চীন-রাশিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া : উত্তেজনা বাড়ছে তাইওয়ান প্রণালিতে

প্রকাশিত: ৬:৩৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২৩

প্রশান্ত মহসাগরে যৌথ সামরিক মহড়া অংশ নিয়েছ চীন ও রাশিয়া।  মহড়ার অংশ হিসেবে ৬ হাজার ৪০০ নটিকাল মাইল দূরত্ব অতিক্রম করেছে দুই দেশের ৯টি যুদ্ধজাহাজ। শুক্রবার (১৮ আগস্ট) মধ্যরাতে এ খবর দিয়েছে সিএনএন। এমন এক সময় এই মহড়া অনুষ্ঠিত হলো যখন উভয় দেশ সরাসরি এক বা একাধিক যুদ্ধ করছে অথবা যুদ্ধ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মহড়ায় উদ্ধার কার্যক্রম ও উড়োজাহাজ হামলা প্রতিহত করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উভয় দেশের যুদ্ধজাহাজ এতে অংশ নিয়েছে।

রুশ রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম তাসের ভিডিওতে দেখা গেছে, ডায়মন্ড ফর্মেশনে ৯টি বড় জাহাজ পানির ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জাহাজের ডেকে সতর্ক অবস্থায় ক্রু সদস্যদের দেখা গেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মহড়ায় ‘জাহাজের ফুরিয়ে যাওয়া জ্বালানি পরিপূরণ ও তাৎক্ষণিক-ভাবে মালামাল স্থানান্তরের’ মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মহড়ায় রাশিয়া ও চীনের নাবিকরা ডুবোজাহাজ ও উড়োজাহাজ ধ্বংস করা, সমুদ্রে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ও রণতরীর ডেক থেকে হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরণের মতো বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ পেয়েছে বলে উল্লেখ করে রুশ মন্ত্রণালয়।

সাম্প্রতিক সময়ে মস্কো ও বেইজিং এর সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে, বিশেষত, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর পশ্চিমা সরকারগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনতির পর।

চীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সোমবার প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম ও উত্তর অংশে ২ দেশের এই যৌথ মহড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মুখপাত্র বলেন, এসব কার্যক্রম কোনো তৃতীয় পক্ষের দিকে লক্ষ্য রেখে করা হচ্ছে না এবং এর সঙ্গে চলমান আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কোনো যোগসূত্র নেই।

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শ্যাংফু এ সপ্তাহে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক একাদশ মস্কো সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়া গেছেন। সেখানে তিনি ২ দেশের মধ্যে আরও নিবিড় সামরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

গত কয়েক মাসে মস্কো ও বেইজিং প্রতিরক্ষা নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। দেশগুলো জাপান সমুদ্র ও পূর্ব চীন সমুদ্রে জুলাই মাসে যৌথ আকাশ মহড়ায় অংশ নেয়।

এই সামরিক পেশিশক্তির প্রদর্শনী আঞ্চলিক অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। জুলাইর উড়োজাহাজ মহড়ার সময় সতর্কতা হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের যুদ্ধ প্রস্তুতি ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। প্রাায় প্রতি সপ্তাহে তাইওয়ান প্রণালিতে মহড়া চালায় চীন। এ নিয়ে বেইজিংয়ের সাথেও মুখোমুখি হয়ে পড়ছে দেশটি। কেননা তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রশ্নে অঘোষিতভাবে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র।

আগামী জানুয়ারিতে তাইওয়ানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন স্বাধীনতাপন্থী তরুণ নেতা ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই। সম্প্রতি তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। সেখানে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, কর্তৃত্ববাদী হুমকির মুখে পিছপা হবে না তার দেশ।

এর আগে গত এপ্রিলে গুয়েতেমালা ও বেলিজ সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাই ​​ইং-ওয়েন দুই দফা যুক্তারাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি করেন। দ্বিতীয় দফায় ফেরার পথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে বৈঠক করেন।

এরপর ২০ মে এক অনুষ্ঠানে সাই ​​ইং-ওয়েন বলেন, তাইওয়ান চীনের চাপ বা উসকানির কাছে নতি স্বীকার করবে না। তবে তাইওয়ানকে ঝুঁকি দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও তাইওয়ান কোনোভাবেই কারো জন্য ঝুঁকি তৈরি করেনি।

সাই ইং বলেন, তাইওয়ানের বাসিন্দারা বিশ্বকে আত্মরক্ষার জন্য তাইওয়ানের সংকল্প বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে দায়িত্বশীল। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ এবং সম্প্রদায়গুলিকে পাশে নিয়ে যৌথভাবে ঝুঁকি কমানোর কাজ করবে তাইওয়ান।

মার্কিন স্পিকারের ম্যাকার্থির সঙ্গে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের বৈঠক

এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ান প্রণালিতে দিন দিন উত্তেজনা বেড়েই চলছে। স্বশাসনে থাকা তাইপেরা নিজেদের স্বাধীনতার প্রশ্নে অনঢ় থাকলেও চীন মনে করে তাইওয়ান চীন ভূখণ্ডের অংশ।

/এমএম/এনি/

Comments