প্রচারে এগিয়ে নৌকার আফিল; দলীয় কোন্দলে মাঠে নেই ধানের শীষের তৃপ্তি

প্রকাশিত: ২:২৮ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮

বিল্লাল হোসেন, যশোর: যশোর ১ আসনে সর্বত্র চলছে নির্বাচনী আমেজ। উৎসবমুখর পরিবেশে আওয়ামীলীগসহ অন্য প্রার্থীরা প্রতিদিন প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে ধানের শীষের প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে দলীয় নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে পারছে না।

সংস্কারপন্থী নেতা হওয়ায় বিএনপি থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। বিগত ১২ বছর তিনি শার্শা বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন। বিপদে তৃপ্তিকে কেউ পাশে পায়নি। যে কারণে দল মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

তবে দলীয় কোন্দলে মাঠে নামতে না পারা নয়; মাঠে নামতে না পেরে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের উপর দায় চাপাচ্ছেন তৃপ্তি। তিনি বলছেন, পুলিশের চরম বাঁধার কারণে প্রাচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না তিনি।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন থেকে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বড় জয় পেয়েছিলো। শুধুমাত্র ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের জয় ছিলো।

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার আভাস মিলছে। উত্তাপও ছড়াচ্ছে ভোটের মাঠে। যশোর-১ (শর্শা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪ বার বিজয়ী হয়েছেন। আর দুইবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারি বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আওয়ামী লীগের তবিবর রহমান সরদার, ২০০১ সালে বিএনপির আলী কদর, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন নির্বাচিত হন।

এই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের শেখ আফিল উদ্দিন (নৌকা) ও বিএনপির মফিকুল হাসান তৃপ্তির (ধানের শীষ) ইসলামী আন্দোলনের মো. বখতিয়ার রহমান (হাতপাখা) জাকের পার্টির সাজেদুর রহমান ডবলু (গোলাপ ফুল)। তবে নৌাকা এবং ধানের শীষেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ভোটারদের ধারণা।

ভোটকে সামনে রেখে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পপতি শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালে এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছেন। আবার তিনি দলীয় নেতা-কর্মীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন নিবীড়ভাবে। এতে ভোটারদের সাথে শেখ আফিল উদ্দিনের গড়ে উঠেছে গভীর সম্পর্ক।

অন্যদিকে যশোর-১ (শার্শা) আসনে নির্বাচনী প্রচারণার কোনো পরিবেশ নেই বলে অভিযোগ করেছেন ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি। সম্প্রতি যশোর প্রেসক্লাব সাংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের কর্মী ও পুলিশি হয়রানির কারণে পোস্টারিং, মাইকিং ও গণসংযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাকে ভোটের মাঠে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। পুলিশ মিথ্যা মামলা করে কর্মীদের আটক করছে। এতে আমি নিরাপত্তহীনতায় আছি।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মখর্তা পুলক কুমার জানান, মফিকুল হাসান তৃপ্তি আমাদের কাছে যখনই নিরাপত্তা চেয়েছেন তখনই তাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার মধ্যে তিনি গংসংযোগ করেছেন বেনাপোলে ও নাভারণে।

শার্শা থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, বিএনপি প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। এ পর্যন্ত পুলিশ যাদেরকে আটক করেছে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার মামলা রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা বিএনপির নেতা জানান, বিগত ১০ বছর আমরা বিপদে ছিলাম। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। ভেবেছিলাম যারা দলকে টিকিয়ে রেখেছেন সেইসব ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবে। অথচ বহিস্কৃত নেতা তৃপ্তিকে দলে ফিরিয়ে এনে তাকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। একারণে নেতা-কর্মীরা তার কাছ থেকে দূরে রয়েছেন। কেউ বাধ্য হয়ে তৃপ্তির পাশে থাকলেও মন থেকে মেনে নিতে পারছে না।

/এসএস

Comments