আন্তর্জাতিক আদালতে সু চি’র বিচার হওয়া উচিত : দুই নোবেল বিজয়ী

প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮

একুশ নিউজ : ইয়েমেনের নোবেল বিজয়ী তাওয়াক্কল কারমান ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের নোবেল বিজয়ী মেরেইড ম্যাগুয়ার বলেছেন, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত রাখাইনে যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও অমানবিক বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে তার দায় এড়াতে পারে না মিয়ানমার সরকার তথা ‘অং সান সু চি’। তারা বলেন, অং সান সু চি একজন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। অথচ সে আগুনে শিশুদের নিক্ষেপ করার মতো জঘন্যতম অপরাধ করেছে। তার সামরিক বাহিনী বিগত ৬ মাস ধরে সেদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে আসছে । তাদের সেনা, পুলিশ ও উগ্রপন্থি রাখাইনদের লোমহর্ষক ঘটনা বিশ্ববাসী দেখেছে।

রবিাবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কক্সবাজার জেলার উখিয়ার মধূছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তারা এসব কথা বলেন।

ইতিহাসে নজির বিহীন ঘটনা উল্লেখ করে ওই দুই নোবেল বিজয়ী কান্না জড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, রোহিঙ্গা নারীদের যেভাবে ধর্ষণ, উৎপীড়ন ও নির্যাতন করা হয়েছে সেজন্য অং সান সু চি ও তার সরকারের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক আদালতে বিচার হওয়া উচিত। নোবেল বিজয়ীরা এ সময় বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়া এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ স্থানীয়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

এর আগে, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দু’দেশের দুই নোবেল বিজয়ী কুতুপালং রেজিস্ট্রার্ড শরণার্থী ক্যাম্পে পৌঁছলে ক্যাম্পে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও সংস্থা সংশ্লিষ্টরা তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন। পরে নোবেল বিজয়ীরা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে ক্যাম্প কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করে জানতে চান রোহিঙ্গারা কেমন আছে? জবাবে ডেপুটি সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহীন জানান, সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এরপরে দুই নোবেল বিজয়ী সরাসরি চলে যান মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে রয়েছে ধর্ষিতা, গুলিবিদ্ধসহ অসংখ্য নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ।

সেখানে নোবেল বিজয়ীরা ধর্ষিতা রোহিঙ্গা নারী নজু খাতুন (৩২) জাহেদা বেগম (৩০) মিনারা বেগম (২৫) জাহেদা খাতুন (২২) এর সাথে একান্তে কথা বলেন। দীর্ঘক্ষণ তাদের সাথে কথা বলে নোবেল বিজয়ীরা বেরিয়ে আসার পরে ওই ৪ নারী সাংবাদিকদের জানান, নোবেল বিজয়ীরা জানতে চেয়েছে তাদেরকে কিভাবে ধর্ষণ করেছে মিয়ানমার সেনারা। এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, বাড়ি ঘরে লুটপাট ও যুবক ভাইদের ধরে নিয়ে গণগ্রেপ্তার, পরে গুলি করে নির্বিচারে হত্যার নির্মম কাহিনী শুনে দুই নোবেল বিজয়ী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন বলে রোহিঙ্গা নারীদের টিম লিডার জাহেদা বেগম (৩১) জানান।

এরপর নোবেল বিজয়ীরা গুলিবিদ্ধ, হাত-পা কাটা, চোঁখ উপড়ে ফেলা এমন ক্ষত বিক্ষত কয়েকজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেন। এসময় নোবেল বিজয়ীরা সেখানে জড়ো রোহিঙ্গাদের আশ্বস্থ করে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বর্বরোচিত হামলার জন্য অং সান সু চিকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে মিয়ানমারকে ফেরত নিতে হবে’। শান্তিতে নোবেল জয়ী ৩ নারী মূলত রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক জনমতকে আরো সুসংহত করতে এ সফরে এসেছেন ।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বর্বরতা দেখতে বাংলাদেশে আসা আরেক শান্তিতে নোবেল জয়ী ইরানের শিরিন ইবাদি আগামীকাল সোমবার রোাহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

Comments