যশোরে আইজিপির প্রটোকল অফিসার পরিচয়দারকারী ভুয়া এএসপি আটক নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০১৯ বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি: যাকে দেখে অধিনস্তরা স্যার বলে সম্বোধন করতেন, অ্যাপায়ন করিয়েছেন, অনেক উপঢৌকনও দিয়েছেন সেই ব্যক্তি পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বহু পুলিশ অফিসারের চক্ষুচড়ক। হবভম্ব হয়েছেন অনেকে। জিহ্বায় কামড় বসিয়ে বলেছেন ‘কী করেছি, পুলিশ হয়ে এতো কাছে থেকেও একজন প্রতারককে চিনতে পারনি।’ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)’র প্রটোকল অফিসার এএসপি পরিচয়দানকারী প্রতারক রাকেশ ঘোষ (২৮) আটক হওয়ার পর অনেক পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে শহরের কালেক্টরেটের মধ্যে থেকে তাকে আটক করা হয়। এএসপি পরিচয়দানকারী ওই যুবক যশোরের চৌগাছা উপজেলার রহিলাপোতা গ্রামের সন্তোষ ঘোষর ছেলে। যশোরের এএসপি সার্কেল (মণিরামপুর) রাকিব হাসান জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাকেশ যশোরে এসে এএসপি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অফিসারের কাছে তদবির তাগেদা করে আসছিল। কোতয়ালি থানার এসআই সাহিদুল আলম একটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে রাকেশ ঘোষ যে ভুয়া এএস পি বা আইজিপি মহদয়ের প্রটোকল অফিসার না তা জানতে পারেন। এরপর এসপি সাহেবের সাথে আলোচনা করে তাকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে রাকেশ স্বীকার করেছে তিনি পুলিশ অফিসার না। তার পোশাক, আইডি কার্ড, র্যাংকপিস সবই ভুয়া। খুলনা থেকে তিনি পুলিশের পোশাক, আইডি কার্ডসহ বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করেছে। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, খড়কী এলাকায় বসবাসকারী কামরুল নামে এক তরকারি বিক্রেতার স্ত্রীর সাথে রাকেশ প্রেমের সর্ম্পক গড়ে তোলে। ওই তরকারী বিক্রেতা কোতয়ালি থানার এসআই সাহিদুল আলমের কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ দেন। রাকেশের মোবাইল নম্বরটি সংগ্রহ করে দেন এসআই সাহিদুল আলমের কাছে। এসআই সাহিদুল আলম বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই নম্বরে ফোন করলে রাকেশ নিজেকে আইজিপি’র প্রটোকল অফিসার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে পরিচয় দেন। সে সময় এসআই সাহিদুল আলম স্যার সম্বোধন করে কথা বলেন। রাকেশ উল্টো ধমক দিয়ে বলেন, ‘কার কাছে ফোন করে নাম্বর কনফর্ম করছো। তোমার চাকরি খেয়ে ফেলবো।’ বিষয়টি এসআই সহিদুল আলম কোতায়ালি থানার ওসি (তদন্ত) সমীর কুমার সরকারকে জানান। এরপর তার খোঁজে নামেন এসআই আমিরুজ্জামান এবং এএসআই শফিকুজ্জামান। তারা কালেক্টরেটের মধ্যে রাকেশকে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সে সময় রাকেশ অগ্নিমূর্তি ধারন করে দুই অফিসারের সাথে ধমকের সুরে কথা বলেন। ওই সময় পুলিশ অফিসারদ্বয় পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে জানতে পারেন আইজিপির প্রটোকল অফিসার এএসপি সালাহউদ্দিন আহমেদ। রাকেশ নামে কেউ কখনো ছিলেন না। এরপর আরো কনফর্ম হওয়ার জন্য তাকে নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে পুলিশ বুঝতে পারে রাকেশ অসল পুলিশ না ভুয়া পুলিশ। এসপি মইনুল হকের সাথে কথা বলে তাকে আটক করা হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, রাকেশ যশোর এমএম কলেজে লেখাপাড়া করতো। বর্তমানে সে শহরের ঘোপ পিলুখান সড়কের শেফালী বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার ঘর তল্লাশি করে পুলিশের পরিচয়পত্র ও র্যাংকপিস জব্দ করা হয়েছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে রাকেশ এএসপি পরিচয় দিয়ে যশোরের বিভিন্ন থানার ওসি কাছে ফোন করে মামলার তদবির করতেন। এছাড়া অনেক পুলিশ অফিসারের সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। অনেক পুলিশ অফিসার তাকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। অনেক উপহারও পেয়েছেন রাকেশ। তিনি সাতক্ষীরা জেলায় চাকরি করেছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তালা-কলারোয়া আসনে তার দায়িত্ব ছিল। পরিচয় দিতেন ৩৭ তম বিসিএস ক্যাডার তিনি। বছর দেড়েক আগে রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার সময় কুষ্টিয়া লালন সেতুর কাছে পৌছানোর সময় জানতে পারেন ৩৭তম বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ বাদ। ৩৮তম ক্যাডার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পরে তিনি শারদায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এই রকম গল্প দিতেন পুলিশের সাথে। কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ আশেপাশের অনেক জেলা কর্মরত পুলিশ অফিসাররা বুধবার ফোন করে এ প্রতিবেককে জানিয়েছেন, তারা জানেন রাকেশ এএসপি। নড়াইলে কর্মরত। ফেসবুকে তার পুলিশের পোশাকপরা ছবি রয়েছে। তার বেতন কাঠামো, পেনশন, খুলনা রেঞ্জে ডিআইজিকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া প্রভৃতির ছবি রয়েছে। অনেক পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে তিনি উপহার পেয়েছেন। যশোরে এলে মাঝেমধ্যে রাকেশ দেখা করতেন অফিসারদের সাথে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ আছে অনেকের সাথে। বৃহস্পতিবার যখন জানতে পারেন রাকেশ আসল পুলিশ না নকল। তখন সকলে হতভম্ব হয়ে যান। এটা কী করে সম্ভব তা জানতে চান। যশোর কোতয়ালি থানা থেকে সদ্য স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়া ওসি অপূর্ব হাসানের কাছেও একটি মামলার তদবির করেছিলেন রাকেশ। সে সময়ও তিনি এএসপি পরিচয় দিয়েছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কোতয়ালি থানার এসআই কামাল হোসেন জানিয়েছেন, গত বুধবার তার এক পরিচিত লোক রাকেশকে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন। এসআই কামাল তাকে স্যার বলে সম্বোধন করেন এবং চা-সিগারেটসহ অন্তত একশ’ টাকা নাস্তা করান। বৃহস্পতিবার জানতে পারেন রাকেশ আসলে ভুয়া। আসল পুলিশ অফিসার না। তিনি বলেন, ‘আমাকেও ঘোল খাইয়ে দিলো।’ রাকেশ জানিয়েছেন, খুলনায় তার এক বন্ধুর ভাই এএসআই। তার কাছ থেকে পোশাক পেয়েছেন। এরপর আইডি কার্ড, র্যাংকপিস বাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন। Comments SHARES অপরাধ বিষয়: