দশারতের পানের খিলি পেতে লাইন ধরেন পার্শ্ববর্তী জেলা সহ ঢাকা থেকে আগত লোকজনও

প্রকাশিত: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৫, ২০১৯

সুমন মালাকার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: জীবন যুদ্ধে জীবিকার তাগিদে মানুষ হরেকরকম পেশাকে বেছে নেয়। আর যদি মেধা, শ্রম ও ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে যে কোন কাজেই বা পেশাতে সফলতা অর্জন সম্ভব।

এমনই এক বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার ব্রীজ ঘাট এলাকার মৃত প্রফুল্ল হালদারের ছেলে দশারত হালদার। ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে পরিবারের হাল ধরেন তিনি। সে কারনেই ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখা-পড়া করে আর বেশিদুর এগোতে পারেননি। এরপর শুরু করেন কর্ম জীবন, ধরেন সংসারের হাল।

প্রথমে ভায়ের পানের দোকানে কাজ করলেও পরবর্তীতে শুরু করেন নিজের ব্যবসা। সেই থেকে আজ অবধি ২৫ বছর যাবত বিক্রি করছেন পানের খিলি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দশারতের পানের খিলির সুনাম। বর্তমানে তার পানের স্বাদ নিতে ছুটে আসেন কোটচাঁদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পান পিপাসু ছাড়াও পার্শ্ববর্তী মহেশপুর ও কালিগঞ্জ উপজেলার মানুষও।

এমনকি রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের জেলা থেকে এই এলাকার কোনো মানুষ ঘুরতে আসলে, ছুটে আসেন দশারতের পানের দোকানে। নিয়ে যান ৫-১০টি পানের খিলি। বর্তমানে এই পানের খিলি বিক্রি করে হয়েছেন স্বাবলম্বী, তার সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা।

কোটচাঁদপুর শহরের ব্রীজ ঘাট মোড় এলাকায় রাস্তার পাশেই ছোট একটি ঝুপড়ি দিয়ে ৮ থেকে ১০ পদের জর্দ্দা, সেই সাথে ২০ পদের মসলার পসড়া সাজিয়ে দশারত হালদার বিক্রি করছেন পানের খিলি। যেন কথা বলার ফুসরত নেই দশারতের। একের পর এক পান পিপাসুরা আসছেন তার পান খেতে।

বিশেষ সময়ে; যেমন ঈদ ও পূজার সময়- লাইন দিয়ে তার পান কিনতে হয় পান পিপাসুদের। হাতে পানের খিলি বানাতে বানাতে দশারত হালদার এই প্রতিবেদককে জানান, পেপার-পত্রিকায় আমাকে দিয়ে কী হবে বলুন দাদা? সবই উপর সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।

এক পর্যায় দশারত বলেন, প্রতিদিন তার ১৭০ থেকে ২০০ পিচ পানের খিলি বিক্রি হয়। প্রতিটি খিলি বানাতে ব্যবহার হয় দেড় থেকে দুইটা সাদা পান। সেই সাথে চুন, সুপারি, জর্দ্দা এবং মিষ্ঠি পান খেলে বিভিন্ন পদের মসলা দিয়ে তৈরী করা হয় পানের খিলি।

সে হিসাবে দশারতের প্রতিদিন পান বিক্রি হয় ৪/৫ পোন। পানের বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় বর্তমানে প্রতিটি খিলির মূল্য ৭/৮ টাকা। তিনি এই পানের খিলি বিক্রি করে বসবাসের জন্য একটি দুই রুমের ছাদের বাড়ী তৈরী ও সন্তানের লেখা-পড়া করাচ্ছেন।

পান ব্যবসার পাশা-পাশি অন্য কোন আয়ের উৎস না থাকলেও দশারতের অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না। এ ব্যবসা থেকে তিনি প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন।

অসম্ভবকে সম্ভব করে দারিদ্র কে হার মানিয়ে বর্তমানে নিজেই হয়েছেন স্বাবলম্বী অতি সাধারণ এই মানুষটি। দশারতের দোকানে পান খেতে আসা পান পিপাসুরা জানান, এখানকার পান না খেলে পান খাওয়ার অপূর্ণতা থেকেই যায়।

/আরএ

Comments