১৯ লাখ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করে আসামে এনআরসি প্রকাশ নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৯ ভারতের আসাম রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশিত হয়েছে। শনিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় ওয়েবসাইটে নাগরিক পঞ্জির চূড়ান্ত তালিকাটি প্রকাশ করা হয়। যেখানে আগের তালিকায় প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। যদিও এবারের চূড়ান্ত তালিকায় অন্তত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ বাঙালিকে রাষ্ট্রহীন করা হলো। তাছাড়া ভারতের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে প্রায় ৯ কোটি ১১ লাখ বাসিন্দাকে। এমন অবস্থায় রাজ্যজুড়ে এক উৎকণ্ঠা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যেকোনো অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল থেকেই রাজ্যের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য। আসাম সরকারের মতে, ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের চিহ্নিতের মাধ্যমে তাদের নিজ দেশ ফেরত পাঠানোই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। যে কারণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এই চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি প্রকাশ করা হলো। এবারের তালিকায় নাম না-থাকাদের এখনই তাড়িয়ে দেওয়া হবে না বলে কর্মকর্তারা বারংবার আশ্বস্ত করলেও; এর মাধ্যমে রাজ্যের সংখ্যালঘু বাঙালি বিশেষত মুসলমান জনগণকে ‘উইচ হান্টিং’ শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের। যদিও সংশোধিত এই তালিকা থেকে বাদ পড়া আবেদনকারীরা তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন বলে অনেক আগেই জানিয়েছেন রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়া শৈলেশ। তিনি বলেছিলেন, ‘এনআরসির প্রতিবেদনের ফলাফলকে আপত্তি জানানোর জন্য বাসিন্দাদের পর্যাপ্ত সময় এবং যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হবে। মূলত এর পরই সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ এ দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তালিকায় নাম না থাকা মানেই তারা বিদেশি নন। যে সমস্ত অধিবাসীদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না তাদের বিদেশ ট্রাইব্যুনালে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ পাবেন। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ৬০ দিন থেকে করা হয়েছে ১২০ দিন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই এক হাজারটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। এখানে নাম নথিভুক্ত না হলে সেই ব্যক্তি দ্বারস্থ হতে পারেন হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই তালিকাভুক্ত না হওয়া ব্যক্তিকে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হবে না। একই সঙ্গে আরও জানানো হয়েছে, জেলাস্তর থেকে আইনি সাহায্য পাবেন এই সমস্ত ব্যক্তিরা। আসামের রাজ্য সরকার এনআরসি’র প্রথম খসড়া তালিকা প্রকাশ করে গত বছরের জানুয়ারিতে। ওই খসড়া তালিকা থেকে প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাসিন্দা বাদ পড়ে। এরপর দুই দফায় গত বছরের জুলাই এবং এ বছরের জুনে খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ে ৪১ লাখ মানুষ। কলকাতাভিত্তিক গণমাধ্যম ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল ১০টায় আসাম এনআরসির ওয়েবসাইটে তালিকাটি প্রকাশিত হয়। যাদের ইন্টারনেট কানেকশন নেই, তারা এনআরসি সেবা কেন্দ্রে গিয়ে তালিকাটি দেখতে পারবেন। অপর দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, গোটা রাজ্যে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল বসানো হবে। যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ১০০টি চালু করা হয়েছে। এবারের তালিকায় নাম উঠেনি এমন কেউ ট্রাইব্যুনালে আপিলের পরও হেরে গেলে তিনি হাইকোর্টে যেতে পারবেন। তবে বিষয়টি সেখানেও প্রত্যাখ্যাত হলে তার সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার সুযোগও থাকবে। সূত্রের বরাতে ফরাসি বার্তা সংস্থা ‘এএফপি’ বলছে, আসামের নাগরিকদের এই তালিকা প্রকাশের আগেই গোটা রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত ১৭ হাজার সদস্য মোতায়েন করেছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার স্বার্থে কয়েকটি অঞ্চলে জনগণের একসঙ্গে অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া কেউ যাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াতে ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না দিতে পারে এ জন্য একটি সাইবার সেলও খোলা হয়েছে। আরও পড়ুন :- আসামে নাগরিক তালিকা প্রকাশের আগেই ১৪৪ ধারা জারি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৫১ সালে আসামে প্রথম নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল। মূলত তারপর থেকেই সংশোধন হতে হতে এবার শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হলো। যদিও সর্বশেষ খসড়া তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। সেই তালিকায় মোট তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন বাদ পড়েছিলেন। Comments SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: