করোনাভাইরাস

মায়ের পেটে করোনা সংক্রমণ : দুই শিশুর মস্তিষ্কে ক্ষতি

প্রকাশিত: ৭:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৩

মায়ের গর্ভফুলের মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে গর্ভে থাকা দুই শিশু। করোনার সংস্পর্শে দুই শিশুর মস্তিষ্কে ভয়াবহ ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন গবেষকেরা।

২০২০ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুই মা এই দুই শিশুর জন্ম দেন। তখন ডেলটা ধরনের সংক্রমণ ছিল। গবেষণার ফলাফল পেডিয়াট্রিকস সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গত বৃহস্পতিবার এমন তথ্য জানিয়েছেন।

পেডিয়াট্রিকস সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গর্ভফুল অতিক্রম করতে সক্ষম, এমন বেশ কয়েক ধরনের ভাইরাস রয়েছে। এগুলো ভ্রূণের মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হয়। এসব ভাইরাস হলো সাইটোমেগালোভিরাস, রুবেলা, এইচআইভি ও জিকা। সার্স-কোভ-২ ভাইরাস প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের টিস্যুতে শনাক্ত করা গেছে। কয়েকজন বিশেষজ্ঞের ধারণা, এই ভাইরাস ভ্রূণের মস্তিষ্কের টিস্যুর ক্ষতি করে।

মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মিখায়েল পায়দাস এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই প্রথম আমরা ভ্রূণের শরীরে স্থানান্তরিত হওয়ার পথসহ ভাইরাসটি দেখেছি। এ কারণে বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’

জন্মের প্রথম দিন থেকেই দুই নবজাতকের খিঁচুনি হতে দেখা গেছে। জিকাভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মতো এসব শিশুর মাইক্রোসেফালি বা ছোট মাথা ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। কারণ, তাদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হয়নি।

গবেষকেরা বলেন, দুই নবজাতকেরই বিকাশ বিলম্বিত হয়েছিল। এক শিশু ১৩ মাস বয়সে মারা গিয়েছিল। আরেক শিশুকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও পুষ্টিবিদ চিকিৎসক মারলিন বেনি বলেন, এসব নবজাতকের কারও শরীরে সার্স-কোভ-২ ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তবে তাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় কোভিড অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। চিকিৎসক মারলিন আরও বলেন, মা থেকে সন্তানের শরীরে গর্ভফুলের মাধ্যমে ওই ভাইরাস স্থানান্তরিত হয়েছে।

গবেষক দল দুই শিশুর মায়ের গর্ভফুলেই ওই ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছেন। বেনি বলেন, ময়নাতদন্তে জানা গেছে, যে শিশু মারা গেছে, তার মস্তিষ্ক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিল।

ওই দুই মায়ের মধ্যে একজনের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনাভাইরাসের হালকা উপসর্গ ছিল। আরেকজন এত অসুস্থ ছিলেন যে চিকিৎসকেরা ৩২ সপ্তাহে অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হন।

মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ শাহনাজ দুয়ারা বলেন, এ ধরনের ঘটনা বিরল। তবে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যেসব নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাঁদের শিশুদের বিকাশ নিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করার পরামর্শ দেন তিনি।

গবেষক দল আরো বলেছেন, যেসব নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের টিকা নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।

/এমএস/একুশনিউজ/

Comments