বিশ্বের ৭টি স্মৃতিস্মারক স্থাপনা

প্রকাশিত: ১:২১ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০১৯

ফিচার ডেস্ক: আন্তঃধর্মীয় সম্পর্ক ও সংলাপের দিক থেকে সারা বিশ্বের এই আটটি স্থাপনা বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মসমূহের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে এসেছে। বিশেষ করে ইবরাহিমি ধর্মীয় সম্প্রদায়সমূহের মধ্যে সম্প্রীতিমূলক অবস্থান তৈরিতে এই স্থাপনাসমূহ ইতিহাসের মাইল ফলক।

 

১. হলি সেপালচার চার্চ, জেরুসালেম, ফিলিস্তিন

অধিকৃত ফিলিস্তিনের পুরাতন জেরুসালেম শহরে অবস্থিত হলি সেপালচার চার্চ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ গীর্জা।

খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, এই গীর্জার অবস্থান স্থলেই যিশু খ্রিস্টকে (ঈসা আ.) ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে এখানেই দাফন করা হয় এবং এখান থেকেই তিনি পুনরুত্থিত হন।

সারা বিশ্ব খ্রিস্টানদের কাছে পবিত্রতম এই স্থাপনার তত্ত্বাবধানের ভার দুইটি ফিলিস্তিনি মুসলিম পরিবারের উপর ন্যাস্ত। প্রায় এক হাজার বছর ধরে ফিলিস্তিনি নুসাইবা এবং জাওদা পরিবার এই গীর্জার রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব বহন করে আসছে।

মুসলিম পরিবারের হাতে খ্রিস্টীয় সম্প্রদায়ের পবিত্রতম এই গীর্জার তত্ত্বাবধানের ভার মূলত উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যকার সম্প্রীতির নিদর্শনকে চিহ্নিত করেছে।

 

২. মাইমোনেডেসের ভাস্কর্য, কর্ডোভা, স্পেন

স্পেনের কর্ডোভা শহরের পুরাতন ইহুদি কোয়ার্টারে অবস্থিত ইহুদি দার্শনিক মুসা বিন মাইমুন তথা মোজেস মাইমোনেডেসের ভাস্কর্য আন্তঃধর্মীয় সহমর্মিতার অপর এক নিদর্শন।

আইবেরিয় উপদ্বীপে সাতশত বছরের মুসলিম শাসনামলে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি যে সহমর্মিতার আচরণ প্রদর্শিত হয়েছিল, তাতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত ইহুদি সম্প্রদায়ও বিপুল উন্নতি ও ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছিল।

স্পেনীয় মুসলিম শাসকদের এই সহমর্মিতার নীতি ইহুদিদের ইতিহাসে পুনরুত্থানের এক যুগ তৈরি করে, যার মধ্যে মুসা বিন মাইমুনের মত চিন্তাবিদদের আগমন ঘটে।

মুসা বিন মাইমুনের এই ভাস্কর্য মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যকার সহনশীলতা ও সহমর্মিতার এক প্রতীক।

 

৩. ট্রাই-ফেইথ সেন্টার, ওমাহা, নেবরাস্কা, যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের নেবরাস্কা রাজ্যের ওমাহা শহরে অবস্থিত ট্রাই-ফেইথ সেন্টার ইসলাম, ইহুদি ও খ্রিস্ট এই তিন ধর্মের পারস্পরিক সহনশীল অবস্থানের এক প্রতীক।

এই স্থাপনায় একইসাথে ইসলামী সেন্টার, ইহুদি মন্দির এবং খ্রিস্টান গীর্জার অবস্থানের মাধ্যমে তিন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহনশীল সহাবস্থানকে নির্দেশ করা হয়েছে।

স্থাপনাটির স্থপতি বলেন, মূলত সাধারন মানুষকে আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থান ও সংলাপের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারনা দেওয়ার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে।

 

৪. মাওলানা রুমীর মাজার, কোনিয়া, তুরস্ক

তুরস্কের কোনিয়ায় অবস্থিত ত্রয়োদশ শতাব্দীর সুফি দার্শনিক মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমীর মাজার আন্তঃধর্মীয় সহমর্মিতা প্রকাশের অপর এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

মাওলানা রুমী তার কবিতার মাধ্যমে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যকার ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের কথা বলে গেছেন। তার কবিতা অনুসারে,

হও তুমি অবিশ্বাসী, মুশরিক কিবা অগ্নিপূজক

আসো, আমাদের ভ্রাতৃত্ব শেষ হওয়ার নয়,

যদিও তোমার প্রতিজ্ঞাকে ভেঙেছো

তুমি শত শত বার, আসো।

 

৫. ব্রেডফোর্ড সিনাগগ, ব্রেডফোর্ড, যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের ব্রেডফোর্ড শহরে এক বৈচিত্রপূর্ণ অবস্থানে সিনাগগটি অবস্থিত। ইয়র্কশায়ার তন্দুরী, আল-হিজাব ইসলামিক ক্লোথিং এবং জামিয়া শানে ইসলাম এডুকেশন সেন্টারের মাঝে অবস্থিত এই সিনাগগটি ইসলাম ও ইহুদি ধর্মের মধ্যকার সহাবস্থান ও সহমর্মিতার এক অনন্য নিদর্শন।

১৮৮০ সালে নির্মিত এই সিনাগগটি সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায় ফান্ড তৈরি করে সিনাগগটিকে এবং পাশাপাশি এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র ইহুদি সম্প্রদায়কে রক্ষা করে।

 

৬. আয়া সোফিয়া, ইস্তানবুল, তুরস্ক

তুরস্কের ইস্তানবুলের আয়া সোফিয়া আন্তঃধর্মীয় সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ৫৩৭ সালে বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের শাসনামলে গীর্জা হিসেবে এটি নির্মিত হয়।

১৪৫৩ সালে ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ তৎকালীন বাইজান্টাইন রাজধানী কন্সটান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তানবুল) জয় করলে একে মসজিদে পরিণত করা হয়।

বর্তমানে আয়া সোফিয়া মসজিদে কোন প্রকার উপাসনা করা হয়না বরং এটি একটি ‘আন্তঃধর্মীয় যাদুঘর’ হিসেবে অবস্থান করছে। একইসাথে খ্রিস্টীয় এবং ইসলামী ঐতিহাসিক ও স্থাপত্য নিদর্শনের অধিকারী হওয়ার মাধ্যমে এই স্থাপনাটি উভয় ধর্মের মধ্যকার আন্তঃধর্মীয় সংযোগের প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করেছে।

 

৭. সেন্ট ক্যাথরিনের মঠ, সিনাই, মিসর

মিসরের সিনাই পর্বতে অবস্থিত সেন্ট ক্যাথরিন মঠ আন্তঃধর্মীয় সহাবস্থানের অপর এক নিদর্শন। এই স্থানেই মোজেস তথা হযরত মুসা (আ.) নবুওয়াত প্রাপ্ত হন এবং আল্লাহর সাথে কথা বলেন। পাশাপাশি এই স্থানে খ্রিস্টীয় ইতিহাসে সম্মানিত সেন্ট ক্যাথরিনের স্মরণে খ্রিস্টান মঠ ও মঠের মধ্যে মুসলমানদের জন্য মসজিদ এই স্থাপনাটিকে আন্তঃধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে।

 

৮, ইবাদত খানা, ফতেহপুর সিক্রি, ভারত

ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবর ফতেহপুর সিক্রিতে ‘ইবাদত খানা’ নামে এক স্থাপনা তৈরি করেন। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারস্পরিক সংলাপে এখানে মিলিত হত।

ড. ক্রেইগ কন্সিডাইন; অনুবাদ: মুহাম্মদ আল-বাহলুল।

এমএম/

Comments