যশোরে ছাত্রলীগ সম্পাদকের হামলায় আহত সাজু মারা গেছে

প্রকাশিত: ১০:১৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০১৯

যশোর প্রতিনিধি: যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিমান অফিস মোড়ে চাঁদার দাবিতে হামলার শিকার আহত নয়ন চৌধুরী সাজু (২৪) নামে এক ওয়েলডিং মিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত সাজু বিমান অফিস মোড় এলাকার জয়নাল চৌধুরী ওরফে চাইনিজ স্বপনের ছেলে।

নিহতের বড় ভাই রতন চৌধুরী বাবু (২৭) হাসপাতালে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেতাসহ তার লোকজন দুই ভাইকে হতাহত ঘটনার সাথে জড়িত। তবে এই অভিযোগ বানোয়াট বলে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের ওই নেতা।

রতন চৌধুরী রাজুর অভিযোগ, বিমান অফিস মোড়ে তাদের ভাই ভাই ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তারা দুই কাজ করেন। জেলা ছাত্র লীগের সাধারন সম্পাদক ছালছাবিল আহমেদ জিসান বুধবার দুপুরে তার পিতার কাছে স্বপনের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। বলা হয় তার এলাকায় ব্যবসা করতে হলে তাকে চাঁদা দিতে হবে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বলা হয় রাতেই দুই ছেলের মধ্যে একজনকে হারাতে হবে।

এদিন রাত সাড়ে এগারটার দিকে ছোটভাই সাজুকে ফার্মেসি থেকে ওষুধ আনতে বলেন রাজু। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হতে না হতেই সন্ত্রাসী রনি ও রাব্বিসহ কয়েকজন দুর্বৃত্ত সাজুকে ধরে আটকে রাখেন। এ সময় সাজু চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে যাওয়ার পর জানতে পারেন যারা সাজুকে ধরে রেখেছেন তারা ছাত্রলীগের ওই নেতার পোষ্য।

এ কারণে তিনি ওই নেতাকে মোবাইলে ফোন করে ঘটনাটি জানান। এ খবর ওই নেতা ঘটনাস্থলে আসেন এবং তিনি নিজেই দুই ভাইকে মারধর করেন। তার সহযোগীরাও লোহার রড দিয়ে তাদের মারধর করেন। এতে তারা আহত হন। তবে ছোটভাই সাজুর মাথা কিছুটা জখম হওয়ায় রাতেই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে তাকে চিকিৎসা করানো হয়।

এরপর কিছুটা সুস্থতা বোধ করায় সাজুকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে সাজু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পূণরায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান সাজু। এক প্রশ্নের উত্তরে রাজু বলেন, হামলাকারীদের হুমকিতে তারা প্রকৃত ঘটনা গোপন করে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

তিনি পুলিশ ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সন্ত্রাসীদের মারপিটে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখান। সার্জারী ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক মশিয়ার রহমান জানান, মাথায় প্রচন্ড আঘাতের কারণে সাজুর মৃত্যু হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগেই তিনি মারা যান।

এদিকে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার পিতা জয়নাল চৌধুরী স্বপন। এ সময় তিনি বারবার আহাজারি করে বলতে থাকেন ‘জিসান আমার ছেলেকে মেরে ফেললো’।

ঘটনা সম্পর্কে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছালছাবিল আহমেদ জিসান সাংবাদিকদের জানান, তিনি বা তার কোন লোক হতাহত দুই ভাইকে মারপিট করার প্রশ্নই আসে না। তার ভাবমূর্তি ক্ষুর্ণ করতে ওই পরিবারের লোকজন মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়া ওই ঘটনার সময় তিনি নিজ এলাকায় ছিলেন না।

যশোর কোতয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অপূর্ব হাসান জানিয়েছেন, ঘটনাটি তার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিআইজে/

Comments