শিক্ষকের প্রেম প্রতারণা, সুইসাইড নোট লিখে ছাত্রীর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ১১:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০১৯

বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি: “আমি অনেক ভেবে দেখলাম এই পৃথিবীতে বেচে থাকার কোন অধিকার আমার নেই। আমি রায়হানকে খুব ভালোবাসতাম। ঈদের দিন থেকে তিলে তিলে মরছি। আর সহ্য করতে পারছিনা। আমাকে ভালোবেসে রায়হান এখন অস্বীকার করছে। আল্লাহ রায়হানের বিচার করবে। মানুষের সতিত্ব হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায়না। আমি ওকে ছাড়া বাচবো না। তাই সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর একমাত্র কারণ হলো রায়হান।”

গলায় ফাঁস দেয়ার আগে “সুইসাইড নোটে” এসব কথা লিখেছে স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া তানবিন নিলুফা (১৫)।

এই ঘটনার পর থেকে প্রেমিক রায়হান ও তার পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। নিলুফা যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামে নানা মোজাহার আলীর বাড়িতে মায়ের সাথে বসবাস করতো।

আত্মহননকারীর মা নুরজাহান ওরফে ববি জানিয়েছেন, ১৪ বছর আগে স্বামী রংপুরের নুর আলম সিদ্দিকীকে ছেড়ে তিনি পিতার বাড়িতে চলে আসেন। দ্বিতীয় বিয়ে করলেও সন্তানকে নিয়ে পিতার বাড়িতেই থাকতেন। মেয়েকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। নিলুফা বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (ব্যবসায় শিক্ষা) দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।

বাড়িতে এসে তাকে প্রাইভেট পড়াতো প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেনের ছেলে রায়হান। প্রাইভেট পড়ানোর সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রায়হান যশোর বিসিএসসি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে লেখা পড়া করে। ববি জানান, ঈদের আগের রাতে নিলুফা ও রায়হানের মধ্যে মোবাইলে কথপকথন হচ্ছিলো। এসময় তিনি বিষয়টি টের পান।

তিনি মেয়েকে শাসনও করেন। কিন্তু তার মেয়ে বরাবরই তাকে জানায় সে রায়হানকে প্রচন্ড ভালোবাসে। তাকে ছাড়া সে বাচবে না। সম্মানের ভয়ে তিনি বিষয়টি চেপে যান। ঈদের দিন দুপুরে মেয়ের প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে রায়হানকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়। তার সামনেই নিলুফা এদিন রাতে রায়হানকে ফোন দিয়ে বলে তাদের সম্পর্কের কথা মা জেনে গেছে। পরের দিন সম্পর্ক অস্বীকার করে রায়হান এলাকায় প্রচার করে নিলুফা তাকে ডিস্টার্ব করছে।

এরপর মানসিকভাবে সে ভেঙ্গে পড়ে। শনিবার রাতে নিলুফা ফোন করে রায়হানের কাছে জানতে চাই, তোমাকে ভালোবাসে আমি কি অন্যায় করেছি? তোমার ২ মাসের সন্তান আমার গর্ভে। এখন তুমি আমাদের সম্পর্ক অস্বীকার করছো কেনো? রায়হান আমি তোমাকে মনে প্রাণে ভালোবাসি। তুমি আমাকে বৌ বলে ডাকতে। মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠাতে। আমি তোমাকে স্বামী হিসেবেই মেনে নিয়েছি। অন্য কোন পুরুষকে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা।

স্কুল ছাত্রীর মা ববি আরো জানান, সম্পর্ক অস্বীকার করে সোমবার রাতে প্রাইভেট শিক্ষকের পরিবার এলাকার গন্যমান্যদের নিয়ে শালিসে বসে। শালিসে রায়হান উল্টো নিলুফাকে দোষারোপ করে। বলে প্রাইভেট পড়াতে গেলে নিলুফা তাকে ডিস্টার্ব করে। এজন্য সে আর তাকে পড়বে না। শালিসে উল্টো তার মেয়েকে দোষারোপ করা হয়। এসব কথা শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে শালিসেই নিলুফা প্রকাশ করে রায়হানের সন্তান তার গর্ভে। স্বামী হিসেবে তাকে না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন পথ নেই।

ববি জানান, প্রথমে তিনি মেয়েকে রায়হানের সাথে বিয়ে দিতে রাজি না থাকলেও গর্ভে সন্তানের কথা শুনে পরে রাজি হন। কিন্তু রায়হান নিলুফাকে বরাবরই অস্বীকার করেছে।

তিনি জানান, ভালোবেসে রায়হানকে না পেয়ে তার মেয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে নিজ ঘরে আড়ার সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার লিখে যাওয়া “সুইসাইড নোটটি” পুলিশ জব্দ করেছে।

যশোর উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ফারুক হোসেন জানান, খবর পেয়ে তিনি স্কুল ছাত্রী নিলুফার মৃতদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, প্রাইভেট শিক্ষক রায়হান প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই স্কুল ছাত্রীকে ভোগ করে বিয়ে করতে অস্বীকার করার ক্ষোভে সে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে রায়হান ও তার পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছে।

স্কুল ছাত্রীর মা ববি জানান, তিনি রায়হানের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করবেন। যেন তার সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। যাতে করে প্রেমিক নামের প্রতারকদের উচিৎ শিক্ষা হয়। তিনি চাননা প্রেমের ফাঁদে পড়ে নিলুফার মতো আর কোন মেয়ের অকালে যেনো প্রাণ হারাতে না হয়।

এমএম/

Comments