ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দেয়ায় ইসরাইলী নারী কবিকে শাস্তি দিয়েছে দেশটির আদালত

প্রকাশিত: ১১:০৭ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০১৮

মারুফ মুনির: ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কবিতা লেখায় ইসরাইলি এক আরব কবিকে সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ এনে শাস্তি দিয়েছে ইসরাইলের আদালত।

অভিযোগে বলা হয়, দারিন তাতোর নামের ওই কবি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন দিয়ে সহিংসতায় উসকানি দিয়েছেন।

২০১৫ সালে দারিন তাতোর সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনটি পোস্ট দিয়েছিলেন। একটি পোস্টে নিজের লেখা কবিতা ‘প্রতিরোধ কর’ নিজের কন্ঠে আবৃত্তি করে তার সঙ্গে একটি ভিডিও সংযুক্ত করে আপলোড করেন।

ভিডিওটি ছিলো ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের একটি দৃশ্য। ভিডিওতে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে ফিলিস্তিনিদের পাথর ছুঁড়তে দেখা যায়।

কবিতাটির কয়েকটি পংক্তি ছিলো এরকম, প্রতিরোধ, হে জনতা, প্রতিরোধ করো ওদের/প্রতিরোধ করো দখলদারিদের দস্যুতা/ এবং অনুসরণ কর শহীদদের কাফেলা।

দ্বিতীয় পোস্টে দারিন তাতোর, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি ‘ইন্তিফাদা’ বা অভ্যুত্থানের প্রতি সমর্থন জানান। ইসরায়েলি সরকারি কৌশুলিরা এটাকে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর ‘ইসলামিক জিহাদের’ প্রতি সমর্থন দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে। কারণ ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনি আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তাঁর তৃতীয় পোস্টটিতে ছিল ইসরায়েলি পুলিশের গুলিতে আহত এক ফিলিস্তিনি মহিলা, যার হাতে ধরা একটি ছুরি। এটির ক্যাপশনে দারিন লিখেছিলেন, ‘আমিই পরবর্তী শহীদ’। আর এসব পোস্টের কারণেই তাকে শাস্তি দেয়া হয়।
এসব অভিযোগে প্রথমে ২০১৫ সালে ৩৬ বছর বয়সী দারিন তাতোরকে গ্রেফতার করা হয়। সেসময় তিনি কয়েক মাস জেলে ছিলেন। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে তাকে গৃহবন্দী করা হয়।

প্রথমে তাকে তেল আবিবের একটি ফ্ল্যাটে আটকে রাখা হয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তখন তাকে ‘জননিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে বর্ণনা করেছিলো। গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় তাকে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়া হয়নি।
ইসরায়েলি আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এই কবিতাটির বিষয়, এটি যে পরিবেশ-পরিস্থিতিতে প্রকাশ করা হয়েছে তাতে সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদী কাজের সমূহ আশংকা তৈরি হয়েছে।

আরব বংশদ্ভুত ইসরাইলি কবি দারিন তাতোর

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কবি দারিন তাতোর বলেছেন, তার কবিতাকে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি কখনোই সহিংসতায় উস্কানি দেননি।

তাতোর বলেছেন, পুরো কবিতাটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এখানে সহিংসতার কোন ডাক নেই। এখানে সংগ্রামের কথা আছে, যাকে কীনা সহিংসতা বলে ভুল বোঝানো হচ্ছে।

দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কবি দারিন তাতোর, ইসরায়েলের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, আমার বিচার ইসরায়েলের মুখোশ খুলে দিয়েছে। সারা বিশ্ব এখন আমার কাহিনী জানবে। তারা জানবে ইসরায়েলের গণতন্ত্র আসলে কী। এটি কেবল ইহুদীদের গণতন্ত্র। এখানে আরবরাই শুধু জেলখানায় যায়।

দারিন বলেন, আদালত বলেছে আমি সন্ত্রাসবাদের দোষে দোষী। যদি এটা সন্ত্রাসবাদ হয়, আমি গোটা দুনিয়াকে আমার ‘সন্ত্রাসবাদী ভালোবাসা’ জানাই।

এদিকে দারিন তাতোরের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বিশ্বের অনেক লেখক। লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন এই রায়ের নিন্দা করেছে। তারা বলেছে, কবি দারিন তাতোরকে তার কবিতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কারণেই টার্গেট করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে পেন বলেছে, দারিন তাতোর সেই কাজটাই করেছেন, যেটি লেখকরা প্রতিদিন করেন- আমরা প্রতিদিন আমাদের শব্দ দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানাই।

/এমএম

Comments