটি ইরানি ড্রোন ঠেকিয়ে দেয়া হয়েছে। একটি রিপোর্ট বেরিয়েছে যে মার্কিন-কুর্দি ঘাঁটির দিকে এগুনোর সময় মার্কিনীদের হাতে কয়েকজন রুশ ভাড়াটে সৈন্য নিহত হয়েছেন। তুরস্ক সিরিয়ান কুর্দিদের ওপর হামলা শুরু করেছে – যাতে তারা সরাসরি আমেরিকানদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে, যদিও তারা আবার নেটো মিত্র। এর ফলে সিরিয়ার বাইরের শক্তিদের একটা সর্বগ্রাসী সঙ্ঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এমন কিছু যদি না-ও হয় – অন্তত সিরিয়া সঙ্কটকে তা আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে। Comments SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: যুদ্ধসিরিয়াসিরিয়া নিয়ে কি শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধার শঙ্কা!