যে কারণে মুসলিম বিশ্বের জনপ্রিয় নেতা এরদোয়ান নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৩, ২০১৯ ডেস্ক: ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক কারণে বিশ্ব রাজনীতিতে তুরস্কের একটি ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। আর বিশ্ব রাজনীতিতে এই প্রভাব ধরে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো পালন করছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রাজনৈতিকি প্রভাবের পাশাপাশি তুমুল জনপ্রিয়তাও রয়েছে এই বিশ্বনেতার। সম্প্রতি বিবিসির আরবি বিভাগ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের থেকেও অনেক বেশি। ‘বিবিসি নিউজ’ বিবিসি আরবি বিভাগ পরিচালিত ওই জরিপটি প্রকাশিত হয় এই বছরের ২৫ জুন। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, ফিলিস্তিনসহ ১০টি দেশের প্রায় ২৫ হাজারের বেশি মানুষের ওপর এই জরিপটি করা হয়। এই জরিপটি এখন পর্যন্ত পরিচালিত জরিপগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। এই জরিপে অংশ নেওয়া মানুষদের বিভিন্ন বিষয়ে সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। ওই ১০ দেশে চালানো জরিপের ফলাফলে দেখা যায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে প্রথম অবস্থানে রয়েছেন এরদোয়ান। এমনকি এরদোয়ানের ধারেকাছেও নেই ওই দুই বিশ্বনেতা। এরদোয়ান মানুষের কাছে কেন এত প্রিয় তাও উঠে এসেছে এই জরিপে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন এত জনপ্রিয় এরদোয়ান। এরদোয়ানের জনপ্রিয়তার কারণ- সংগ্রামী মনোভাব: একটি ধার্মিক পরিবারে জন্ম নিয়েও তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ শাসক গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন এরদোয়ান। তার এই সংগ্রামী গল্প পৃথিবীর বহু মানুষকে আন্দোলিত করেছে। মুসলিম বিশ্বে ও তুরস্কে এরদোয়ানের আগমনের ফলেই ইসরায়েলকে নিয়ে সমালোচনা করার সাহস এসেছে। এরদোয়ানের আগে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো নেতাই ইসারায়েলকে নিয়ে সমালোচনা করার সাহস দেখায়নি। পুনরায় মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন: প্রেসিডেন্ট এরদোগানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ক্ষমতায় আসে ২০০২ সালে। ক্ষমতায় আসার পর তুরস্কের সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক পরিচয় আবারও ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মুসলিম বিশ্বের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্ক পুনরায় জাগিয়ে তোলেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে মুসলিম দেশগুলোর সাথে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। বর্তমান তুরস্কে দেশটির সেনাবাহিনী পুরোপুরি বেসামরিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে। প্রকাশ্যে ইসরায়েল ও আমেরিকার সমালোচনা: প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রকাশ্যে আমেরিকার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেআইনি সহযোগিতার সমালোচনা করেছেন। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে যে ‘শতবর্ষী শান্তি চুক্তি’র পরিকল্পনা করেছেন সে বিষয়েও সংবাদ সম্মেলন করেছেন এরদোয়ান। ওই সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান বলেছেন, আরব দেশের জন্য প্রস্তাবিত মার্কিন শতবর্ষী শান্তি চুক্তি মানবে না তুরস্ক। এছাড়াও এরদোয়ান সরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রকাশ্যে ‘একটি সন্ত্রাসী দেশের নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের অবরোধের সমালোচনা করে গাজাকে একটি ‘উন্মুক্ত কারাগার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুদানকে সাহায্য: সুদানের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের শাসনামলে দেশটি যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তখন দেশটিতে তুরস্ক বিনিয়োগ করেছিল। এজন্য সুদানের মানুষের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এরদোয়ান। মিশরের নির্বাচন: আরব বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ মিশরে রয়েছে এরদোয়ানের তুমুল জনপ্রিয়তা। কারণ স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের পতনের পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা মুসলিম ব্রাদারহুডকে স্পষ্টত সমর্থন করেছিলেন এরদোয়ান। এছাড়াও মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মুরসির মৃত্যুতেও গভীর শোক প্রকাশ করেছিলেন এরদোয়ান। মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তাধারার সাথে মিল রয়েছে এরদোয়ানের। এছাড়াও মিসর, লিবিয়া ছাড়াও ইরাকের সুন্নি মুসলিমদের পক্ষ নিয়েছেন এরদোগান। মুসলিম বিশ্বের মডেল দেশ: ২০১১ সালে যখন আরব বসন্তের সূচনা হয় তখন সেসব অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে উঁচু আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম তুরস্ককে একটি ‘মডেল দেশ’ হিসেবে উপস্থাপন করেছিল। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্ক হচ্ছে একটি ‘শক্তিশালী গণতন্ত্রের’ দেশ যেখানে প্রকৃতপক্ষে একজন নির্বাচিত নেতা আছে। – অধিকার। Comments SHARES আন্তর্জাতিক বিষয়: এরদোয়ান